৬ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:১০

লকডাউন : শুধু বাস ছিল না রাস্তায়

রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ। চায়ের দোকানে আড্ডা। মুখে কোনো মাস্ক নেই। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে সিগারেট ফুঁকছেন। রিকশা, ব্যাটারি অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনের কোনো কমতি নেই। পুলিশের গাড়িগুলো মাঝেমধ্যে হুইসেল দিচ্ছে। ফুটপাথের দোকানগুলোও আছে। শুধু বাস নেই। এই ছিল গতকালের লকডাউন। এ দিকে দোকানপাট খুলে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে গতকালও। বাস চলাচল না করার প্রতিবাদ করেছেন পথচারীরা।

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের প্রথম দিন ছিল গতকাল সোমবার। কিন্তু রাজধানীর কোথাও লকডাউনের ছিটেফোঁটাও লক্ষ করা যায়নি। অনেকে আবার লকডাউন কেমন হচ্ছে তাই দেখতে রাস্তায় নেমেছেন।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাস্তায় মানুষের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। দোকানপাট সব খোলা রয়েছে। এমনকি ফুটপাথ এবং রাস্তার ওপরের দোকানগুলোও বসেছে। রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় দুপুরের দিকে দেখা যায় রাস্তার ওপরের দোকানগুলোও খোলা আছে। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই নয়; হাড়ি-পাতিল-প্রশাধনী সামগ্রীর দোকানগুলোও খোলা আছে। মানিক নগর মডেল স্কুল থেকে পুকুরপাড় পর্যন্ত অন্তত দু’শো দোকান রয়েছে। একাধিক দোকানদার বলেছেন, সরকার লকডাউন ঘোষণা করলেও তাদের পেটের তাগিদে তারা দোকান খুলেছেন। সে ক্ষেত্রে পুলিশকে ম্যানেজ করতে হয়েছে। এমনিতেই রাস্তার ওপর দোকান বসাতে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। এখন লকডাউনের সময়ে একটু বেশি দিতে হয়েছে।

মতিঝিল এলাকায় দেখা যায় ফুটপাথের দোকানগুলোও খোলা। আলিকো ভবনের পাশের কালিজিরা বিক্রেতা জানালেন, এই সময়ে লাইনম্যানকে একটু বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। পুলিশকে ম্যানেজ করেই ফুটপাথে বসেছেন।

শুধু পাড়া-মহল্লারই নয়, প্রধান প্রধান সড়কের আশপাশের দোকানপাটও গতকাল খোলা দেখা গেছে। শুধু বড় বড় মার্কেটগুলোর কিছু বন্ধ দেখা গেছে। ফুটপাথের চায়ের দোকানগুলোও খোলা ছিল। আর এসব দোকানের কোনোটিই ক্রেতাশূন্য ছিল না। কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের কয়েকটি দোকানে গতকাল দুপুরের দিকে দেখা যায় ৮-১০ জন মিলে চা খাচ্ছেন এবং সিগারেট ফুকছেন। যারা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন তাদের মুখেও কোনো মাস্ক নেই। বিক্রেতার মুখেও কোনো মাস্ক নেই।

গতকাল ঢাকার রাস্তায় ছিল হাজার হাজার মানুষ। হেঁটে এদের কর্মস্থলে যেতে হয়েছে অনেককে। অনেকে জরুরি কাজের জন্য বের হয়েছেন। মোশাররফ নামের এক পথচারী বলেন, তার কর্মস্থল পুরানা পল্টনে। সরকার লকডাউন দিলেও তার প্রতিষ্ঠান ঠিকই খোলা আছে। চাকরি বাঁচাতে হলে প্রতিষ্ঠানে হাজির হতে হবে। করোনার মাঝামাঝি সময় এই প্রতিষ্ঠানের ৪০ শতাংশ মানুষের চাকরি চলে গেছে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দৈন্যের কারণে বেতন কমেছে অনেকের। এবার আদৌ তার চাকরি থাকবে কিনা তাই নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি। সুজন নামের এক গার্মেন্ট কর্মী জানান, তার গার্মেন্ট খোলা আছে। তাকে অবশ্যই কাজে যোগ দিতে হবে। কমলাপুর এলাকায় তার গার্মেন্ট। কাজে না গেলে তার চাকরি থাকবে না। যে কারণে লকডাউন যেনেও তাকে বাসা থেকে বের হতে হয়েছে।

এ দিকে রাজধানীর রাস্তাঘাট ছিল রিকশা আর অটোরিকশার দখলে। দূরদূরান্ত থেকে হাঁটা মানুষগুলো ছিল এদের টার্গেট। গণপরিবহন না থাকায় এই রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর সিএনজি অটোরিকশাগুলো গতকাল মানুষের পকেট কেটেছে। যে যেভাবে পেরেছে পথচারীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক মানুষ দীর্ঘ পথ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে রিকশায় চড়েছেন কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে।

লকডাউনে শুধু বাস দেখা যায়নি। রাজধানীর কোথাও কোনো বাস লক্ষ করা যায়নি। তবে কোনো কোনো রুটে বিআরটিসি বাস চলেছে বলে শোনা গেছে। বাস না চলায় মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। অনেক এলাকায় মানুষকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। কাইউম নামের এক পথচারী গতকাল টিকাটুলি এলাকায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন গণপরিবহনের জন্য। কোনো পরিবহন না পেয়ে তিনি হতাশ হয়েই রওনা হন পোস্তগোলার উদ্দেশে। তিনি বলেন, সবই চলছে, অফিসও খোলা; কিন্তু বাস নেই। এটা স্রেফ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।

এ ছাড়া ট্রেন ও লঞ্চও গতকাল চলেনি। অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মালিক নিজাম উদ্দিন জানান, লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ আছে। দূরপাল্লার বাসও চলেনি। তবে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলেছে।

চট্টগ্রামের রাস্তায় স্বল্পআয়ের মানুষ, বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ঢিলেঢালাভাবে অতিবাহিত হয়েছে লকডাউনের প্রথম দিন। জীবিকার তাগিদে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। রাস্তায় নেমেছে কিছু বাস, টেম্পো এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি। পাশাপাশি সড়কজুড়ে শুধু রিকশা আর রিকশা। বেশির ভাগ দোকান অর্ধখোলা অবস্থায় বিকিকিনি চলছে। তবে বন্ধ রয়েছে বিপণিকেন্দ্রগুলো।

ইকবাল মিস্ত্রি পেশায় রাজমিস্ত্রি। কাজের তাগিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। সকাল থেকে কাজের অপেক্ষায়; কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না। সংসারের খাবার জোগাবেন কি করে তা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায়। সরকার নিষেধ করার পরও কেন রাস্তায় বের হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অ’বাজি অভাবে বাইর অইয়িদে (অভাবের কারণেই বের হয়েছি)। পোয়া মাইয়া চাইরজন বই রইয়ে হইন্না (ছেলেমেয়ে চারজন বসে আছে খাবারের অপেক্ষায়)। অভাবত কিজ্জম বাজি বই লইয়িদে এরি (অভাবে কি করব বসে আছি আরকি)। ছ টার তুন বই রইয়িদে, কাজ নাই, লকডাউনত কাজ নগরেরত মাইনসে (সকাল ৬টা থেকে বসে আছি কাজের অপেক্ষায়; কিন্তু কাজ নাই, লকডাউনে মানুষ কাজ করাচ্ছে না)।’

গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও নগরীর বিভিন্ন সড়কে থেমে থেমে টেম্পো এবং সিএনজি ট্যাক্সি চলাচল করতে দেখা গেছে। আবার এসব টেম্পোতে এক দিকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই, অন্য দিকে ভাড়া গুনতে হচ্ছে স্বাভাবিকের চার গুণ। ফলে কাজের তাগিদে বের হওয়া মানুষের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে নাভিশ্বাস উঠছে। তবে নগরজুড়ে রিকশার রাজত্ব থাকলেও তেমন আরোহী মিলছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক রিকশাচালক। তাদের মতে রাস্তায় বের হওয়াদের অধিকাংশই অভাবী মানুষ। এ দিকে লকডাউনের কারণে নগরীতে বেড়ে গেছে আদা, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। দাম বেড়েছে সব ধরনের সবজির। পরিবহন সঙ্কটের কথা বলে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

চসিকের মোবাইল কোর্ট : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গতকাল সকালে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। অভিযানকালে নগরীর কাজীর দেউরী, লাভ লেন, জুবলী রোড, নিউমার্কেট, রেল স্টেশন ও স্টেশন রোড এলাকায় মাস্ক না পরে বাইরে বের হওয়ায় ৯ জনকে এক হাজার ২০০ টাকা এবং মেশিনারি দোকান খোলা রাখায় দোকান মালিককে এক হাজার টাকাসহ সর্বমোট দুই হাজার ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী ও স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) জাহানারা ফেরদৌসের নেতৃত্বে এই মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

খুলনায় ঢিলেঢালা লকডাউন
খুলনা ব্যুরো জানায়, দ্বিতীয় ধাপের লকডাউনের প্রথম দিন খুলনায় ঢিলেঢালাভাবে অতিবাহিত হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর ডাকবাংলো মোড়, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল, রূপসা ট্রাফিক মোড়ে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর নিউমার্কেট, জলিল টাওয়ার, আক্তার চেম্বার, খুলনা শপিং সেন্টার, এশা চেম্বারসহ বড় বড় বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। এসব মার্কেটের সামনে অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে কর্মচারীদের। নগরীর সবচেয়ে বৃহৎ ব্যবসা কেন্দ্র বড় বাজারে সকাল থেকেই ছিল মানুষের সরগরম। এ বাজারে আসা ক্রেতাদের দু-একজনের মুখে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশেরই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। লকডাউন কার্যকর করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত সকাল থেকে কয়েকজন চালককে জরিমানা করলেও তারা চলে যাওয়ার পরপরই আগের মতোই লোকজন রাস্তায় নেমে আসতে দেখা যায়। এ দিকে নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল থেকে গতকাল কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।

বগুড়া শহরে মানুষের ভিড়
বগুড়া অফিস জানায়, প্রথম দিন বগুড়ায় পুরোপুরি লকডাউন দেখা যায়নি। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেকে শহরে এসে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করেন। গতকাল বগুড়া শহরে অনেক লোকসমাগম দেখা যায়। কাঁচাবাজার খোলা থাকায় এ ভিড় আরো বেড়ে গেছে। সারা দেশের মতো বগুড়াতেও গত বছরের এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হয়। এরপর আক্রান্ত সংখ্যা কমে যায়।
এ দিকে গতকাল সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। শহরে খুব কম সংখ্যক দোকানপাট খোলা ছিল। তবে শহরের তিনমাথা, সাতমাথা, বড়গোলা, কালিতলা, ফুলবাড়ি, মাটিডালি, জলেশ্বরীতলা, নবাববাড়ি সড়ক, চেলোপাড়া, কলোনি এলাকায় বেশ কিছু মানুষ দেখা গেছে যারা অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েছেন। শহরের রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ, র্যাব-১২ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে না বের হতে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে বগুড়া পৌরসভা ও জেলা তথ্য অফিস।

পাবনায় তেমন প্রভাব পড়েনি
পাবনা সংবাদদাতা জানান, লকডাউনের প্রথমদিনে পাবনায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে ছোট-বড় গণপরিবহনসহ সাধারণ মানুষ। জেলা শহরের বড় বড় শপিংমল বন্ধ থাকলেও ছোট ছোট দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আংশিক খোলা রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। শহরজুড়ে যানজট দেখা গেছে। হামিদ রোডে ব্যাপক লোকের চলাফেরা দেখা গেছে। ছোট গণপরিবহনসহ অল্প কিছু দূরপাল্লার বাস চলতে দেখা গেছে মহাসড়কে। শহর এবং বাজারগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। গতকাল দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ যৌথভাবে মাঠে নামে এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযান করেন তারা। মঙ্গলবার থেকে এই আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তারা। এ দিকে এই পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছে বেশ বিপাকে। অপর দিকে জীবিকাসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

কুষ্টিয়ায় ঢিলেঢালা অবস্থা
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ায় প্রথম দিনের লকডাউন ঢিলেঢালেভাবে পার হয়েছে। শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শহরতলীর অধিকাংশ এলাকায় খোলা রাখতে দেখা গেছে। জনগণকে ঘরে থাকতে বলা হলেও তারা আমলেই নেয়নি। কাজ ছাড়াও লোকজনকে বাইরে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও মহাসড়ক ও বিভিন্ন সড়কে অবৈধ নসিমন, করিমন, আলগা যান, ভটভটি, সিএনজি সচল ছিল মহাসড়ক। শহরের ভেতর অটোরিকশা চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এ দিকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীরা বিক্ষোভ করেছে।

সাতক্ষীরায় মোবাইল কোর্টে ৭০ মামলা
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সকাল থেকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে নিউমার্কেট মোড়, ইটাগাছা হাটের মোড়, কামালনগর সঙ্গীতা মোড়, পাকাপুলের মোড়, প্রাণসায়র দীঘির পাড় মোড়, নারকেলতলা মোড়, ডে-নাইট মোড়, খুলনারোড মোড়সহ বিভিন্ন মোড়ে ভিড় চোখে পড়ার মতো। চলেছে মাহিন্দ্রা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যানসহ প্রাইভেটকার। দুপুর ১২টার দিকে শহরে প্রশাসনিক তৎপরতা লক্ষ করা যায়। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন শপিংমল ও সড়কে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। জেলার ৭টি উপজেলায় মোট ১২টি মোবাইল কোর্টের অভিযানে ৭০টি মামলায় ৫৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় পুলিশ মাঠে রয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, লকডাউন ভঙ্গ করলে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মোবাইল কোর্টে কঠোর শাস্তি। ইতোমধ্যে জেলার তিনটি সীমান্তবর্তী পয়েন্টে ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, গতকাল জেলায় লকডাউনের প্রথম দিনের চিত্র ছিল প্রায় অন্যান্য দিনের মতোই। রাস্তায় জনসাধারণের চলাচল ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। মহাসড়কে চলাচল করেছে দূরপাল্লার যানবাহন। তবে শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশি তৎপরতা লক্ষ করা গেছে। বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হোটেলে খাবার পরিবেশন করায় টাঙ্গাইলের পার্ক বাজারে তিন ব্যবসায়ীকে আড়াই হাজার টাকা এবং বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে আরেক ব্যবসায়ীকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। টাঙ্গাইলের এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এছাড়া মাস্ক না থাকায় অনেককে জরিমানা করা হয়েছে।

সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকালে অন্যান্য দিনের মতোই ভিড় দেখা গেছে সাভারের রাস্তাঘাটে। বড় মার্কেট ছাড়া সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, পাড়া মহল্লার সব ধরনের দোকান, কোচিং সেন্টার চলছে আগের মতোই। চা-দোকান খোলা রেখে জটলা করে খোশগল্প করতে দেখা গেছে অনেককে। অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। কারখানা খোলা থাকায় শিল্পাঞ্চল সাভারে লকডাউনের প্রভাব তেমন একটা পড়েনি বললেই চলে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সকাল থেকেই গাদাগাদি করে বাসে উঠেছে শ্রমিকেরা। সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের আধিক্য থাকলেও গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়েছেন কর্মস্থলমুখী অসংখ্য যাত্রী। গামের্ন্ট শ্রমিকদের অনেকে পায়ে হেঁটে, অনেকে ভ্যান কিংবা অটোরিকশায় গাদাগাদি করে কয়েকগুণ ভাড়ায় কর্মস্থলে যেতে হয়। এদিকে লকডাউনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সকালে সাভারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় প্রশাসন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/573892/