৬ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:০৫

লকডাউন ভেঙ্গে অস্তিত্ব টিকাতে রাজপথে ব্যবসায়ীরা

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। নতুন এ নির্দেশনায় শপিংমল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ অবস্থায় লকডাউন প্রত্যাহার ও শপিংমল খোলা রাখার দাবিতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন বিশেষ বিবেচনায় যদি শপিংমল খোলা না হয় তাহলে অনেক ব্যবসায়ীরাই পথে বসতে বাধ্য হবে। তাদের অভিযোগ সবই চলছে তাহলে মার্কেট বন্ধ কেন। আমাদের অস্তিত্ব টিকাতে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

ক্ষুদ্ধ ব্যবসায়ীরা বলছেন গত রমযানেও আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। এ বছরও আমাদের ব্যবসা যদি বন্ধ থাকে তাহলে আমাদের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই আমরা রাজপথে নেমেছি। এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।

তারা জানান,সারা বছরে আমরা এ এক মাসই ব্যবসা করি। কিন্তু করোনার অজুহাতে সব চললেও ব্যবসা বন্ধ করে। তারা জানান আমরা সকল বিধি নিষেধ মেনেই ব্যবসা করতে চাই। কিন্তু তা নিচ্ছে না। তাহলে আমাদের সংসার পরিবার কেমনে চলবে।

লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল সোমবার সকালে নিউমার্কেটের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এর আগে গতকাল রোববার দুপুরের পর অবিলম্বে লকডাউন প্রত্যাহার দাবিতে ব্যবসায়ীরা মিছিল বের করেন। সেসময় তারা রাস্তা অবরোধ করে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।

গতকাল সোমবার সকালে নিউমার্কেট, গাউসিয়াসহ বেশ কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জড়ো হন। এ সময় পুলিশ বাধা দিলেও তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা অবিলম্বে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা কোনো লকডাউন চাই না। এটাই আমাদের এক দফা দাবি। এর আগে গত শনিবার রোজা ও ঈদ সামনে রেখে লকডাউনের এক সপ্তাহ ৪ ঘণ্টার জন্য দোকান খোলা রাখার দাবি জানায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

এদিকে লকডাউনের প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম নগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত রিয়াজউদ্দিন বাজারের সহস্রাধিক ব্যবসায়ী নিউমার্কেট মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে বক্তব্য রাখেন তামাকুমুন্ডি লেন বণিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির দুলালসহ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা সরকার ঘোষিত লকডাউনের বিরোধিতা করে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে দোকান খুলে দেয়ার দাবি জানান। এ সময় তারা ‘লকডাউন মানি না মানব না’ বলে স্লোগান দেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, সারা বছর দোকান চলে রমজানের বেচা-কেনা দিয়ে। করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর রমজানেও ব্যবসা হয়নি। এ বছর রমজান শুরুর আগে আবারও এক সপ্তাহের লকডাউন দিয়েছে সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউন আরও বাড়তে পারে বলে সরকারের উচ্চ মহল থেকে বলা হচ্ছে। আমরা লকডাউন বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে দোকান খুলে দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে নামব।

এদিকে লকডাউনের প্রতিবাদ লোহাগড়া উপজেলায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বেলা ১২টার দিকে বটতলী মোটর স্টেশনে লোহাগড়া দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীরা এই বিক্ষোভ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন লোহাগড়া বণিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তফা কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতারা।

এছাড়া লকডাউনে হাটহাজারী উপজেলায় দোকান খোলার অভিযোগে বেলা ১১টার দিকে সুপার সিটি নামের একটি মার্কেটে তালা দেয় উপজেলা প্রশাসন। প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাদের ডেকে উপজেলায় বৈঠকে বসেন।

এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, উপজেলার একটি মার্কেটে লকডাউন না মেনে ব্যবসা পরিচালনার কারণে তালা দেয়া হয়েছিল। পরে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। তবে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সুরাহা করা হয়েছে।

https://dailysangram.com/post/448745