২৪ মার্চ ২০২১, বুধবার, ১০:৫৬

আগের চিত্র ফিরছে হাসপাতালে

হঠাৎ করে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে করোনা। আট মাস পর হঠাৎ করে রেকর্ড-সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি থাকায় ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আইসিইউ বেড খালি নেই বললেই চলে। সাধারণ শয্যায় প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের কর্মতৎপরতা বেড়েছে আগের থেকে।
অনেক হাসপাতালে শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি আছেন। আবার কিছু কিছু হাসপাতালের সাধারণ শয্যা যে কোনো সময় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। নতুন করে রোগী বাড়ায় হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা চিন্তিত। সবমিলিয়ে হাসপাতালগুলোতে ফিরছে আগের চিত্র।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে ঢাকার ১০টি সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা আছে ২ হাজার ৩৮০টি। এসব শয্যায় বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ১ হাজার ৭৪৫ জন। শয্যা খালি আছে মাত্র ৬৩৬টি। ১০ দিন আগে সমান সংখ্যক শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ১ হাজার ২৪৬ জন। এই সময়ে হাসপাতালে ৫০০ জন রোগী বেড়েছে। বেসরকারি ৯টি হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৯৪০টি। এসব শয্যায় বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ৪৮৮ জন। শয্যা খালি আছে ৪৫২টি। অথচ দশদিন আগে এর চেয়ে কম সংখ্যক ৮৩২টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ২৮৫ জন। এই সময়ে বেসরকারি হাসপাতালে ২০৩ জন রোগী বেড়েছে। সরকারি-বেরকারি মিলিয়ে মাত্র ১০ দিনেই ৭০০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

১৪ই মার্চ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ১৬৯টি সাধারণ করোনা শয্যায় রোগী ভর্তি ছিল ৩৬ জন। কিন্তু গতকাল রোগী বেড়ে হয়েছে ৭৬। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৯৩টি শয্যা খালি আছে। দশ দিনের ব্যবধানে ৪০ জন রোগী বেড়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ শয্যা আছে ২৭৫টি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালে শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ১১৮ জন অতিরিক্ত রোগীসহ ৩৯৩ জন ভর্তি আছেন। অথচ ১০দিন আগে ২৭৫টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন ২২৯ জন। এই সময়ে হাসপাতালে রোগী বেড়েছে ১৬৪জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮৮৩টি শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ৫৯০ জন। শয্যা খালি আছে ২৯৩টি। দশ দিন আগে সমপরিমাণ শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন ৫১৫ জন। এই সময়ে রোগী বেড়েছে ৭৫ জন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১০টি সাধারণ শয্যায় বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ২৩৪ জন। শয্যা খালি আছে ৭৬টি। দশদিন আগে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি ছিলেন ১২৬ জন। এই সময়ে রোগী বেড়েছে ১০৮ জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৪টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ১৪০ জন। শয্যা খালি আছে ৯৪টি। দশদিন আগে রোগী ভর্তি ছিল ১৩২ জন। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ২৫০টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ১৭৯ জন। শয্যা খালি আছে ৭১টি। অথচ দশদিন আগে ১২১ জন রোগী ভর্তি ছিল। প্রায় ৬০ জন রোগী বেড়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ৬০টি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ২০ জন। শয্যা খালি আছে ৪০টি। দশ দিন আগে রোগী ভর্তি ছিল মাত্র ৫ জন। এই সময়ে ১৫ জন রোগী বেড়েছে। একইভাবে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রোগী বেড়েছে।

এদিকে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আসগর আলী হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল, এভার কেয়ার হাসপাতাল, ইম্পালস হাসপাতাল, এএমজেড হাসপাতাল ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে বিগত কয়েক মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছেন।

বাংলাদেশে করোনা পূর্বাভাস বিষয়ক গবেষক দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষক সাফিউন শিমুল মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হসপিটাল ক্যাপাসিটি কম নয়। একসময় অক্সিজেনের অভাবে অনেক লোক মারা গেছে। হাসপাতালে নিয়েও অক্সিজেন পেতো না। আইসিইউ’র অভাব ছিল। কিন্তু এখন এই সুবিধাগুলো বেড়েছে। তবে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে হাসপাতালগুলোকে সেভাবেপ্রস্তুতি নিতে হবে। সংক্রমণ আরো বাড়বে সেই চিন্তা মাথায় রেখেই চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সাজাতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক মানবজমিনকে বলেন, যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের এলার্মিং। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। কেবিন থেকে শুরু করে এইচডিইউ, আইসিইউ সর্বত্রই রোগীর চাপ। বেশ কিছুদিন ধরে সাধারণ শয্যায়ও রোগী বাড়ছে। এভাবে যদি বাড়তে থাকে তবে রোগী রাখতে আমাদের হিমশিম খেতে হবে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=267475&cat=3