৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১০:৪৫

আমদানি বাড়লেও শঙ্কা কাটছে না রফতানিতে

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাচিত অর্থনৈতিক সূচক প্রতিবেদন

বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির বড় বাজার ইউরোপ আমেরিকায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ফলে ওই সব দেশে ভোগ ব্যয় কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের রফতানি আয়ে। তবে আমদানিব্যয় আবার বাড়তে শুরু করেছে। সবমিলেই আমদানি বাড়লেও সামনে রফতানি আয় নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাচিত অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

রফতানি আয়ের শঙ্কা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন হতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রফতানি আয় কমেছিল ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে রফতানি হ্রাসের গতি কমেছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যেখানে গত অর্থবছরের ডিসেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছিল ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসের মধ্যে কেবল আগস্ট সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর এই তিন মাস রফতানি আয় সামান্য হারে বেড়েছে। অর্থাৎ আগস্টে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং নভেম্বরে শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। বাকি ৯ মাসই রফতানি আয় কমেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছিল এপ্রিলে। ওই মাসে রফতানি আয় কমে যায় ৮৩ শতাংশ এবং মে মাসে কমে ৬২ শতাংশ।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর রফতানি আদেশ রাতারাতি স্থগিত হতে থাকে। অনেক ক্রেতা আবার তা স্থগিত করে দেয়। রফতানি আয়ের এ সরাসরি প্রভাব এপ্রিল ও মে মাসের রফতানি আয়ের ওপর পড়ে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রাখা তৈরী পোশাক খাতের রফতানির চাহিদা বাড়ছে না। আর এ কারণেই বড় ধরনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এ শঙ্কা বছরের শেষ সময় পর্যন্ত থাকতে পারে বলে তারা মনে করছেন।

এ দিকে আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ কিছু চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আমদানি ব্যয় কমেছিল ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর আমদানি ব্যয় কমেছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এ দিকে গত অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি ব্যয় কমলেও গত নভেম্বর থেকে বাড়তে শুরু করেছে। গত নভেম্বরে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে ভোগ্য ও অন্যান্য পণ্য আমদানি ও এলসি খোলা বেড়েছে। শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমলেও এলসি খোলার হার আগের চেয়ে বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশই আসে চীন থেকে। চীনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে ওই দেশ থেকে আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ভারত থেকে আসে ১৪ শতাংশ। ভারত থেকে আমদানি পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসের মধ্যে তিন মাস অর্থাৎ জুন, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমদানি বেড়েছে। বাকি ৯ মাসই কমেছে। তবে সামনের দিনগুলোতে আমদানিব্যয় আরো বেড়ে যাবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত পণ্য জাহাজীকরণের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে রফতানি আয় দেশে আনার কথা। কিন্তু করোনার প্রভাবে রফতানি আয় দেশে আনার বিষয়েও কিছু শিথিল করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার শুরুর আগে যেসব পণ্য রফতানি করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেক চালানের আয় এখনো দেশে আসেনি। বকেয়া পড়ে গেছে। করোনার কারণে যেসব বকেয়া রফতানি আয় এখনো দেশে আসেনি সেগুলো আনার মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে।

এ দিকে বিদেশ থেকে রফতানির কার্যাদেশ বাড়লে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার হার বেড়ে যায়। কেননা এর আওতায় কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো দিয়ে তৈরি পণ্য রফতানি করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার হার কমে গেছে। গত অর্থবছরের জুলাই অক্টোবরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার হার কমেছে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ। একই সাথে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও এলসি খোলার হারও কমেছে।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/561052