৯ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১:২৩

বছরে আট চক্রের ৩০০ কোটি টাকার সাপের বিষ পাচার

সাপের বিষ পাচারে সক্রিয় বড় একটি চক্র। অ্যান্টিভেনম, কেমিক্যাল তৈরি, ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার, নানা ধরনের চিকিৎসা এবং যৌন উত্তেজক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে সাপের বিষ। লাভজনক এবং বহনে সুবিধার কারণে দিন দিন পাচারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। মালয়েশিয়া, ফ্রান্স এবং ইন্দোনোশিয়া থেকে বিষ পাচার করে দেশে নিয়ে আসছে। তারা ওইসব দেশ থেকে বিষ দেশে নিয়ে এসে আবার উচ্চ মুনাফার আশায় তৃতীয় দেশে পাচার করছে। পাচারে তারা আকাশ পথকে বেশি ব্যবহার করে থাকে। দেশে সাপের বিষ পাচারে সক্রিয় আছে এখন ৮টি বড় চক্র। চক্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য ঢাকায় অবস্থান না করে বিভাগীয় শহরে বসবাস করে।

শুধু বিষ পাচারের ক্ষেত্রে ঢাকায় আসে তারা। চক্রটি বিষ পাচারে বহন কাজে যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুব বেশি সন্দেহ করতে না পারে এজন্য তারা নারীদের ব্যবহার করছে। কখনো তারা স্কুলছাত্র এবং শিশুদেরও ব্যবহার করে। বছরে এ চক্রটি প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সাপের বিষ পাচার করে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। গত ২৫শে ডিসেম্বর ঢাকার দক্ষিণখানের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের গুলবার মুন্সি সরণি রোড থেকে প্রায় ৯ কেজি ওজনের ৭৫ কোটি টাকার সমমূল্যের সাপের বিষ এবং দুই নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা সাপের বিষ পাচারকারী চক্রের সদস্য বলে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এ ছাড়াও গত বছরে জুন মাসে ফেনীতে দুই পাউন্ড সাপের বিষসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেছিল র?্যাব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ মানবজমিনকে জানান, ‘জব্দকৃত সাপের বিষগুলো হচ্ছে কোবরার। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কাছে সাপের বিষের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটার একটা বড় চক্র রয়েছে। তিনি জানান, অধিক মুনাফার লোভে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাপের বিষ সংগ্রহ করে চোরাচালান হচ্ছে। যারা র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তারা আন্তর্জাতিক সাপের বিষ চোরাচালানকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য।’

র‌্যাব সদর দপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আইনে সাপের বিষের লেনদেন, ক্রয়, বিক্রয়, মজুত এবং পাচার দণ্ডনীয় অপরাধ। ঔষধ প্রশাসনও দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান ওষুধ তৈরিতে সাপের বিষ ব্যবহার করে না বলে জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিষ পাচারকারী গোষ্ঠী বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এ ছাড়াও বেদে সম্প্রদায়ের কিছু লোক অধিক টাকা লাভের আশায় সক্রিয় হয়েছে এ চক্রের সঙ্গে। তাদেরও নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাব জানায়, ঢাকার দক্ষিণখান থেকে যে বিষ জব্দ করা হয়েছে তা হচ্ছে ফ্রান্সের। পাচারকারীরা শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দেশে নিয়ে এসেছে ওই বিষ। ওই বিষগুলো দুবাইয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে যাওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়াও তারা অন্য দেশ থেকে বিষ এনে ভারত, নেপাল, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় পাচার করে। ভিয়েতনামে প্রচুর বিষের চাহিদা রয়েছে বলে পাচারকারীরা জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশে সাপের বিষ পাচারকারী চক্রের বর্তমানে ৮টি চক্র রয়েছে। তারা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফেনী, যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও খুলনায় সক্রিয় রয়েছে। তাদের নাম জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রত্যেকটি চক্রের একেকজন টিম প্রধান রয়েছে। চক্রে ৭ থেকে ৮ জন করে সদস্য সক্রিয়। মূলত যারা সদস্য হিসেবে কাজ করে তারা বহন কাজে ব্যবহৃত হয় বেশি।

এ চক্রের টিম প্রধানগুলো হচ্ছে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সাব্বির মাহমুদ, চট্টগ্রামের আনোয়ারার শহিদুল ওরফে দস্যু শহিদ, ফেনীর সোনাগাজীর আশরাফ উদ্দিন সফু, যশোরের বেনাপোলের শরিফ উদ্দিন ওরফে লেমু, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ এলাকার আরিফুল ওরফে বেইচা আরিফ, কুমিল্লার দেবিদ্বারের সুজন রায়, মেহেরপুরের গাংনীর মজিদ পালোয়ান, কুষ্টিয়ার তারাগুনিয়ার করীম ওরফে মাঝি করীম ও খুলনার ফুলতলা এলাকার কবীর হোসেন। চক্রের প্রধান এবং তাদের সদস্যদের নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=257873