৮ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ১০:৪৭

করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিল পর্যটন খাত

মুহাম্মদ নূরে আলম: করোনা মহামারির ভয়াবহতম বিপর্যয় কাটিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্প। বাংলাদেশে পর্যটন একটি উদীয়মান শিল্প। গত কয়েক বছরে পর্যটন শিল্পে উন্নতি চোখে পড়ার মতো। নভেল করোনা ভাইরাসের রাহুগ্রাসের প্রভাবে এ শিল্পে ধস নেমে এসেছে। সব রকম হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মোট পাঁচ মাসে সার্বিক পর্যটন শিল্পে ৯ হাজার ৭০৫ কোটি টাকার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজার ৫০০ জন তাদের চাকরি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। এই বিপর্যয়কর অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সরকারের বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-টোয়াবের পরিচালক মো. শাহেদুল্লাহ।

তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যেও বিপর্যয় কাটিয়ে উঠছে দেশের পর্যটন খাত। চলতি শীত মৌসুমের শুরুতেই লোকে লোকারণ্য বিভিন্ন পর্যটন বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পর্যটন শিল্প। শীত যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জন্য। শীতের আগমনে বদলাতে শুরু করেছে জনশূন্য পর্যটন স্পটগুলোর চিত্র। ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনা বেড়েছে দর্শনীয় স্থানগুলোয়। ধস কাটিয়ে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতিও। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বেড়ানোর জন্য অনেকে ছুটে যাচ্ছেন দূরদূরান্তে। এরই মধ্যে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তাছাড়া যান্ত্রিক জীবনে নানা কর্মব্যস্ততায় জীবনের ছক থেকে বেরিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় ভিড় জমাচ্ছে ভ্রমণপিপাসু মানুষ। চিরসবুজের ছোঁয়া পেতে পাহাড়ি জেলাগুলোয় পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্যটকরা। শীতের হিমেল পরশে সজীবতা এসেছে পাহাড়ের প্রকৃতিতে। পর্যটনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সাগরকন্যা কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, সিলেট, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলের হোটেল-মোটেলগুলো আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং। এ সময়ে নতুন কোনো বুকিংও নিচ্ছে না অনেক হোটেল। একই অবস্থা বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী এয়ারলাইনসের ক্ষেত্রেও। অনেক আগে বুকিং না দিলে আসন পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে পর্যটন খাত ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

২০১৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা ছিল জিডিপি খাতে ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার, যা মোট জিডিপির প্রায় ১১ শতাংশ। করোনার প্রভাবে এখন পর্যন্ত পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মতে, চাকরি হারিয়েছে প্রায় ৭ দশমিক পাঁচ কোটি পর্যটনকর্মী। শুধু পর্যটন খাতে গত বছরের তুলনায় এ বছর আয় কমবে প্রায় ২৬৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। ব্যবসা খাতে ভ্রমণ বাবদ ক্ষতির সম্মুখীন হবে ৮১০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। কভিড-১৯ নামের মরণঘাতী এক ভাইরাসের প্রকোপে আজ সারাবিশ্ব প্রকম্পিত। এর পরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে প্রায় সব রকমের অর্থনৈতিক কর্ম। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আকাশপথও চালু করছে দেশগুলো। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। অভ্যন্তরীণ রুটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোও ধীরে ধীরে খোলা হয়েছিল বছরের মাঝামাঝি সময়ে, কিন্তু বছরের শেষে শীতকাল শুরু হওয়ায় সারাবিশে^র অভ্যন্তরীণ রুটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। জীবন জীবিকা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৭০% জনবল। সংখ্যার হিসেবে সেটা ৪০ লাখেরও বেশি। তারা রোজগারহীন অবস্থায় থাকায় তাদের ওপর নির্ভরশীল কমপক্ষে দেড় কোটি মানুষ কঠিন বিপদের মধ্যে আছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রে এখনও সম্ভাবনাময় এই খাতটি উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ৫৮ থেকে ৭৮ শতাংশ কমেছে পর্যটক। পরিসংখ্যান বলছে, ৮৫ কোটি থেকে ১১০ কোটি কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। বছরের প্রথম তিন মাসে এরইমধ্যে ৩২ হাজার কোটি ডলার লোকসান গুনেছে বিশ্বের পর্যটন খাত। তথ্য বলছে, পুরো ২০২০ সালে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৯১ হাজার কোটি ডলার থেকে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। এ ক্ষতির পরিমাণ ২০০৯ সালের আর্থিক সংকটের সময়কার ক্ষতির চেয়ে তিনগুণ বেশি।

পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেলস এসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিগগিরই পর্যটন স্পটগুলো সীমিত পরিসরে খুলে দেয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক।

করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দেশের পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। এর মধ্যে ছিল পর্যটন খাতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে তা দেওয়া হয়নি। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশ্বাস দিয়েছেন, কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার সক্রিয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। বিগত কয়েক মাস যাবত পর্যটন খাতে স্থবিরতা দেখা গেলেও সুনির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা আসেনি এবং সাম্প্রতিক বাজেটে এই খাতকে টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন খাতে ৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারে এই খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হলেও সেটা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে বরাদ্দের প্রায় ৮০% ব্যয় ধরা হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন খাত বাবদ। আর বাকি ৭২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে পর্যটনের অন্যান্য খাতের জন্য। এমন অবস্থায় পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়া না হলে বীমা করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পর্যটন এলাকাগুলোয় কীভাবে নিরাপত্তা বজায় রেখে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায় এ ব্যাপারে সরকারকে নীতিমালা প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক সামশাদ নওরীন। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের যদি বীমা করা থাকতো তাহলে কিংবা তাদের জন্য যদি বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে অনেক মানুষের জীবন জীবিকা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো। পর্যটনের সাথে অর্থনীতির অনেকগুলো খাত জড়িত, একে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডও কভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের ভ্রমণ করতে উৎসাহিত করছে। কভিড-১৯ পরবর্তী ভ্রমণবিধিও তৈরি করেছে সংস্থাটি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী করোনাকালে পর্যটন ব্যবসা সচল রাখতে একটি নীতিমালা করা হয়েছে। পর্যটন খাত যাতে ঘুরে দাঁড়ায়, সেজন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এতে পর্যটক বাড়ছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ পর্যটন শিল্প চাঙ্গা হতে শুরু করায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। এতে কভিড-১৯ বিপর্যয় কাটিয়ে পর্যটন খাত লাভবান হচ্ছে। কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী কোথাও রুম খালি নেই। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে পর্যটন খাতের অবস্থা রমরমা। পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে কক্সবাজারে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে আবাসিক হোটেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেস্টুরেন্ট ও হস্তশিল্পের তৈরি শোপিজ, তাঁতের কাপড়ের দোকানসহ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও। স্থানীয় অধিবাসীদের তৈরি কোমর তাঁতের পোশাক এবং বাঁশ, কাঠের তৈরির হস্তশিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রধান ক্রেতা হচ্ছে পর্যটক। বেড়াতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকরাই এসব জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যায়। এখন প্রতিদিন বিভিন্ন পর্যটন স্পটে আগমন ঘটছে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের। সরকারি ছুটির দিনগুলোয় হয় উপচে পড়া ভিড়।এতে আর্থিক আয় বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি পর্যটন স্পটগুলোর। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পরিবহন, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পোশাক ও স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বিপণিসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য। পর্যটকবাহী গাড়িগুলোসহ পরিবহন ব্যবসাও অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পর্যটকবাহী গাড়িগুলোসহ পরিবহন ব্যবসাও অনেকটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটক ও পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলে, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি কঠোরভাবে দেখছে জেলা প্রশাসন। জনগণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটনকেন্দ্রে যায়, সেজন্য বিভিন্নভাবে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য কাজ চলছে।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মহামারীতে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে ওঠাটা রাতারাতি সম্ভব নয়। এজন্য সময় প্রয়োজন। করোনার ভয়াবহ আতঙ্ক কবে পুরোপুরি কাটবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে জীবন ও জীবিকার তাগিদে এবং দেশের সামগ্রিক ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন অর্থনীতিকে আগের স্বাভাবিক সমৃদ্ধ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটন ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। গত ছয়-সাত মাসের অচলাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যারা পুঁজি হারিয়েছেন, তারা নতুন নতুন ব্যবসা উদ্যোগের কথা ভাবতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট ও রিসোর্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে চালু করে দেয়া হয়েছে। ফলে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা পর্যটন শিল্পে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করলে আমাদের পর্যটন ব্যবসায় প্রাণ ফিরে আসবে। এরই মধ্যে পর্যটন খাতে বিরাট ধস নেমেছে করোনার প্রকোপে। এই ধস কাটিয়ে উঠতে সময়োপযোগী নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসতে চাইছেন এ খাতের উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। অথচ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর এসেও পর্যটনশিল্প নবজাতক পর্যায়ে রয়ে গেছে। দেশের জিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ২.২ শতাংশ। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান ১.৮ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশের চেয়ে দুর্বল অবকাঠামো নিয়েও পর্যটনে অনেকটা এগিয়ে নেপাল। দেশটির জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে পাহাড়, সাগর, নদী, বন, পুরাকীর্তি, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিসহ পর্যটক আকর্ষণের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষির মতো সরকার অগ্রাধিকার না দেওয়ায় বিপুল সম্ভাবনার খাতটি ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। প্রধান পর্যটন গন্তব্যগুলোয় দুর্বল অবকাঠামো, প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীরা পর্যটনমনস্ক না হওয়া, পর্যটনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আমলান্ত্রিক জটিলতা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে দেশের পর্যটন শিল্প এগোতে পারছে না।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ও পর্যটন বিশ্লেষক জামিউল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, পর্যটন খাত সরকারের অগ্রাধিকারে নেই। স্বাধীনতার পর থেকে এই খাতটিকে এগিয়ে নিতে খুব তৎপরতা দেখা যায়নি। আমরা এত দিনেও একক পর্যটন আইন, ন্যাশনাল ট্যুরিজম ডাটাবেইস, টিএসএ (ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট), কিউটিএস (কোয়ালিটি ট্যুরিজম সার্ভিস), প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ও গবেষণা সেল করতে পারিনি। সারা পৃথিবীতে পর্যটন চলে পর্যটনের নিয়মে আর আমাদের পর্যটন চলে আমলাদের ইচ্ছায়। ফলে এতে না আছে ব্যবস্থাপনা, না আছে কোনো শৃঙ্খলা।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাত পর্যটন। শুধু আমাদের ট্যুর অপারেশন খাতেই পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর পরও এই খাতের উদ্যোক্তারা কোনো প্রণোদনা পাননি। মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েও কোনো সদুত্তর মেলেনি।

https://dailysangram.com/post/439910