৭ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৮

খেলাপি ঋণের বিড়াল-ইঁদুর দৌড়ে ছিল ব্যাংকিং খাতে অরাজকতা

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান : বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতে কাক্সিক্ষত হারে কমেনি খেলাপি ঋণের পরিমাণ। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং পর্যায়ক্রমে তা ৫ শতাংশের নিচে নামানোর নির্দেশনা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু বছর শেষে তা সম্ভব হয়নি। এর বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে অনেক ব্যাংকে। বিশেষ করে এই তালিকায় রয়েছে সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতের দেশি এবং বিদেশি মালিকানার বেশ কয়েকটি ব্যাংক। কোনো কোনো ব্যাংকে খেলাপি ঋণের বেশিরভাগই আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ হলেও কোনোভাবেই যেন এর কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ঋণ নেয়ার পর বিভিন্ন অজুহাতে একের পর এক খেলাপি হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেক ব্যাংক নিজেই নুয়ে পড়ছে। দেশের ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি আছে নয়টি ব্যাংকের। টিআইবি বলছে, দেশের এখন সাতজন শীর্ষ গ্রহীতা ঋণ খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে। সরকার খেলাপি ঋণ কমানোর কৌশল হিসাবে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের যে সুযোগ দিয়েছিল তাও কাজে আসেনি। সরকারের এ কৌশলের সাথে একমত ছিলেন না অর্থনীতিবিদরা। সবমিলে বিদায়ী বছরজুড়ে ব্যাংকিং খাতে ছিল চরম অরাজকতা।

এদিকে ঋণ খেলাপিদের তিন দফা সুবিধা দিয়েছে সরকার; ডিসেম্বর পর্যন্ত কিস্তি না দিলেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। করোনাভাইরাসের কারণে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিকরণে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। মহামারীর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ায় গত ১৫ জুন আরও তিন মাস বর্ধিত করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছিল। সেই সময় আরও তিন মাস বাড়িয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। যেসব ঋণ খেলাপি ২০১৯ সালে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে ১০ বছরে খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ নিয়েছিলেন, তারাও ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কিস্তি না দিলে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে না। তাদেরকেও মহামারীরকালের বিশেষ সুবিধার আওতায় আনলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ খেলাপিদের তৃতীয় দফা সময় দেয়ায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে যে এক ধরনের অরাজকতা চলছে, এটা তারই নিদর্শন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। জুন মাস শেষে দেশের ৫৯টি ব্যাংক মোট ১০ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা বেড়ে ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এই অঙ্ক মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। মার্চ মাস শেষে যা ছিল ৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা কমে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে বলে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই অঙ্ক মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র আরও জানায়, বিদায়ী বছর পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন ঋণগ্রহীতা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে রেখেছেন। ফলে ঋণ খেলাপি হিসেবে তাদের নাম বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) উল্লেখ করা হয় না। এ রকম ঋণের পরিমাণ এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। এই সব খেলাপি ঋণ যোগ করলে দেশে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ কোটি টাকার মতো। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরো সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ খেলাপি ঋণের ঘরে পৌঁছানোর আগের ধাপে অবস্থান করছে। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে খেলাপি ঋণ পরিশোধের ‘বিশেষ’ সুযোগসহ নানা ছাড় দেয়ার পরও মহামারীকালে বেড়েছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক।

২০১৯ সালের মে মাসে ঋণ খেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ৯ শতাংশ সুদে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘বিশেষ’ ওই সুবিধার আওতায় বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলো নবায়ন করেছে। এর অর্ধেকই করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এ ছাড়ের কারণে বিদায়ী বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর- এই এক বছরে নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপি হয়নি। কিছু উদ্যোক্তা নিজ উদ্যোগে কিছু ঋণ শোধ করেছেন। তবে ঋণ আদায় না করে, ঋণ খেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো ব্যাংক খাতের জন্য বিপজ্জনক হিসাবে দেখছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিচ্ছে, আসল অঙ্ক এর আড়াই গুণ বেশি। এ ধরনের মিনিংলেস তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। এতে আমাদের ব্যাংকিং খাতের ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে। ঋণ আদায় না করে, ঋণ খেলাপিদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী মজা পাচ্ছে, তা আমার মাথায় ঢোকে না। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিচ্ছে, আসল অঙ্ক এর আড়াই গুণ বেশি। ঋণ খেলাপিদের বার বার ছাড় দিয়ে ‘ভালো’ ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এই ভুল সিদ্ধান্ত গোটা ব্যাংকিং খাতের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।

ঋণ খেলাপিদের একটার পর একটা সুবিধা দিয়ে বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ আটকে রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক খাতে বিপর্যয় ডেকে আনছে বলে মনে করছেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। ব্যাংকিং খাতে যে এক ধরনের অরাজকতা চলছে, এটা তারই নিদর্শন। ব্যাংকিং খাতে আসলে এক ধরনের অরাজকতা চলছে। হাতেগোনা চিহ্নিত কয়েকজন লোককে সুযোগ দিতে দিনের পর দিন ছাড় দিয়েই যাচ্ছে সরকার, যার ফলশ্রুতিতে ব্যাংকিং খাতের বারোটা বাজছে। তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো না। এরপর একটার পর একটা এ ধরনের অযৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যাংকিং খাত তথা আর্থিক খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে একটার পর একটা সুবিধা নিয়ে বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ শোধ করছে না কেউ, আদৌ এই টাকা আদায় হবে কি না, তা নিয়ে আমার সংশ্রয় আছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে জানান, অর্থমন্ত্রী জানান, ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মোট এক লাখ ৮২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে খেলাপির পরিমাণ ৪১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। যার সিংহভাগই জনতা ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছে। এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ৯০ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) ৫৫৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যার উপর জনগণের এই আমানত তদারকিসহ সুরক্ষার দায়িত্ব, তারা জনগণের অর্থ লুটপাটকারী এবং তাদের হাতে জিম্মি যে সরকার এই দুই শক্তির চাপের ফলে এটি প্রায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। খেলাপি ঋণের ২% ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুযোগের বিষয়টি উল্লেখ করে টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত ঋণ গ্রহীতার চেয়ে ইচ্ছেকৃত খেলাপিদের জন্য সহজ শর্ত দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে নিয়মিত ঋণ গ্রহীতাকে খেলাপি হতে উৎসাহী করা হল। খেলাপি ঋণ কাগজে কলমে কম দেখানো, খেলাপি ঋণকে উৎসাহিত করা এবং অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ে ব্যাংকের তৎপরতা হ্রাস করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজন না থাকা স্বত্বেও’ শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রভাবিত বা বাধ্য করা হয়েছে। নতুন ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তার মধ্যে মন্ত্রী, সাংসদ, ও তাদের পরিবারের সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, ছাত্র সংগঠনের নেতা, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বিভিন্ন পেশাজীবী গ্রুপ রয়েছে। একক পরিবারের পরিচালক সীমা লঙ্ঘন করে একাধিক ব্যাংকে একই পরিবারের চারের অধিক স্বামী, স্ত্রী, দুই পুত্র, মেয়ে ও নাতিসহ একই পরিবারের ছয় জন পরিচালক রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের ঋণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে তদারকি সে ভূমিকাটা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ।

বিদায়ী বছরে ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। এতে বলা হয়, বৈঠকে সংসদের ফ্লোরে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া রিজার্ভ চুরি ও মুদ্রা পাচার রোধে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দুর্নীতি রোধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রতি তদারকি জোরদার করার সুপারিশ করা হয়।

বিদায়ী বছরে দুই শতাংশ অর্থ আগাম পরিশোধসাপেক্ষে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে বৈধ ঘোষণা করে তার মেয়াদ ৯০ দিন বাড়িয়ে দেয় হাই কোর্ট। বিশেষ সুযোগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক রিট আবেদনে দেয়া রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ এই রায় দেয়। আদালতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, শামীম খালেদ আহমেদ ও মুনীরুজ্জামান। ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি'র এক গবেষণায় জানানো হয়, বাংলাদেশে এক দশকের প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৯৫০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, দেশের এখন সাতজন শীর্ষ গ্রহীতা ঋণ খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে। সংস্থাটির গবেষণায় পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসাবে বর্ননা করে এজন্য সিণ্ডিকেট, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়িক প্রভাব এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতিকে অন্যতম কারণ হিসাবে তুলে ধরেছে। নির্বাচনের সময় টোকেন অর্থ ফেরত দিয়ে প্রার্থী হিসাবে বৈধ হওয়ারও সুযোগ দেয়া হয়। সংস্থাটি বলেছে, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, নৈরাজ্য, ঋণ জালিয়াতি এবং খেলাপি ঋণের উচ্চহার চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারে চলে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, সরকারি হিসাব এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে হিসাবে দেখা যাচ্ছে তিন লক্ষ কোটি টাকার মতো ঋণ খেলাপি হয়েছে। এটি বিশাল অংক। ব্যাংকিং খাতে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে এই বোঝা জনগণের ওপরই পড়বে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেক ব্যাংক নিজেই নুয়ে পড়ছে। দেশের ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি আছে নয় ব্যাংকের। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ), বেসিক ব্যাংক (৫১ দশমিক ৭৩ শতাংশ), জনতা ব্যাংক (২৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ), সোনালী ব্যাংক (২০ দশমিক ৯১ শতাংশ), বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ), আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (৭৯ দশমিক ৮১ শতাংশ), পদ্মা ব্যাংক (৬৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (৩০ দশমিক ৮ শতাংশ) এবং দেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান (৯৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ)।

খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদায়ী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ আদায়ে শিথিলতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময় শেষে মোট খেলাপি বৃদ্ধির জোর আশঙ্কা রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংক। খেলাপি সমস্যার কারণে নতুন করে গ্রিন ব্যাংকিংয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, এটা ভবিষ্যতের জন্য ওয়ার্নিং।

https://dailysangram.com/post/439812