১৮ অক্টোবর ২০২০, রবিবার, ৫:১০

শীতকালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে খাদ্যশস্যের ঘাটতির আশঙ্কা

আসন্ন শীতে মহামারির আরেক দফা ঢেউ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে ইউরোপের ওপর দিয়ে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ ঢেউ বয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশকেও আসন্ন শীতে আরেকটি বড় সংক্রমণ ঢেউ মোকাবেলা করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ আশঙ্কায় রয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশও। করোনা মহামারীতে সৃষ্ট অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে এসব দেশের অধিকাংশই এখন খাদ্যের মজুদ বাড়িয়ে তুলছে। যদিও বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে খাদ্যের সরকারি মজুদ এখন কমতির দিকে। বর্তমানে এ মজুদের পরিমাণ নেমে এসেছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও নিচে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বুধবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন পর্যন্ত (১৪ অক্টোবর ২০২০) দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুদের পরিমাণ ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৮০০ টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬০ টন ও গম ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৪০ টন। প্রতিবেদনে এ মজুদ পরিস্থিতিকে সন্তোষজনক বলে দাবি করা হলেও পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের একই সময়ে দেশে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ ছিল ১৭ লাখ ২০ হাজার ৩২০ টন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খাদ্যশস্যের মজুদ হ্রাস পেয়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে এক মাস আগের মজুদ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েও বলা যায়, দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ হ্রাস পাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি গুদামগুলোয় মোট খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ১৯ হাজার টন। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ হ্রাস পেয়েছে ১৬ শতাংশের কাছাকাছি।

মহামারিসৃষ্ট অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক দেশেই এখন খাদ্যের উৎপাদন ও মজুদ বাড়ানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে গমের শীর্ষ আমদানিকারক মিসর এপ্রিলের পর থেকে পণ্যটির আমদানি বাড়িয়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি হারে। খাদ্যশস্যের মজুদ রেকর্ড সর্বোচ্চ পরিমাণে নিয়ে এসেছে জর্ডান। এছাড়া খাদ্যশস্যের অন্যতম শীর্ষ ভোক্তাদেশ চীনও এখন আমদানি বাড়িয়ে চলেছে। আমদানি বাড়াচ্ছে পাকিস্তান, মরক্কোসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে কোনো কোনো দেশ খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়াতে এরই মধ্যে আগামী কয়েক মাসের জন্য আমদানি শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।

পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বা খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে তার আভাসও কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফও) এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বিশ্বের ২৭ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটের মুখে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এভাবে চললে এই বছর শেষেই ১৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বেন। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের খাদ্য বিভাগের প্রধান ধনকুবেরদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন। তার কথায় দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের অভাবে মৃত্যুমুখে দাঁড়িয়ে থাকা ওই ৩ কোটি মানুষকে বাঁচাতে বছরে অন্তত ৪৯০ কোটি ডলার সাহায্য প্রয়োজন। ডব্লিউএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কঙ্গোতে ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। নাইজেরিয়ায় ৪০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ খাদ্য অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

চলতি বছর মহামারির কারণে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন অনেকে। ফলে সরকারি ত্রাণ সহযোগিতার ওপর মানুষের নির্ভরতাও অনেক বেড়েছে। সামনের দিনগুলোয় দ্বিতীয় সংক্রমণের ঢেউ বয়ে গেলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, তা মোকাবেলার জন্য সরকারি খাদ্যগুদামগুলোয় এখনই মজুদ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে বর্তমানে বিভিন্ন দেশে খাদ্যপণ্য আমদানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে মহামারীসৃষ্ট অনিশ্চয়তাকে। এফএওর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আবদোলরেজা আব্বাসিয়ানের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ভবিষ্যতে আবারো সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত ঘটানোর আশঙ্কা থেকে অনেকগুলো দেশ এখন খাদ্য আমদানি বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণেও কোনো কোনো দেশ আমদানি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের অতিসত্বর ১০-১৫ লাখ টন চাল আমদানি করে রাখা উচিত বলে মনে করছেন সাবেক খাদ্য সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল।

https://dailysangram.com/post/431044