৮ জুন ২০২০, সোমবার, ১১:০১

উদাসীনতা মাস্ক ব্যবহারে তরুণদের মধ্যেও খামখেয়ালিপনা

প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর হারও ঊর্ধ্বমুখী। তবুও করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত মাস্ক ব্যবহারে একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে চরম উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছেন তরুণ-তরুণীরাও। যারা খেয়ালের বশে মাস্ক না পরেই বেরিয়ে পড়ছেন। আড্ডা দিচ্ছেন এখানে সেখানে। আবার অসচেতন অনেক অভিভাবক নিজে মাস্ক পরলেও শিশুদের মাস্ক না পরিয়ে রাস্তায় দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছেন। বাসের হেলপার, রিকশা-সিএনজি চালক, কাঁচাবাজারগুলোর বিক্রেতা, হোটেলবয় কিংবা দোকানদারদের মধ্যে মাস্ক না পরার প্রবণতা হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে।

খিলগাঁও তালতলায় মাস্কবিহীন শিক্ষিত যুবক ইকবালের সাথে কথা হয়। কেন মাস্ক পরেননি জানতে চাইলে বলেন, এখানেই বাসা। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য নেমেছি। তাই মাস্ক পরিনি। ইকবাল এ সময় ১০-১২ জন বন্ধু নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। বলাই বাহুল্য, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ বয়সীরাও রয়েছেন। রামপুরা বাজারে দেখা যায় এক মুরব্বি দোকান করছেন মাস্ক ছাড়াই। তিনি বলেন, ‘বাবা মাস্ক পরে কী হবে। মরণ এলে কেউ বাঁচাইতে পারব?’

গত ৩০ মে রাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ‘ঘোষণা’ শিরোনামে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা না হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা: নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসক/যথাযথ কর্তৃপক্ষ সতর্কভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে।

৩১ মে নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘লকডাউন উঠে গেছে। এখন সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।’

শুরুতে মাস্কের সঙ্কট থাকলেও এখন তা কেটে গেছে। তবে মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। মগবাজারের রমনা ফার্মেসির মালিক এজাজ উদ্দিন বলেন, ‘মিটফোর্ড আর বিএমআই ভবনে যারা সার্জিক্যাল আইটেমের ব্যবসা করেন তারা চীন থেকে মাস্ক আমদানি করছেন। তবে দেশেও প্রচুর পরিমাণে মাস্ক তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে যেমন ভালো মানের রয়েছে তেমনি কম দামিও রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা না থাকায় যে যেভাবে পারছে সেভাবেই মাস্ক তৈরি করে বিক্রি করছেন।’ ২৬ মার্চে যখন সাধারণ ছুটি দেয়া হলো তখন হোলসেল থেকে একটা মাস্ক ৩৭-৪০ টাকা দামে কেনা হতো জানিয়ে এজাজ বলেন, তারপর মোবাইল কোর্টের তৎপরতায় দাম কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, ‘তাও মার্চ আর এপ্রিলে ২০ টাকার নিচে কোথাও মাস্ক পাইনি। যেগুলোর মান ভালো বা সার্জিক্যাল মাস্ক সেগুলো এখন ১৩-১৫ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু দেশে যেগুলো তৈরি হচ্ছে তার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। সেগুলো ১০-১২ টাকা করে বিক্রিও হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো একেবারেই প্রটেকটিভ না। সাইকেলে, রিকশায়, হাতে-হাতে হকাররা এসব বিক্রি করছে রাস্তায়। কিন্তু এগুলো ভাইরাস থেকে কতটুকু সুরক্ষা দেবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মনে হয় না এগুলো কোনো কাজে দেবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি মাস্ক ব্যবহারে জোর দিয়েছে। তারা এখন প্রত্যেককেই মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন। দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করলে সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/506776