ছবি: সংগৃহীত
৫ জুন ২০২০, শুক্রবার, ৮:২৯

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশৃঙ্খলা সহিংসতা

বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

গ্রেফতারের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে * করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন জর্জ ফ্লয়েড

পুলিশি হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। কারফিউ উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ নবম দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন।

নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত শহরগুলোয় তারা ব্যাপক পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতা করে তিনি মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর মুখে পড়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতারের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে, আমেরিকার বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার্স’ বিক্ষোভে উত্তাল লন্ডনে ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। খবর বিবিসি, এপি, সিএনএন ও রয়টার্সের।

নিউইয়র্কে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। এ সময় অন্তত ২০০ জনকে আটক করা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ শহরেই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূূর্ণ। হোয়াইট হাউসের কাছে অবস্থান নেন হাজার হাজার মানুষ। পুলিশি নির্যাতন বন্ধের পাশাপাশি বিদ্বেষমূলক আচরণ বন্ধের দাবি জানান তারা।

মিনেসোটার মিনিয়াপোলিস শহরে ফ্লয়েডের অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে। ফুলেল শ্রদ্ধা, ভালোবাসার বার্তায় ভাসছে পুরো চত্বর। ২৫ মে এখানেই পুলিশের বর্বরতায় প্রাণ হারান তিনি।

ফ্লয়েডের ছেলে বলেন, বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই। আর কোনো সন্তান যেন তার বাবাকে এভাবে না হারায়। যারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, তাদের জন্য ভালোবাসা, শ্রদ্ধা।

ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে চলা বিক্ষোভ দমনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের বিরোধিতা করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার।

বুধবার এসপার বলেছেন, বর্ণবাদী অন্যায়, অবিচার এবং ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া অস্থিরতা প্রশমনে সেনা মোতায়েন করাকে তিনি সমর্থন করেন না। সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন পেন্টাগনের প্রধান এসপার।

পেন্টাগনে এক বক্তব্যে এসপার বলেন, একমাত্র শেষ উপায় হিসেবেই সামরিক বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর ভূমিকায় নামানোর বিকল্প পথ অবলম্বন করা উচিত। পরিস্থিতি খুবই গুরুতর এবং ভয়াবহ হলেই শুধু তা করা যেতে পারে। এখন আমরা সেরকম কোনো পরিস্থিতিতে পড়িনি। ফলে ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’ (যে ফেডারেল আইনে প্রেসিডেন্ট সেনা মোতায়েনের ক্ষমতা রাখেন) এর শরণাপন্ন হওয়াটা সমর্থন করেন না।

হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কথা বলার পর ওয়াশিংটন ডিসি থেকে কমব্যাট সেনা প্রত্যাহার করতে আদেশ দিয়েছেন এসপার। ফ্লয়েড হত্যাকে এক ‘ভয়ংকর অপরাধ’ বলেও তিনি বর্ণনা করেন। এসপার বলেন, ফ্লয়েডকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলে থাকা কর্মকর্তাদের জবাবহিদির মুখে দাঁড় করানো উচিত।

২৫ মে মিনেসোটার মিনেপোলিসে শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তার হাঁটুর চাপে দমবন্ধ হয়ে ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ চলতে থাকা উত্তাল সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এসপার এ মন্তব্য করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দু’দিন আগেই বিক্ষোভ দমনে সেনা নামানোর হুমকি দিয়েছিলেন। বড় বড় শহরে লাগাতার সহিংস বিক্ষোভ ও লুটপাট ‘তাৎক্ষণিকভাবে’ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি।

অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে রাজি না হলে ট্রাম্প নিজেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করবেন বলেও হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেছিলেন, যদি কোনো শহর বা অঙ্গরাজ্য বাসিন্দাদের জানমালের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে আমিই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মোতায়েন করে তাদের হয়ে দ্রুত সমাধান এনে দেব।

এর বিপরীতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার দেশের নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারকে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, এ অধিকার এবং স্বাধীনতাই আমাদের দেশের বিশেষত্ব। আমেরিকার সেনা সদস্যরা এ অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে মরতেও ইচ্ছুক।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন জর্জ ফ্লয়েড: পুলিশি নির্যাতনে হত্যাকাণ্ডের শিকার জর্জ ফ্লয়েড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। হেনেপিন কাউন্টি প্রকাশিত নতুন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া নমুনা পরীক্ষা করায়। এতে দেখা গেছে, ফ্লয়েড করোনা পজিটিভ’ ছিলেন।

আনুষ্ঠানিক ময়নাতদন্তে তার হত্যাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ (হোমিসাইড) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী গ্রেফতার: ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় মার্কিন পুলিশ ১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত রাজধানী ওয়াশিংটন, মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়া থেকে ৪০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে তিন হাজার এবং নিউইয়র্কে দুই হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার মিনেপোলিসের পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনা নতুন অভিযোগকে বিক্ষোভকারীরা স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা রাস্তায় তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

মিনেসোটার কৌঁসুলিরা ঘোষণা করেন, তারা চওভিনের বিরুদ্ধে আরেক মাত্রা বাড়িয়ে ২য় মাত্রার খুনের অভিযোগ এনেছেন। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা ও মদদ দেয়ার অভিযোগে অপর তিন পুলিশ কর্মকর্তা তাও থাও (৩৪), আলেকজান্ডার কুয়েং (২৬) এবং থমাস লেনকে (৩৭) গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ : যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভের ঢেউ লেগেছে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ফ্লয়েডের হত্যার প্রতিবাদে লন্ডনে বুধবার বিকালে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। সেন্ট্রাল লন্ডনের হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে ১৫ হাজার মানুষ অংশ নেন। এতে সঙ্গীতশিল্পী লিয়াম পাইন অংশ নেন।

স্টার ওয়ার্সখ্যাত অভিনেতা জর্জ বয়েগা ভাষণ দেন। লন্ডনে ডাউনিং স্ট্রিটের কাছে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মদদ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/312553/