১৮ মার্চ ২০১৭, শনিবার, ১০:১২

হাজার হাজার কোটি টাকার গাড়ি কনটেইনার পড়ে আছে

মবক-কাস্টমস সমন্বয়হীনতা, আইনি সমস্যা

আইনি জটিলতা, সমন্বয়হীনতা ও মামলার কারণে ১৫ বছর ধরে মংলা বন্দরে পড়ে আছে এক হাজার ৫০০টির বেশি গাড়ি ও ৮০০টির বেশি কনটেইনার। খালাস করতে না পারায় হাজার হাজার কোটা টাকার আমদানিসামগ্রী পড়ে আছে। মূল্যবান এসব আমদানি করা পণ্য দ্রুত খালাস করতে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (মবক) ও কাস্টমস হাউজকে সমাধানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর উচ্চ শুল্ক হারের কারণে পণ্য আমদানি ৮৩ শতাংশ কমেছে। কনটেইনার খালাস কমেছে ৫৩.৩০ শতাংশ বলে মবকের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।
মবক তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে এ বন্দরে জাহাজের সংখ্যাও বেড়েছে। কমছে কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কনটেইনার জাহাজ ছিল ৩৪টি। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত এটি ২৪টিতে দাঁড়িয়েছে। কমেছে খালাস হওয়া কনটেইনারের সংখ্যা। গত অর্থবছর যেখানে সাত হাজার ৫১২টি ছিল, সেটি এখন তিন হাজার ৫২৪টিতে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি আমদানির সংখ্যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪ শতাংশ ও খালাস কমেছে ৬.১৩ শতাংশ। কনটেইনার আমদানির সংখ্যা ৩৪.৫৪ শতাংশ এবং খালাস ৫৩.০৯ শতাংশ কমেছে। এ বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার ৬০ শতাংশই গাড়ি।
গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, বন্দরে খোলা জায়গার নিচে শত শত কনটেইনার ও গাড়ি রয়েছে বছরের পর বছর। এসব গাড়ির মধ্যে নোয়া, হাইস, টয়োটা করল্লা, পাজেরো, মিটসুবিশির প্রাইভেট কার ইত্যাদি রয়েছে। এ দিকে ২০১০-১২ সালের ৪৪৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা মূল্যের অখালাস হওয়া চার হাজার ৭২৮টি গাড়ি নিলামের মাধ্যমে খালাসের প্রক্রিয়া চলছে।
জানা গেছে, মংলা বন্দর ১৩০ কিলোমিটার লম্বা। এ নদীর কিছু জায়গাতে ড্রেজিং দরকার। নাব্যতা রক্ষা করতে হবে বন্দরের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে হলে। কোনো কোনো জাহাজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা হিরনপয়েন্টে পড়ে থাকে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য ছয়টি ড্রেজার প্রয়োজন। বর্তমানে ২৪টি শিল্প আছে। বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হচ্ছে। চাপ অনেক বেড়ে যাবে। তাই এখনই ফাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা নিতে হবে।
এক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে জানা যায়, দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছাড়াও ২০০২ সাল থেকে এসব গাড়ি ও কনটেইনার খালাস না হওয়ার কারণ হলো আমদানিকারকেরা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানি, আমদানি নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত গাড়ি আনছেন। পাশাপাশি তারা মামলা করার কারণে আরো জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই সব আমদানি করা গাড়ি ও কনটেইনার খালাস করা যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ, আপিলাত ট্রাইব্যুনালে ১৪৩টি মামলা বিচারাধীন আছে। যার সাথে প্রায় ৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব জড়িত।
মবক চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান জানান, সংস্থার দতা ৫ গুণ বাড়াতে হবে। সমতার ৬০ শতাংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে। আগামী ৫০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে। বন্দর উন্নয়নে আগামী ৫০ বছরে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হবে তাতে ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপকে সরকারের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে এ কাজে। তার মতে, সরকার টু সরকার (জিটুজি) অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে।
রাজস্ব বোর্ডের সদস্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মংলা বন্দরে বছরের পর বছর গাড়ি ও কনটেইনার খালাস হচ্ছে না মবক ও কাস্টমসের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে। এসব ছাড়ানোর ব্যাপারে দুই সংস্থা বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজেদের সমাধান করতে হবে।
মবকের বৈঠকে রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো: নজিবুর রহমান বলেন, আমদানি করা পণ্যের সঠিক নিরাপত্তা দিতে হবে। গাড়ির পাশাপাশি কনটেইনার খালাসের জটিলতা নিরসন করতে হবে। দুই সংস্থা উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কার্পেটের নিচে ময়লা রাখবেন না। দ্রুত নিরসন করুন।

www.dailynayadiganta.com/detail/news/204489