খুলনায় মঙ্গলবার একটি মার্কেটের সামনে উপচে পড়া ভিড়। ছবি-যুগান্তর
১৩ মে ২০২০, বুধবার, ১২:৩৩

সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই মার্কেটে

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বঙ্গমার্কেট ও ধানমণ্ডির দুটি আউটলেট বন্ধ করল পুলিশ * বরিশাল ও খুলনায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় * রাজশাহীতে সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে খোলা হয়েছে দোকানপাট

অলিগলি থেকে শুরু করে মার্কেটে কেনাকাটায় সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। দোকানিরা নিয়ম মানলেও মানছেন না ক্রেতারা। পাড়া-মহল্লায় বাড়ছে মানুষের ভিড়।

কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মতো নিয়ম না মানার লুকোচুরি চলছে রাজধানীন ঈদ উপলক্ষে সীমিত পরিসরে খোলা দোকানগুলোতে। বরিশাল ও খুলনায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাজশাহীতে সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে খোলা হয়েছে দোকানপাট।

যুগান্তর রিপোর্ট ও ব্যুরোর পাঠানো খবর-

ঢাকা : সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান, মার্কেট এবং শপিংমল সীমিত আকারে খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এছাড়া রাজধানীতে ১৪টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে কঠোর হচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার বঙ্গমার্কেট ও ধানমণ্ডির দুটি ফ্যাশন আউটলেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি না মানায়।

অন্যদিকে যারা সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, ক্রেতার অসচেতনতায় তারাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। বিভিন্ন মার্কেটের পাশাপাশি ভিড় বাড়ছে নগরীর অলিগলিতেও। রীতিমতো চলছে আড্ডাবাজি। অবস্থাদৃষ্টে যে কারও মনে হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। অধিকাংশ মার্কেটে দোকানের সামনের জায়গার পরিধি ছোট হওয়ায় অনিচ্ছাকৃতভাবেই ক্রেতা-বিক্রেতা একে অপরের কাছাকাছি চলে আসছেন। জায়গার কথা ভেবে কেউ একজনের বেশি দোকানে প্রবেশের সুযোগ না দিলেও বাইরে লেগে যাচ্ছে ছোটখাটো জটলা। দোকানের বাইরে বৃত্ত এঁকে ঘর করা থাকলেও সেটা অনেকেই খেয়াল করছেন না।

দেখা গেছে, রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, ঢাকা কলেজ, নিউমার্কেট এলাকায় ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট বন্ধ থাকলেও মার্কেটের বাইরের অংশের দোকান প্রায় সবগুলোই খোলা। এ দোকানগুলোর আকার অনেক ছোট। দু-তিনজন ক্রেতা প্রবেশ করলেই দোকান ভরে যায়। এসব দোকানে মূলত শিশুদের জন্য তৈরি পোশাক লুঙ্গি, সালোয়ার-কামিজ বিক্রি হয়। এসআর ফ্যাশনের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দোকান ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখি। এছাড়া আমরা ক্রেতাদের পোশাকে হাত দিতে দেই না। পোশাক পছন্দ হলে তা নামিয়ে দেই।

এ সময় পাশের কয়েকটি দোকানের সামনে ক্রেতাদের ছোটখাটো জটলা দেখা যায়। অপর এক দোকান কর্মচারী জানান, দোকানে জায়গা কম হওয়ায় তারা একজন ক্রেতাকেই প্রবেশ করার সুযোগ দিচ্ছেন। একজন বের হলে আরেকজন প্রবেশ করছেন। এছাড়া ক্রেতাদের জন্য জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা আছে।

গাউসিয়ার নূর ম্যানশনের একটি দোকানের কর্মচারী ইসমাইল বলেন, ধরতে না দিলে অনেক কাস্টমার বিরক্ত হন। আমরা বলে দেই যে কিছু করার নেই। এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলোর সামনে একটু পরপর জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন কর্মীরা। তবে দোকানের পরিসর এবং মার্কেটের জায়গা ছোট হওয়ায় বেশিরভাগ বিক্রেতা অবস্থান করছে একে অপরের কাছাকাছি।

মিরপুরের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, নিয়ম শিথিল করার কারণে দোকান খুলেছেন। দোকানে বিক্রি স্বাভাবিক আছে। মানুষজনের উপস্থিতি বাড়ছে। তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার চেষ্টা করছি।

বরিশাল : বরিশালে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ কোরানাভাইরাসকে উপেক্ষা দীর্ঘ দেড় মাস পর মহিলা ক্রেতারা গৃহবন্দি থাকার পর শ্বাস ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে মহা খুশি তারা। মহা আনন্দে নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা চকবাজারে ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে কেনাকাটার জন্য শারীরিক সুরক্ষার কথা ভুলে গিয়ে এক অপরের শরীর ঘেঁষে কেনাকাটায় এমনভাবে মগ্ন হয়ে পড়েছেন।

দেখে মনে হয়, ঈদ উৎসবের আনন্দে ভুলে গেছেন লকডাউনের কথা। চকবাজার ব্যবসায়ী মালিক কল্যাণ সমিতির সদস্যরা বিসিসি মেয়রের আহ্বানে দোকান-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ঈদ বাজারের লোভনীয় আয়োজনের কারণে ভুলে গেছেন সেই সিদ্ধান্তও।

মালিক সমিতির অধিকাংশ সদস্য তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানের অর্ধেক শাটার খুলে চালিয়ে যাচ্ছেন বেচাবিক্রি। আর সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন নারী ক্রেতারা।

নগরীর চকবাজার ব্যবসায়ী মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুর রহিমের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে নগরীর চকবাজার দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন দত্ত বলেন, বর্তমান করোনা সরকারের একার নয় এটা সবার সমস্যা। তাই আমি সব সচেতন ক্রেতাদের অনুরোধ করব তারা যেন নিজেরা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম মেনে কেনাকাটা ও চলাফেরা করেন। সেই সঙ্গে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ ও আমার কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যদের বলব তারা নিজেরা স্বাস্থ্য বিধি অনুযায়ী ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টার করার মাধ্যমেই ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখবেন।

খুলনা : অবশেষে নিউ মার্কেটসহ খুলনার সব মাকের্টই খোলা রাখা হচ্ছে। নিউমার্কেট মালিক সমিতির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আজ থেকে সকাল ১০টা-বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে খুলনার সোনার মার্কেট বাদে প্রায় শতাধিক মার্কেট খোলা হল। সমিতির সভাপতি সাবেক এমপি আবদুল গাফফার বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান গোরা জানান, ইতিপূর্বে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি এবং পুলিশের দেয়া বিধিবিধান মেনে মালিক সমিতির সদস্যরা দোকান খুলতে সম্মত ছিলেন না।

কিন্তু খুলনার অন্য সব মার্কেট খোলা এবং ঈদ উৎসবের কথা চিন্তা করে সমিতির সদস্যদের আবেদনে মঙ্গলবার পুনরায় সমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বুধবার হতে মার্কেটের সব দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

রাজশাহী : রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী মহানগরীতে দোকানপাট বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। শনিবার রাতে সিটি ভবনে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যৌথসভায় সবার মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নগরভবনে আয়োজিত ওই সভায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু মঙ্গলবার রাজশাহীতে সরেজমিন দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। রাজশাহী মহানগরীর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র নিউমার্কেট এবং আরডিএ মার্কেটে চুপিসারে বেচাকেনা হয়েছে। বাইরে থেকে বড় দোকানগুলোর গেট বন্ধ রাখা হলেও দোকানের ভেতরে ক্রেতারা গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে তাদের পছন্দের পণ্য কিনছেন। একই অবস্থা ছিল আরডিএ মার্কেটেও।

তাছাড়া কামারুজ্জামান চত্বর থেকে গণকপাড়া পর্যন্ত পোশাক এবং জুতাসহ অন্য পণ্যগুলোর বড় বড় শোরুমগুলো ছিল খোলা। সাহেববাজার কাপড়পট্টিতেও ছিল মানুষের ঢল। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় করতে দেখা গেছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/306648