১০ মে ২০২০, রবিবার, ৫:১৭

ফাঁকা রাজধানীতে নগদ টাকা বহনে বড় ঝুঁকি

সক্রিয় অপরাধী চক্র দৃশ্যমান নয় টহল কার্যক্রম

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের মামা-ভাগ্নে ফলের আড়তের ম্যানেজার জুয়েল মিয়া গত রোববার দুপুরে ইসলামপুরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যান। ব্যাংকের ভেতর ঢোকার ঠিক আগে তাকে ঘিরে ফেলে ছিনতাইকারীরা। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ধস্তাধস্তি করে তারা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের কাছেই চলছিল র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। চিৎকার-চেঁচামেচিতে র‌্যাব সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে তার টাকা উদ্ধার করে। ফলের আড়তের মালিক মোস্তফা হাওলাদার বলছিলেন, সঙ্গত কারণেই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। নিয়মিত ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়, আবার টাকা উঠাতে হয়। কিন্তু সব রাস্তা ফাঁকা থাকায় আতঙ্কের মধ্যে থাকেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবতার কারণেই মাঠে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় সব কর্মকর্তা ও সদস্য করোনাভাইরাসজনিত নানা কার্যক্রমে ব্যস্ত। এতে সাধারণ চেকপোস্ট থেকে শুরু করে নিয়মিত ও মৌসুমি অপরাধী গ্রেপ্তার বা অপরাধ দমনে অভিযানও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে। টানা বন্ধের কারণে রাজধানীতে যেমন জনসমাগম কম, তেমনি সড়কও ফাঁকা। এদিকে রোজা ও আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগদ টাকার লেনদেন বেড়েছে। এ অবস্থায় ঢাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে অপরাধ ঠেকাতে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি সরকারের কাছে জমা দেওয়া একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও রমজান ও ঈদুল ফিতরজনিত পরিস্থিতিতে রাজধানীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ছিনতাই-ডাকাতির শঙ্কার চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সময় নগদ টাকার লেনদেন বাড়ে। ফলে ফাঁকা রাস্তাঘাটে অপরাধ সংঘটিত হতে পারে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সমকালকে জানান, তারা সব সময়ই বড় অঙ্কের নগদ টাকা বহনের সময়ে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করে থাকেন। চলমান পরিস্থিতিতে সে ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে। কেউ বড় অঙ্কের টাকা তুলতে বা ব্যাংকে জমা দিতে গেলে পুলিশ এসকর্ট চাইলেই দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, ডিএমপি সব সময়েই নগরবাসীর নিরাপত্তায় সচেষ্ট। সাধারণত রোজা ও ঈদ সামনে রেখে ভিন্নভাবে এই নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। এবারের ভিন্ন পরিস্থিতিতে বাস্তবতার নিরিখে ডিএমপির বড় অংশ করোনাভাইরাস সৃষ্ট নানা সংকট মোকাবিলার দায়িত্বে থাকলেও নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রমও চলছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।

এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে দেওয়া নিরাপত্তা-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান ও ঈদে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেন বেড়ে যায়। এতে দুর্বৃত্তরা টার্গেট করে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে টাকাসহ ব্যক্তিকে অপহরণের ঘটনাও ঘটতে পারে।

প্রতিবেদনটিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকার বিষয় তুলে ধরে বলা হয়েছে, এতে দুর্বৃত্তরা সরাসরি ব্যাংকের ভেতর ঢুকে যেতে পারে এবং গ্রাহকের টাকাও হাতিয়ে নিতে পারে। তাছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকেও দুর্বৃত্তরা টাকা লুট বা ছিনতাইয়ের শঙ্কা রয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে সুপারিশ করা হয়েছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিসিটিভিসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ব্যাংকের ভেতর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেওয়া সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি ও তল্লাশি এবং বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলনকারীদের গন্তব্যে পৌঁছতে মানি এসকর্টের ব্যবস্থা করাও দরকার। এর বাইরে চলমান পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথগুলোতেও বিশেষ নজরদারি দরকার। এ ছাড়া মহল্লা বা রাস্তার পাশে বিকাশ, নগদ ও রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের নিরাপত্তার বিষয়ও উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। রমজান মাস উপলক্ষে তালিকাভুক্ত অপরাধী, চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান চালানোরও সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, তারা সব সময়েই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা কার্যক্রম নিয়ে থাকেন। চলমান পরিস্থিতিতে রাজধানীর প্রত্যেকটি প্রবেশ ও বাহিরপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া ব্যারিকেড ও তল্লাশি চৌকি রয়েছে। এর বাইরে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানবাহনের গতি কমাতে ব্যারিকেড ও পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে। কারও অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

https://samakal.com/todays-print-edition/tp-first-page/article/200538714