১৮ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ৫:৩৬

ইবোলার ওষুধেও ভালো হচ্ছে করোনা রোগী

ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হতে পারে সেপ্টেম্বরে -অক্সফোর্ড গবেষক * সবচেয়ে বড় পরীক্ষা চলছে যুক্তরাজ্যে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ঘুম নেই গবেষকদের চোখে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন, জার্মানি ও রাশিয়াতে এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। কোনো কোনো দেশ প্রাথমিক পরীক্ষায় সফলতাও পেয়েছে। করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় পরীক্ষা চালাচ্ছে ব্রিটেন। দেশটিতে আগামী সপ্তাহে করোনার টিকা মানুষের ওপর যাচাই শুরু হবে। মার্কিন গবেষকরা বলছেন, ইবোলার ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ এবং ম্যালেরিয়ার ‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন’ ওষুধে ভালো হচ্ছে করোনা রোগী। কিন্তু কবে বাজারে আসছে করোনার পরীক্ষিত একক ওষুধ- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, এজন্য আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০টি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নিয়ে কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে ব্রিটেনে একটি টিকা মানুষের ওপর পরীক্ষা করা শুরু হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ওপর এ টিকা প্রয়োগ করে আশার আলো দেখে বিজ্ঞানীরা। এবার তারা হিউম্যান ট্রায়ালের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক অ্যাদ্রিয়ান হিল জানান, প্রথম পর্যায়ে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৫১০ জন স্বেচ্ছাসেবী আগামী সপ্তাহে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিতে রাজি হয়েছেন।

এ টিকার ব্যাপারে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা এতটাই আশাবাদী যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই টিকার সাহায্যে লাখ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসের কবল থেকে বাঁচবেন বলে তাদের বিশ্বাস। প্রফেসর অ্যাদ্রিয়ান হিল ও তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জির শরীরে সার্স কোভ-২ ভাইরাস ইঞ্জেকশন দিয়ে শিম্পাঞ্জির শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন। হিল জানান, নতুন ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন তারা। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের ক্লিনিকাল টিম ও জেনার ইন্সটিটিউট যৌথভাবে সেপ্টেম্বর মাসে এই টিকা তৈরি করতে পারবেন। অক্সফোর্ডের এই গবেষক দলের পক্ষে ভ্যাক্সিনোলজিস্ট সারা গিলবার্টও বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে তারা করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে আনতে পারবেন।

যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ওষুধের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা চলছে যুক্তরাজ্যে। আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এর ফল হাতে আসবে। যুক্তরাজ্যজুড়ে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ১৬৫টি হাসপাতালে পাঁচ হাজারের বেশি করোনা রোগীর ওপর এক মাস ধরে এসব ওষুধের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও একই ধরনের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। তবে এখানে রোগীর সংখ্যা ছিল কয়েকশ’। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সংক্রামক ব্যাধি ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক পিটার হরবি বলেন, এটা এ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এর আগে পিটার পশ্চিম আফ্রিকা ও কঙ্গোতে ইবোলার ওষুধ পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার দলটি এবার করোনার ওষুধ পরীক্ষায় সুনিশ্চিত তথ্য চাইছেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি জুনের কোনো এক সময় ফল হাতে পাব।

কাজ করছে ইবোলা ও ম্যালেরিয়ার ওষুধ : মার্কিন বিজ্ঞানীদের দাবি, করোনা আক্রান্ত রোগীদের ওপর ইবোলার ড্রাগ রেমডেসিভির প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া গেছে। সম্প্রতি শিকাগো হাসপাতালের ডাক্তাররা দাবি করেছেন, সংক্রামিত ১২৫ জন রোগীর ওপর ট্রায়াল করে দেখা হয়েছিল এই ড্রাগ। তাতে আশ্চর্য রেজাল্ট পাওয়া গেছে। শিকাগো ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ক্যাথলিন মুলানে বলছেন, সুখবর হল হাসপাতালের বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল এই ড্রাগ। তাদের মধ্যে কয়েকজন সংক্রমণ সারিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকিদের শারীরিক অবস্থাও অনেকটাই স্থিতিশীল। তবে এখনই এই ড্রাগের সার্বিক প্রয়োগ নিয়ে সবুজ সঙ্কেত দেননি শিকাগোর ডাক্তাররা।

রেমডেসিভির ড্রাগের আবিষ্কারক আমেরিকার জিলেড সায়েন্সেস। ২০১০ সালে ইবোলার প্রতিষেধক হিসেবে এই ড্রাগ তৈরি করা হয়। ভারতেও এই ড্রাগ নিয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিন অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)। এপিডেমোলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজের প্রধান রমন আর গঙ্গাখেড়কার বলেন, দেহকোষে যদি ভাইরাল স্ট্রেন সার্স-কভ-২ এর ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে পারে এই অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ, তাহলেই রোগীর শরীরে সংক্রমণ কমতে শুরু করবে।

ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্লোরোকুইনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণের মাধ্যমেও করোনাভাইরাস সারানোর পরীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতেও প্রাথমিকভাবে ফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা (এফডিএ)। এ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই ওষুধটি (ক্লোরোকুইন) ভালো ফল দিয়েছে। আমরা প্রেসক্রিপশন দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধটি সরবরাহ করতে পারব। এই ওষুধের পাশাপাশি ইবোলা ও মারবার্গ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যে ওষুধ ব্যবহার হতো সেটিকেও ব্যবহার করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। রাশিয়াও করোনার চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ অনুমোদন দিয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/299162