ছবি: সংগৃহীত
১৭ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ৬:৪২

করোনা সংক্রমণভীতি তুচ্ছ

বেতনের দাবিতে আবারও সড়কে গার্মেন্ট শ্রমিকরা

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করেই বেতন-ভাতার দাবিতে ফের বিক্ষোভ করেছে গার্মেন্ট শ্রমিকরা।

রাজধানী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁসহ বেশকিছু জায়গায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানায়।

গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর কমলাপুর, মিরপুর, আদাবর, বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানিয়েছে, করোনার কারণে তাদের গার্মেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গার্মেন্ট মালিকরা তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেও এক মাস থেকে তিন মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রেখেছেন। কোনো ধরনের সহায়তা পাওয়া তো দূরের কথা, হঠাৎ করে গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

বারবার তাগাদা দেয়া হলেও মালিক তাদের পাওনা বেতন-ভাতা পরিশোধ করছেন না। তাই বাধ্য হয়েই তারা সড়কে নেমেছেন। জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাজধানীর কমলাপুরে সর্দার ও বিন্নি নামের দুটি গার্মেন্টের কর্মীরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনরত মতিঝিল থানার এসআই তৈয়ব আলী বলেন, সর্দার গার্মেন্টের মালিককে ডেকে এনে বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এরপর শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।

এদিকে দুপুরে মিরপুর এলাকার রূপনগরের মনির ফ্যাশন গার্মেন্টের শতাধিক শ্রমিক প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ্রমিকদের দাবি, কর্তৃপক্ষ তিন দফা সময় নিয়েও মার্চের বেতন পরিশোধ করেনি।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মিজানুর বলেন, বেতন-ভাতা না পেয়ে আন্দোলন করায় বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় তাদের ওপর বল প্রয়োগ করা হচ্ছে না।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বকেয়া বেতন-ভাতা ও জরুরি ত্রাণ সহায়তার দাবিতে বিমানবন্দর গোল চত্বর এলাকার সড়ক অবরোধ করেন উত্তরা দক্ষিণখান এলাকার রেদওয়ান, সিএনবি ও স্যার ডেনিম গার্মেন্টের হাজারখানেক শ্রমিক।

পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বারবার সড়ক ছেড়ে দিতে বলা হলেও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে যোগাযোগ করে মালিকপক্ষের সাড়া না পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিজিএমইএর নেতাদের জানানো হয়।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের দক্ষিণখান জোনের এডিসি হাফিজুর রহমান বলেন, গার্মেন্টকর্মীদের সামলানোর দায়িত্ব পুলিশের নয়, কিন্তু এখন সেটাই করতে হচ্ছে। গার্মেন্ট মালিকদের খুঁজে না পেয়ে বিষয়টি বিজিএমইএ-কে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন এক বিবৃতিতে জানায়, সরকার ১৬ এপ্রিলের মধ্যে সব গার্মেন্ট শ্রমিকের মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিল।

কিন্তু বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সেই তারিখের পরও ৩০ শতাংশ শ্রমিক এখনও মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পায়নি। যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সাভার (ঢাকা) : সাভার ও আশুলিয়ায় কয়েকটি কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সড়কে অবস্থান নেয়। শ্রমিকরা জানায়, এ মাসের প্রথম দিকে তাদের বেতন দেয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন তারিখ দিয়ে টালবাহানা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর ও শ্রীপুর : গাজীপুরে লকডাউন উপেক্ষা করে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর কারখানার মালিকপক্ষ সঙ্গে কথা বলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়।

শ্রীপুর পৌরসভার ভাংনাহাটী এমএইচসি অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা সকাল আটটা থেকে শ্রীপুর-মাওনা সড়ক অবরোধ করে। তবে পুলিশ সদস্যরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি বরং দাবি আদায়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন।

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : সোনারগাঁ উপজেলার টিপরদী এলাকায় অবস্থিত ইউসান নিট কম্পোজিট লিমিটেডের শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় মহাসড়কের দই প্রান্তে প্রায় ৫ কিলোমিটারজুড়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকা পড়ে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/298882/