১৭ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ৬:৩৭

করোনা চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ

অনিশ্চয়তার কবলে উন্নয়ন পরিকল্পনা; অগ্রাধিকার পরিবর্তনের সুপারিশ অর্থনীতিবিদদের; চলমান প্রকল্প কর্মসংস্থানের স্বার্থে বন্ধ করা যাবে না

কোভিড-১৯ এর কারণে নতুন অর্থবছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন অনিশ্চতার মধ্যে পড়ে গেছে। যে মুহূর্তে দেশের বাজেট প্রণয়নের কাজে প্রশাসন ব্যস্ত থাকার কথা ঠিক তখনই প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর মরণ থাবায় আটকে গেছে বাংলাদেশের আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের কাজ। নতুন এডিপি প্রণয়নের দিকনির্দেশনা দিয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু এরপরই করোনাভাইরাস সব কিছুকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরের বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।

এ দিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এডিপি ও অন্য খাতের বরাদ্দ কমিয়ে সেই অর্থ করোনা খাতে দেয়া প্রয়োজন। এডিপির বেশির ভাগ প্রকল্পের অর্থছাড় স্থগিত করে হলেও করোনা খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হবে চালনি দিয়ে ছেঁকে। করোনা চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানকে এখন অন্য সবকিছুর চাইতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, জুনের প্রথম সপ্তাহেই সংসদে বাজেট পেশ করা হয় বলে প্রতি বছর মে মাসের মধ্যেই এডিপি চূড়ান্ত করা হয়। এ ব্যাপারে গাইডলাইনও দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে কাজ আর আগানো যাচ্ছে না। সবকিছু একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। এমনকি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করে তা ছাপানোর কাজ বিজি প্রেসে দেয়ার পর সেটিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনার এই প্রকোপ আরো দীর্ঘায়িত হলে আগামী অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। মন্ত্রণালয়গুলোকে গত ২৩ মার্চ প্রকল্প তালিকা দেয়ার ক্ষেত্রে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছিল তা এখন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে করোনার কারণে। এখন এডিপি নতুন পরিস্থিতির আলোকে প্রণয়ন করতে হবে। নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় এমনগুলো বাদ দিতে হবে।

কর্মকর্তাদের মতে, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশী সহায়তা পাওয়াটাও আগামী অর্থবছর কঠিন হয়ে পড়বে। যারাই বা যেসব দেশ আমাদেরকে সহায়তা দিয়ে থাকে তারা নিজেরাই আমাদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত। ফলে এখন বিদেশী অর্থ সহায়তা পাওয়াটাও বেশ কঠিন হবে। এখন এডিপি করতে হবে সম্পদের খুব স্বচ্ছ পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে। অহেতুক কোথাও প্রকল্প নিয়ে খরচ করাটা কোনভাবেই ঠিক হবে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এডিপিতে প্রকল্প প্রেরণের ক্ষেত্রে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও কাক্সিক্ষত সুফল প্রাপ্তি বিবেচনায় নতুন প্রকল্পের চেয়ে চলমান প্রকল্প যথাসময়ে সমাপ্ত করার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী তিন বছর এডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ ছাড়া প্রকল্প নেয়া ঠিক হবে না। রাজনৈতিক প্রকল্প আগামী এডিপি থেকে বাদ দিতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে বেশি বরাদ্দ রেখে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ কমানো যেতে পারে। আমরা একনেকের বৈঠকগুলোতে দেখি অনেক প্রকল্প অনুমোদন হচ্ছে। এর সবই অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প নয়। অনেক প্রকল্প থাকে অগ্রাধিকারবর্জিত ও কম গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ কমাতে হবে। এমনকি এ ধরনের প্রকল্প আপাতত না নেয়াই ভালো হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, এডিপিতে বরাদ্দ অন্য খাতে কমিয়ে সেই অর্থ করোনা খাতে দেয়া প্রয়োজন। এডিপির বেশির ভাগ প্রকল্পের অর্থ ছাড় স্থগিত করে হলেও করোনা খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। বর্তমানে অর্থ ব্যয় করে হলেও টেস্টিং, আইসোলেশন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো বেশি হতে হবে কর্মসংস্থানমুখী।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের মতে, অর্থের সংস্থান কিভাবে হবে সেটা আগে দেখা দরকার। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরে নেয়ার কথা ভাবতে হবে। তবে প্রকল্প বন্ধও করা যাবে না। এতে করে কর্মসংস্থান থাকবে না। কর্মসংস্থান এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ এখন কর্মহীন। আবার অনেকে করোনাপরবর্তীতে কাজ সঙ্কটে পড়বে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/496193/