১৭ এপ্রিল ২০২০, শুক্রবার, ৬:৩৬

দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা স্বাস্থ্য অধিদফতরের

মোট মৃত্যু ৬০, আক্রান্ত ১,৫৭২; একদিনে সর্বোচ্চ ৩৪১ নতুন রোগী, মৃত্যু ১০; উপসর্গ নিয়ে আরো ৮ জনের মৃত্যু; সন্ধ্যা ৬টার পর সবাইকে ঘরে থাকতে হবে

করোনাভাইরাস সংক্রমণে এবার পুরো বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮ এর ক্ষমতাবলে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঘোষণায় সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ বাইরে যেতে পারবে না বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও নির্দেশনাতে বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে একমাত্র পন্থা জনসাধারণের নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বলে জানানো হয়। জরুরি কোনো কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যদিও সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে এই অনুরোধ করা হচ্ছে মানুষকে। মানুষকে ঘরে রাখা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাফেরা করা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীও কাজ করছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়টির ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিটিতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ঘর থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তিতেও সন্ধ্যা ৬টার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিয়ে সংক্রামক রোগ আইনের ধারা প্রয়োগ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে নির্দেশে।

এসব আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সংক্রমণ রোগ আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচলও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও নির্দেশনাতে বলা হয়েছে। আইইডিসিআরের গতকাল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অন্তত ৪৫টি জেলায় পাওয়া গেছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ইতোমধ্যে ৪৮টি জেলা লকডাউন করেছে প্রশাসন। এর বাইরেও কিছু উপজেলা এবং কিছু অঞ্চলে লকডাউন জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

গতকাল পর্যন্ত ঢাকায় ৫৪৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ২১৪ জন, গাজীপুরে ৫৩ জন, চট্টগ্রামে ৩১ জন, নরসিংদীতে ২৮ জন, মুন্সীগঞ্জে ২১ জন, মাদারীপুরে ১৯ জন, কিশোরগঞ্জে ১৭ জন, কুমিল্লায় ১৪ জন, গাইবান্ধা ও জামালপুরে ১২ জন করে, বরিশালে ১০ জন, গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে ৯জন করে করোনাভাইরাসের রোগী পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আটজন, দিনাজপুর ও ময়মনসিংহে সাতজন করে, চাঁদপুর, নিলফামারী ও রাজবাড়ীতে ছয়জন করে; মানিকগঞ্জ ও শরিয়তপুরে পাঁচজন করে; বরগুনা, নেত্রকোণা, পিরোজপুর ও রাজশাহীতে চারজন করে; ঝালকাঠি, শেরপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে তিনজন করে; ফরিদপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, পটুয়াখালী ও রংপুরে দুইজন করে এবং চুয়াডাঙ্গা, কক্সবাজার, হবিগঞ্জ, খুলনা, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, নোয়াখালী ও সুনামগঞ্জে একজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে।

একদিনে সর্বোচ্চ ৩৪১ নতুন রোগী : আরো ১০ জনের মৃত্যু
একদিনে ১০ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬০ জন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৩৪১ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৫৭২ জন হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা গতকাল বৃহস্পতিবার অধিদফতরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। তার ১০ দিনের মাথায় ঘটে প্রথম মৃত্যু। একদিনে এত বেশি নতুন রোগী আর মৃত্যু বাংলাদেশকে দেখতে হয়নি। গত এক দিনে নতুন করে আর কেউ সুস্থ হয়ে ওঠেননি। এ পর্যন্ত মোট ৪৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

স্বাস্থ্য বুলেটিনে নাসিমা সুলতানা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশ থেকে দুই হাজার ১৩৫টি নমুনা সংগ্রহ হয়েছে, পরীক্ষা করা হয়েছে দুই হাজার ১৯টি। এ সময়ে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সের আছেন একজন। পাঁচজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। তিনজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এই ১০ জনের মধ্যে সাতজন পুরুষ, তিনজন নারী। তাদের ছয়জন ছিলেন ঢাকার বাসিন্দা। বাকি চারজন অন্য জেলার। নতুন যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এ দিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে প্রকাশ করা হয়নি।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ৩৭ জনকে, আর আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৯ জন। বর্তমানে মোট ৪৬১ জন আইসোলেশনে আছেন।

সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ছয় হাজার ৯৭৭টি। তার মধ্যে এক হাজার ৫৫০টি শয্যা রয়েছে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে রয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৭টি শয্যা। এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১৯২টি। ডায়ালাইসিস শয্যার সংখ্যা ৪০টি।

উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু আটজন
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সারা দেশে একটি শিশুসহ আরো মারা গেছেন আটজন। তাদের মধ্যে পটুয়াখালীতে আইসোলেশনে থাকা এ নারী, শেরপুরে একজন ফেরিওয়ালা, চট্টগ্রামে আইসোলেশনে থাকা এক যুবক, ফরিদপুরের নগরকান্দায় এক নারী, জামালপুরের বকশীগঞ্জে একজন, টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক গৃহবধূ এবং কুষ্টিয়ায় এক নারী ও এক শিশু রয়েছে।

কুষ্টিয়ায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টে নারী ও শিশুর মৃত্যু
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ায় করোনা উপসর্গে একজন নারী ও তিন বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে শিল্পী খাতুন নামে ২৮ বছরের এক নারী ১০ দিন ধরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার রাতে তিনি মারা যান। মৃত শিল্পী খাতুন কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে তার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

এদিকে জেলার দৌলতপুর উপজেলায় শাওন নামে তিন বছরের এক শিশু জ্বর ও বমি করতে করতে মারা যায়। বুধবার বেলা ২টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শাওন দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর গ্রামের জুয়েল প্রামাণিকের ছেলে। শিশুটির মৃত্যুর বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, মৃত শিশুটির পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তারপরও সন্দেহ দূর করতে শিশুটির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জে নতুন আক্রান্ত ৫, মোট মৃত্যু ৪
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মুন্সীগঞ্জের মানুষের মধ্যে তোমন একটা সচেতনতা লক্ষ্য করা যায় না। অবাধে চলাফেরা করছে সর্বত্র। এই জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় একজন, টংগীবাড়িতে একজন, লৌহজংয়ে দুইজন ও গজারিয়া উপজেলায় একজন। মোট রোগী ২৪ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় তিনজন, টংগীবাড়িতে সাতজন, লৌহজংয়ে তিনজন, গজারিয়ায় সাতজন, সিরাজদিখানে তিনজন ও শ্রীনগর উপজেলায় একজন। মোট মত্যু হয়েছে চারজনের। যারা হলেন- সদর উপজেলায় একজন, টংগীবাড়িতে দুইজন ও লৌহজংয়ে একজন। মুন্সীগঞ্জ শহরে মঙ্গলবার প্রথম করোনা শনাক্ত হয়েছেন মানিকপুরের এক বৃদ্ধের (৬০)। লুঙ্গি এবং হাফ হাতার ফতুয়া ও স্যান্ডেল পরেই পায়ে হেঁটে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন। এই বৃদ্ধের বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন।

জামালপুরে আক্রান্ত ১৬, মৃত্যু ২
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে আরো একজন ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া গেছে। তার বয়স ৪০ বছর। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে জ্বর ও ঠা-া নিয়ে বাড়ি আসেন। বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জামালপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার আবু সাঈদ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। এ ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। রাতেই করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে এসে জামালপুর সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে জামালপুরে মৃত দুই নারীর নমুনা পজেটিভসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ জনে দাঁড়াল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় একজন, বকশীগঞ্জে দু’জন, দেওয়ানগঞ্জে তিনজন, মেলান্দহে দুইজন, মাদারগঞ্জে তিনজন, সরিষাবাড়িতে একজন এবং ইসলামপুর উপজেলায় চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ইসলামপুরে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

নাসিরনগরে মৃত প্রবাসীর স্ত্রীর পর মেয়ে ও ভাই আক্রান্ত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে করোনায় মারা যাওয়া প্রবাসীর স্ত্রীর পর এবার তার তিন বছরের শিশু কন্যা ও ১৯ বছরের ভাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের মকবুলপুর গ্রামে। গতকাল সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আক্রান্তদের করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। গত ১৪ এপ্রিল করোনার মারা যাওয়া ব্যক্তির পিতা, মাতা, স্ত্রী ও সন্তানের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। ওই দিনই তার স্ত্রীর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। গতকাল তার শিশুকন্যা ও ভাইয়ের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তার মায়ের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো আসেনি। তাদের চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে পাঠানো হয়েছে। গত ৭ এপ্রিল নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়নের মকবুলপুর গ্রামের এক প্রবাসী একই গ্রামের গোকর্ন ইউনিয়নে শ্বশুরবাড়িতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৩৫ বছর বয়সী ওই প্রবাসী গত ১৮ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেন।

বেনাপোলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসা যুবকের বাড়ি ঘেরাও
বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোর সদর হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসা সালমান রহমান নামে এক ব্যক্তির বাড়ি লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য ঘেরাও করে রেখেছে গ্রামবাসী। সালমান রহমান সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে বেনাপোলের নিজ বাড়িতে আসেন। তিনি বেনাপোলের কাগমারী গ্রামের ওহাব আলীর ছেলে। সালমানের বাবা ওহাব আলী জানান, তার ছেলে হাঁপানী ও এজমা রোগী। হঠাৎ করে তার হাঁপানী বেড়ে গেলে যশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা খারাপ দেখে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। গ্রামবাসী জানায়, সালমান রহমান নারায়ণগঞ্জে থাকতো। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসার কারণে তার শরীরে করোনাভাইরাস থাকতে পারে এ জন্য তার বাড়ি লকডাউন করে রাখা হয়েছে। তবে প্রশাসন থেকে তার বাড়ি লকডাউন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খান। সালমানের শরীরে করোনাভাইরাস নেই বলেও জানান তিনি।

সখীপুরে গৃহবধূর মৃত্যু
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া উত্তরপাড়া গ্রামে বুধবার সন্ধ্যায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এক গৃহবধূ (২১) মারা গেছেন। সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মো: আব্দুস সোবহান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি ঘাটাইল উপজেলার গাঢ়বাজার এলাকায়। তিন দিন আগে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন থেকেই তিনি জ¦র, ঠা-া, কাশি, গলা বাথা ও পাতলা পায়খানায় ভুগছিলেন। বুধবার বিকেলে তার নানা তাকে বাবার বাড়ি সখীপুরের কালিয়া উত্তরপাড়ায় নিয়ে আসেন এবং সেখানেই তিনি মারা যান। খবর পেয়ে সাথে সাথে সেখানে একটি মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে তার নমুনা সংগ্রহের জন্য। ঢাকায় নমুনা পরীক্ষার পর জানা যাবে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা।

কালীগঞ্জে একজন চিকিৎসকসহ ১৪ জন আক্রান্ত
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনসহ মোট ১৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ জানান, গত মঙ্গলবার উপজেলার ২১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। বুধবার সন্ধ্যায় পাঁচজনের করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায়। এই পাঁচজনের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হবে। আক্রান্ত পাঁচজনের পরিবারের সদস্যদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে নতুন করে এক ইউপি সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তি ঝালকাঠি শহরসংলগ্ন একটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তিনি এর আগে ওই এলাকায় আক্রান্ত তিনজনের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ১১ এপ্রিল ঝালকাঠিতে প্রথম এক পরিবারের তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রন্ত হন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠিতে ঢাকাফেরত পুলিশের এক এসআই, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বরসহ ২৭৩ জনকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

রাজবাড়িতে সাতজন আক্রান্ত
রাজবাড়ি সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ির পাংশায় ৩৫ বছর বয়সের আরো একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল সাতজনে। তাদের মধ্যে রাজবাড়ি সদর উপজেলার ছয়জন ও পাংশা উপজেলার একজনকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল আরো ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। গতকাল নতুন আক্রান্ত ব্যক্তি গত ১০ এপ্রিল জ্বর ও কাশি নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন।

শরীয়তপুরে আরো একজন শনাক্ত, ১০ বাড়ি লকডাউন
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আরো এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে শরীয়তপুর জেলায় মোট পাঁচজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো। গত বুধবার রাতে আক্রান্ত ওই ব্যক্তির বাড়িসহ পাশ্ববর্তী ১০টি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স ৫৩ বছর। তিনি জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের উত্তর কেবলনগর খানকান্দি এলাকায় থাকেন।

শায়েস্তাগঞ্জে পুলিশ কনস্টেবল হাসপাতালে ভর্তি
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার এক পুলিশ কনস্টেবলকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে প্রচ- শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি মোজাম্মেল হক জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি তিনি করোনায় আক্রান্ত নন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বকশীগঞ্জে আরো একজনের মৃত্যু
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের বকশীগঞ্জে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ৮টায় শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও সর্দি নিয়ে বাবুল মিয়া (৪২) নামে ওই ব্যক্তি নিজ বাড়িতে মারা যান। বাবুল মিয়া বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সূর্যনগর গ্রামের আকরামুজ্জামানের ছেলে। তিনি ১২ এপ্রিল তার কর্মস্থল চট্টগ্রাম থেকে নিজ বাড়িতে ফেরেন। তিনি সেখানে বিভাগীয় কৃষি কার্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন। রাতেই মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ভোরে করোনার উপসর্গ নিয়ে আরো একজনের মৃত্যু হয়। বকশীগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

কুমিল্লায় দুই দিনে চিকিৎসকসহ ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় চিকিৎসক ও এক্সরে টেকনিশিয়ানসহ নতুন করে গত দুই দিনে আরো ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে আরো রয়েছেন আক্রান্ত কুস্তিগীরের মা এবং আক্রান্ত এক নারীর কোলের শিশু। এ নিয়ে কুমিল্লায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। বুধবার একদিনে আক্রান্তের মধ্যে জেলার বুড়িচংয়ে একজন, তিতাসে দুইজন, হোমনায় একজন, দাউদকান্দিতে তিনজন, চান্দিনায় তিনজন, বরুড়ায় একজন ও চৌদ্দগ্রামে একজন। বৃহস্পতিবার দাউদকান্দিতে একজন আক্রান্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্ত চিকিৎসক হলেন- চান্দিনায় জননী মেডিক্যাল সেন্টারে চেম্বার করা এমবিবিএস ডাক্তার। এ ছাড়া একই উপজেলার দত্ত ডায়গনস্টিক সেন্টারের এক্সরে টেকনোলজিস্ট।

ধামরাইয়ে দুইজন শনাক্ত, উপজেলা লকডাউন
ধানরাই (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ঢাকার ধামরাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুইজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য জানান ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা: নূর রিফফাত আরা। তিনি বলেন, ধামরাই থেকে গত ক’দিনে ৫৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে বুধবার পাঠানো নমুনাগুলোর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে দু’জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ধামরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে এসেছিলেন, আর অন্যজন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির একজন স্টাফ। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসন গতকাল ধামরাই উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে।

গোপালগঞ্জে ১০ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জে সাতজন পুলিশ সদস্যসহ নতুন করে আটজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মুকসুদপুর থানার ১০ পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ। অন্য সাতজন হলেন- সদর উপজেলায় তিনজন, টুঙ্গিপাড়ায় তিনজন ও কোটালীপাড়ায় একজন। আক্রান্তদের মুকসুদপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ড, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলা থেকে ২২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ দিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে জেলায় এরই মধ্যে তিনজন নারীর মৃত্যু হয়েছে।

নালিতাবাড়িতে ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত, হাসপাতালসহ ৩০ বাড়ি লকডাউন
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের যক্ষ্মা প্রকল্পের স্বাস্থ্যকর্মী সজীব সূত্রধর (৩১) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাবে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতেন। তিনি গড়কান্দা আনসার ক্যাম্প রোডের একটি মেসে ভাড়া থাকেন। এ দিকে সজীব সূত্রধরের করোনা পজেটিভ আসায় হাসপাতালের স্টাফদের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলা প্রশাসন ওই হাসপাতাল ও মেসসহ আশপাশের ৩০টি বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছে।

নরসিংদীতে একজন চিকিৎসকসহ নতুন ১৮ জনসহ আক্রান্ত ৬২
নরসিংদী সংবাদদাতা জানান, নরসিংদীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নরসিংদী জেলায় নতুন করে একজন চিকিৎসকসহ আরো ১৮ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নরসিংদীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ জন। তাদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মাঝে নরসিংদী সদর উপজেলার ১৩ জন ও রায়পুরা উপজেলার পাঁচজন। আক্রান্তদের মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছর, একজনের বয়স ১৪ বছর। এছাড়া ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ছয়জন ও একজনের বয়স ৯৫ বছর।

পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় আরো একজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জমির মোহাম্মদ হাসিবুস ছাত্তার। নতুন আক্রান্ত হওয়া ৩২ বছর বয়সী এক নারী। তিনি উপজেলার চরতেরটেকিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ওই গ্রামের করোনা আক্রান্ত ষাটোর্ধ বয়সী ব্যক্তির পুত্রবধূ। এনিয়ে এ উপজেলায় তিনজন করোনায় আক্রান্ত হলেন। যাদের দুইজন পুরুষ ও একজন নারী।

পটুয়াখালীতে আইসোলেশনে থাকা নারীর মৃত্যু
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, জ¦র, সর্দি, কাশি, শ^াসকষ্ট নিয়ে পটুয়াখালী হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। করোনা বিষয়ে আইইডিসিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী তার লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নে তার বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা: জাহাঙ্গীর আলম শিপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত বুধবার তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো রিপোর্ট আসেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।

সেনবাগে মৃত ব্যক্তির করোনা সনাক্ত
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের উন্দানিয়া গ্রামে গত রোববার রাতে সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও রক্ত বমিতে মারা যাওয়া আলী আক্কাসের (৪৮) করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। গত বুধবার রাত ১২টায় আলী আক্কাসের করোনা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান।

নাইক্ষ্যংছড়িতে তাবলীগফেরত ব্যক্তি আক্রান্ত
নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে এক ব্যক্তির করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। তিনি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনার পাড়া গ্রামের মৃত মোখলেছৃর রহমানের পুত্র আবু ছিদ্দীক (৬০) বলে জানা গেছে। এই পর্যন্ত নাইক্ষ্যংছড়িতে ৬২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ জনের নেগেটিভ ও একজনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। বাকিদের রিপোর্ট আজ পাওয়া যাবে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। গত কয়েকদিন আগে আবু ছিদ্দীক ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে তাবলীগ জামাত থেকে ফিরেছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

শেরপুরে আরো তিন করোনা রোগী শনাক্ত, জেলা লকডাউন

শেরপুর সংবাদদাতা জানান, শেরপুরে আরো তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তারা হলেন- শেরপুর সদর উপজেলার ফটিয়ামারী গ্রামের জোবেদা বেগম (৬০), ঝিনাইগাতী উপজেলার শারিকালিনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম (২৫) ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ব্র্যাক কর্মী সজিব সূত্রধর (৩০)। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হলেন নয়জন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং প্রতিরোধকল্পে জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব স্বাক্ষরিত আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ১৫ এপ্রিল রাত দশটা থেকে শেরপুর জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। সেই সাথে আক্রান্তের বাড়ি ও সংস্পর্শে আসা লোকজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে এবং তাদের বাড়ির আশপাশের ৪৭টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

জ¦র ও শ^াসকষ্টে ফেরিওয়ালার মৃত্যু : শেরপুর পৌরসভার চাপাতলী মহল্লায় জ¦র, সর্দি ও শ^াসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে গত বুধবার ফেরিওয়ালা লুড্ডু মিয়ার (৩০) মৃত্যু হয়েছে। লুড্ডু মিয়া ওই এলাকার নৈশপ্রহরী গেন্দু মিয়ার ছেলে। তার বাড়ির আশপাশের ১৫০ বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার থেকে লুড্ডু মিয়া জ¦র ও সর্দিতে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার রাত থেকে তার শ^াসকষ্ট শুরু হয়। মোবাইল ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন লুড্ডু। বুধবার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তির রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রামে আইসোলেশনে থাকা যুবকের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনা আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে বাঁশখালীর চেচুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মফিজ আহমেদ (২৮) নামের ওই যুবকের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোরে মফিজ আহমেদের মৃত্যু হয়। তার কিডনিসহ আরো কিছু সমস্যা ছিল। পাশাপাশি তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। গত বুধবার সকালে মফিজকে হাসপাতালে আনা হয়। ওইদিন তার নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজদারহাটের বিআইটিকআইডিতে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

নগরকান্দায় নারীর মৃত্যু, স্বামী ও ছেলে অসুস্থ
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের নগরকান্দায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এক এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তার নাম হাসি বেগম (৩৮)। তিনি উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী গ্রামের হায়দার শিকদারের স্ত্রী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নিজ বাসায় মারা যান। হাসি বেগম গত কয়েকদিন যাবত সর্দি, কাশি, জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন। তার স্বামী হায়দার শিকদার এবং ছেলে আবুল বাশার মিয়াও অসুস্থ বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে তার বাড়িতে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

বদরগঞ্জে ৮০ বছরের বৃদ্ধের করোনা শনাক্ত
রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরো একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াগণ গ্রামের বৃদ্ধ। এ নিয়ে এই কলেজের পিসিআর ল্যাবে ৯২১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। রংপুর সিভিল সার্জন হিরোম্ব কুমার রায় জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কাশি সর্দি নিেেয় ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে নমুনা পাঠানো হয়েছিল ল্যাবে আশেপাশের সবারই লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জে তিন চিকিৎসক ও দুই নার্স আক্রান্ত, দুই হাসপাতাল লকডাউন
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন চিকিৎসক ও দুইজন নার্স রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় সাত চিকিৎসকসহ মোট ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দু’জন চিকিৎসক ও একজন নার্স, তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক ও একজন রোগী, তার বাড়ি ইটনায়। কটিয়াদীতে যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি একজন নার্স। এই নার্স করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। তার বাড়ি কটিয়াদীতে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/496196/