১৬ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৩:৫৭

করোনায় স্থগিত জনশুমারি

পরিকল্পনা ছিল মার্চে শুরু করা -ডিজি বিবিএস

করোনার কারণে জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ মার্চে শুরু করা গেল না। এখন এপ্রিলও যাই যাই করছে। কিন্তু প্রকল্পের জনবল মাঠে নামতে পারছে না ভীতিকর পরিস্থিতির কারণে। কোভিড-১৯ এর থাবায় অচল বিশ্ব। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম স্তব্ধ করে দিয়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস। দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রমটিও বাধাগ্রস্ত। প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে করোনায় ঘোষিত লকডাউনের স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করছে এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের কাছে ফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, করোনার কারণে মাঠে যাওয়া যাচ্ছে না। মূল কাজ হলো মাঠ পর্যায়ে ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা। যেটি এখন করোনার কারণে স্থগিত। তবে প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করছে সার্বিক পরিস্থিতির ওপর। প্রাপ্ত তথ্য মতে, পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী আদমশুমারিকে জনশুমারি হিসাবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি জিরো আওয়ারকে শুমারির রেফারেন্স পয়েন্ট হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাবে দেশব্যাপী শুমারির মূল গণনা কার্যক্রম ২ থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ বছর অন্তর এই জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে এই শুমারি হয়েছে। এখন আগামী ২০২১ সালের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি সারা দেশের মানুষ ও বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসীদের গণনার সময় ধরে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছিল বিবিএস। এটি হবে ষষ্ঠ জনশুমারি। সে লক্ষ্যে মার্চে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল। করোনার কারণে সে কার্যক্রম শুরুই করা যায়নি। গত বছর অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১ হাজার ৭৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ প্রকল্প অনুমোদন করে। এই প্রকল্পের আওতায় এবারই প্রথম বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী ও বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিকদের গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি জনশুমারি গণনা কাজের উদ্বোধন করবেন।

এবারের শুমারিতে প্রথমবারের মতো তথ্য সংগ্রহের জন্য মাল্টিমোড বা একাধিক ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করার কথা। এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে মোবাইল অ্যাপ, ওয়েব অ্যাপ, পিক অ্যান্ড ড্রপ, পেপার বেজড, কল সেন্টার ইত্যাদি। এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো সীমিত আকারে ই- সেন্সাসও পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে ব্যুরোর। এ শুমারিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিক এবং বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদেরও গণনা করা হবে। জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের পরিচালক জাহিদুল হক সরদার নয়া দিগন্তকে জানান, গ্লোবাল সমস্যায় বিশ্বের মতো আমরাও আক্রান্ত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা মাঠে নামতে পারব না। তবে এ পর্যন্ত একটা অপারেশনাল কাজ শেষ হয়েছে। তার মধ্যে হলো, ম্যাপিং, লিস্টিং এরিয়া, জিও কোড আপডেট ইত্যাদি। তবে আমাদের এখনো হাতে বেশ সময় আছে। আমাদের মতো আগামী বছর যারা এই জনশুমারির কাজ করবে সার্কভুক্ত দেশ ভারত ও নেপাল। আর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই কাজ করছে। তাদের এখন অনলাইনে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। মাঠ পর্যায়ের কাজও তাদের আছে।

জনশুমারি ও গৃহগণনা কাজের ব্যাপারে বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এখন তো কিছু করতে পারছি না। মাঠে কোনো কাজ হচ্ছে না বা করা যাবে না। যে পর্যন্ত করোনার প্রভাব থেকে উত্তরণ না ঘটে। তিনি বলেন, এটাতে অফিসিয়ালি কোনো কাজ নেই। সব কাজই মাঠে। চলতি মাসেই আমাদের মাঠে নামার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আমরা মাঠে নামতে পারছি না। পরিকল্পনা ছিল মার্চে মাঠে নামতে পারলে রোজার আগেই মাঠপর্যায়ের কাজ শেষ করার। প্রস্তুতির কিছু কাজ সবাইকে নিয়ে মাঠে করার কথা ছিল, সেটা আর হলো না এই করোনার কারণে। প্রকল্পের সময় বাড়বে কিনা জানতে চাওয়া হলে তাজুল ইসলাম জানান, এখনো অনেক সময় আছে। এখন তো প্রায় আট মাস। কতটা উত্তরণ ঘটতে পারে, মাঠে কখন যেতে পারব, তার উপর নির্ভর করছে। ধরেন পরিস্থিতির কারণে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা যদি মাঠে যেতে না পারি তাহলে তো সময়মতো করা যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতির উপর এটা নির্ভর করছে এখন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/495951/