বেতনের দাবিতে রাজধানীর বাড্ডায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ : নয়া দিগন্ত -
১৬ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ৩:৫৬

বকেয়া বেতনের দাবিতে আবারো পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ

করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে পোশাক শ্রমিকরা আবারো রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে। গতকাল বুধবার বকেয়া বেতনের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিকরা।

গতকাল সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখানে সুপার সাইন গার্মেন্ট লিমিটেডের একটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকদের দাবি, দুই মাস ধরে বেতন ও ওভারটাইম পাচ্ছেন না তারা। এ সময় বেশ কিছু শ্রমিক রাস্তায় বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় অনেকের মাস্ক পরা ছিল না। আবার তারা দূরত্বও বজায় রাখেনি। একপর্যায় পুলিশ এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের কর্মকর্তারা মালিকপক্ষের সাথে বৈঠক করেন।

দক্ষিণখান থানার ওসি জানান, মালিক পক্ষ বেতন ও ওভারটাইম দেয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, দুই পক্ষের আলোচনা হয়েছে। শ্রমিকরা গতকালই বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়েছিলেন। মালিকরা তা দিতে পারছিল না। পরে বেতনের আশ্বাস পেয়ে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দেয়।

অন্য দিকে বকেয়া বেতন ভাতার দাবিতে বাড্ডায় সারা ফ্যাশন নামে একটি গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। মালিকপক্ষ ২৫ তারিখের পর বেতন দেবে জানালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে ২০ তারিখের মধ্যে বেতন দেয়ার আশ্বাসে রাস্তা ছাড়েন শ্রমিকরা।

এ দিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে মিরপুরের দারুসসালাম এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকরা। একপর্যায় পুলিশ এসে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। পরে আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দেয়।

এ ছাড়া ঢাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া এলাকায় ১৬-১৭টি গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করেন বলে জানান গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার। তিনি বলেন, বকেয়া বেতন, ছাঁটাই ও লে-অফের কারণে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। মালিকরা শ্রমিকদের ছাঁটাই ও বেতন না দিয়ে সড়কে নামানোর মাধ্যমে সরকারের সাথে আরো সুবিধা নিতে দরকষাকষির পাঁয়তারা করছে বলে মনে করেন তিনি।

গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন ভেঙে গত কয়েক দিন ধরেই গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতন ভাতাসহ বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে আসছে। তৃতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবারও ওই দাবিতে গাজীপুরের ভোগড়া, শরীফপুর, বোর্ড বাজার, সাইনবোর্ড, ছয়দানা, টঙ্গী, তিনসড়ক, লক্ষ্মীপুরা, সালনা, মেম্বারবাড়ি, শ্রীপুর উপজেলার টেপিরবাড়ী, বাঘের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে পৃথকভাবে বিক্ষোভ করেছে অন্তত ২৫টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম, আন্দোলনরত শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের লক্ষ্মীপুরা ও তিনসড়ক এলাকার স্টাইল ক্র্যাফ্ট ও ইন্ট্রাম্যাক্স পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের মার্চ মাসের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কারখানার গেটে জড়ো হতে থাকে। শ্রমিকরা কারখানার গেটে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করলেও মালিক পক্ষের সাড়া না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কের ওপর এসে পৃথকভাবে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় শ্রমিকরা সড়কের পাশ থেকে বিদ্যুতের খুঁটি এবং গাছ ও কাঠের টুকরো টেনে সড়কের ওপর এনে ব্যারিকেডের সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

এ দিকে একই দাবিতে মহানগরের সালনাস্থিত পেনোইন গ্রুপের শ্যামলী গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। কারখানার ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম শাহীন জানান, এ কারখানায় প্রায় ২৭০০ শ্রমিক কাজ করে। প্রতি মাসের নির্ধারিত ১০ তারিখে শ্রমিকদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করায় শ্রমিকদের মার্চ মাসের পাওনাদি পূর্ব নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনাদি হাতে হাতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। ওই সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার সকালে কারখানার গেটের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকরা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।

এ দিকে একই গ্রুপের গাজীপুর সদরের বাঘের বাজার এলাকাস্থিত অপর পোশাক কারখানার শ্রমিকরা এ দিন একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে বেতন পরিশোধের তারিখ ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছেন এ কারখানার ম্যানেজার মিন্টু।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বকেয়া বেতনের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড ও আতুরার ডিপো এলাকায় দু’টি গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে। গতকাল বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ নুরুল হুদা নয়া দিগন্তকে বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পোশাক শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। পরে মালিক পক্ষ ১৮ এপ্রিল বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে সকাল ১০টার দিকে তারা অবরোধ তুলে নেয়। মীর মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ওই কারখানায় দুই হাজারের মতো শ্রমিক রয়েছে। বুধবার তাদের বেতন দেয়ার কথা ছিল। সে জন্য সকাল থেকে তারা কারখানায় জড়ো হয়েছিল। কিন্তু মালিক পরে বেতন দেয়ার কথা বললে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। অন্য দিকে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার আতুরের ডিপো এলাকায় ইত্যাদি গার্মেন্ট নামে আরেকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে।

শ্রমিক ছাঁটাইয়ের দাবি মিথ্যা বানোয়াট উসকানিমূলক : করোনার মাঝেই তৈরিপোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন বলে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন যে দাবি তুলেছে তা মিথ্যা, বানোয়াট এবং উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেছে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এমন দাবির তীব্র নিন্দা জানিয়ে উল্টো করোনার এ সময়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটি। তারা জানতে চান, ছুটি ঘোষণার পর শ্রমিকরা দলে দলে ঢাকা ছাড়ার সময় শ্রমিক নেতারা কেন চুপ ছিল?

করোনাভাইরাসের মতো মহামারীতে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় এমন ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে গত ১২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে দাবি করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএফ), বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস)। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিজিএমইএর সচিব কমডোর মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক (অব:) সই করা চিঠিতে এর প্রতিবাদ জানায় বিজিএমইএ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/495957