১৩ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৪:৫১

এক দিনে সর্বোচ্চ ১৩৯ রোগী শনাক্ত, মৃত ৪

দেশে মোট আক্রান্ত ৬২১ জন, মৃত্যু ৩৪; গাজীপুর সিভিল সার্জনসহ ১৭০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে; ৩৫ জেলায় ছড়িয়েছে করোনা; উপসর্গ নিয়ে আরো ১৩ জনের মৃত্যু; বরিশাল, লক্ষ্মীপুর ও সুনামগঞ্জ জেলা লকডাউন

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১৩৯ জন রোগী নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত এক দিনে এটিই সর্বোচ্চসংখ্যক শনাক্ত রোগী। এই নিয়ে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৬২১ জন। এ সময়ে মারা গেছেন আরো চারজন। মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৪ জন। এ দিকে গাজীপুরে সিভিল সার্জনের কার্র্র্যালয়ের এক নাইটগার্ডসহ ১১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় সিভিল সার্জনসহ ১৭০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। গতকাল লকডাউন করা হয়েছে বরিশাল, লক্ষ্মীপুর ও সুনামগঞ্জ জেলা। এ ছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে শিশুসহ আরো মারা গেছেন ১৩ জন। এর মধ্যে ঢাকায় একজন দন্তচিকিৎসক, সাভারে এক শিশু, বরগুনায় দু’জন, চাঁদপুরে একজন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে একজন, নারায়ণগঞ্জে দু’জন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে একজন, কুষ্টিয়ায় একজন, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে একজন, ফরিদপুরে একজন ও রাজবাড়ীতে একজন রয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে মোট এক হাজার ৩৪০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষার দিক দিয়ে এই সংখ্যাটিও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গত মৃত চারজনের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা। মৃতদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মধ্যে দুইজন, ৬০ বছর বয়সের মধ্যে একজন এবং ৭০ থেকে ৮০ বছর বয়সের মধ্যে একজন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে তিনজন। এ নিয়ে সর্বমোট সুস্থ হয়েছে ৩৯ জন। যারা সুস্থ হয়েছে তাদের মধ্যে দুইজন মহিলা এবং একজন পুরুষ। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন, যিনি সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। নতুন করে চারটি জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩৫টি জেলায় শনাক্ত হলো। গতকাল রোববার দুপুরের পর নিয়মিত অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এ সব তথ্য জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: সানিয়া তাহমিনা। অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকই রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। অবশিষ্ট ৩৫ শতাংশ ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে আক্রান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামে বিভাগে রয়েছে ছয় শতাংশ এবং অবশিষ্ট করোনা আক্রান্ত অন্যান্য বিভাগের।

অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা বলেন, গতকাল পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল যে নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে এগুলোর মধ্যে ঢাকায় ৬৬১টি এবং ঢাকার বাইরে ৪৯০টি পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে বলে বেশি পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি দুগ্ধদানকারী অথচ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এমন মা সম্পর্কে বলেন, মা আক্রান্ত হলেও শিশুকে বুকের দুধ পান করানো যাবে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন তথ্য নেই যে, বুকের দুধের মাধ্যমে মায়ের কাছ থেকে শিশুর দেহে এসেছে। আবার মা আক্রান্ত হলেও জরায়ুতে ভাইরাস যায় না অথবা সদ্যজাত শিশু আক্রান্ত হয়ে জন্মায় না। শিশু আক্রান্ত হলে পরে অসতর্কতার কারণে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

রাজধানীতে দন্তচিকিৎসকের মৃত্যু : জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ফেরদৌস রহমান নামে এক ডেন্টাল সার্জন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ। মারা যাওয়ার পর জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান তার নমুনা সংগ্রহ করেছে। ফেরদৌস রহমানের চিকিৎসক বন্ধুরা জানান, তিনি এক সপ্তাহ ধরেই জ্বরে ভুগছিলেন, পরে কাশি ও গলাব্যথা শুরু হয়। জ্বর কমে গেলেও কাশি, গলা ব্যথার সাথে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে করোনা পরীক্ষার জন্য বলা হলেও তিনি তাতে রাজি হচ্ছিলেন না, বাসাতেই আইসোলেশনে ছিলেন। গতকাল রোববার তার অবস্থার অবনতি হলে তিনি বাসাতেই মারা যান।

গাজীপুর সিভিল সার্জনসহ ১৭০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে সিভিল সার্জনের কার্র্র্যালয়ের এক নাইটগার্ডসহ গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ২৩ জন। ফলে গতকাল ভোরে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: খায়রুজ্জামান ও তার অফিসের ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৭০ জন ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। ডা: খায়রুজ্জামান জানান, শনিবার গাজীপুরের ১১ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে তার অফিসের নাইটগার্ডও রয়েছেন। ওই নাইটগার্ড কয়েক দিন পূর্বে তার নিজ বাড়ি কাপাসিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে ঢাকায় পাঠানো হয়। গত শনিবার নমুনার রেজাল্ট পজিটিভ আসে। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

চাঁদপুরে এক ব্যক্তির মৃত্যু, ১০টি বাড়ি লকডাউন
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ফয়সাল নামে ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে তার দাফন সম্পন্ন হয়। রাতেই তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার শ্বশুরের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে এবং আশপাশের ১০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

জীবননগরে নারীর মৃত্যু, ৪টি বাড়ি লকডাউন
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের মৃত লতিফ হোসেনের স্ত্রী শনিবার রাতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। ওই গ্রামের চারটি বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। কিছুদিন আগে অসুস্থ অবস্থায় ওই নারী মহেশপুর উপজেলার তালসাড়ি গ্রামে ছেলের বাড়িতে ছিলেন। পরে জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ বসুতিপাড়ায় তার মেয়ের বাড়িতে যান। গত শনিবার রাতে সেখানে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা বসুতিপাড়ায় লাশ দাফন করতে না দিলে তার নিজ গ্রাম জীবননগর খয়েরহুদায় পুলিশের হেফাজতে দাফন করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মৃতের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে ২ জনের মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন মাসদাইর এলাকার রুম্মন বাবু ও সস্তাপুর এলাকার মোখলেছুর রহমান। এ দিকে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা: ইমতিয়াজ করোনাক্রান্ত হওয়ায় সিভিল সার্জনের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন ডা: আসাদুজ্জামান। এর আগে নারায়ণগঞ্জের করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও করোনায় আক্রান্ত হন। আক্রান্ত দু’জনই আইসোলেশনে আছেন।

টঙ্গীবাড়িতে হার্ট অ্যাটাকে মৃত ব্যক্তির করোনা পজিটিভ
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার মান্দ্রা গ্রাম গতকাল রোববার লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে মারা যাওয়া আব্দুল হামিদ শেখকে (৭০) শুক্রবার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার মান্দ্রা গ্রামে দাফন করা হয়। করোনা লক্ষণ গোপন রেখে মারা যাওয়ার কারণ হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। তারপরও নারায়ণগঞ্জে মারা যাওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসন দাফনের আগে লাশের নমুনা সংগ্রহ করে শনিবার পরীক্ষার জন্য আইইডিসিয়ারে পাঠায়।

লক্ষ্মীপুরও লকডাউন ঘোষণা
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস রোধে লক্ষ্মীপুরেও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ২টার দিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্রপাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৩ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ লকডাউন কার্যকর করা হবে।

সাভারে শিশুর মৃত্যু, বাড়ি লকডাউন
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভার পৌর এলাকার ছায়াবিথি মহল্লায় গতকাল রোববার সকালে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে এক শিশুর (১৩) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুর বসবাসরত বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। মৃত্যুর পর শিশুটির শরীর থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বরগুনায় একজনের মৃত্যু
বরগুনা ও বামনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের গোলাঘাটা গ্রামের আবদুল লতিফ (৬০) নামের এক ব্যক্তি গত শনিবার বিকেল জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। রামনা ইউনিয়নের খোলপটুয়া বাজারে তার ওষুধের দোকান ছিল এবং তিনি একজন গ্রাম্য ডাক্তার। সিভিল সার্জন ডা: হুমায়ূন শাহিন খান জানিয়েছেন, মৃতের নমুনা সংগ্রহরে জন্য স্বাস্থকর্মী পাঠানো হয়েছে। এ দিকে বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালে সদ্য ঢাকাফেরত ৬০ বছর বয়সী ও নারায়নগঞ্জফেরত ৩৫ বছর বয়সী দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: সোহরাব হোসেন। শনিবার সন্ধ্যায় প্রাপ্ত রিপোর্টে তাদের দু’জনেরই করোনা পজিটিভ এসেছে।

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের দু’টি পরিবারকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলেছে প্রশাসন। উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলবানুর নতুন বাড়ির জামাল এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মালেক ড্রাইভারের বাড়ির আবদুল মালেকের দুই ছেলে গত শনিবার ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই দুই পরিবারকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়।

নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রামণ রোধে লকডাউন করা নীলফামারীতে আরো এক ছাত্রকে (১৭) আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় ওই ছাত্রের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এ নিয়ে জেলাতে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল তিনজন।

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে একজন নারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল রোববার সকালে ওই নারীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আসে। করোন সন্দেহে এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ থেকে ১৮১ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় এবার বাবার পরে ১২ বছরের মেয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: শাহাদাত হোসেন। এর আগে গত ৯ এপ্রিল তিতাস উপজেলার বিরামকান্দি গ্রামের ওই মেয়ের বাবা আক্রান্ত হন। তিনি ঢাকায় চালকলে কাজ করতেন। এ দিকে শনিবার তিতাসের মৌটুপি গ্রামের ৩৫ বছরের এক কুস্তিগীর করোনায় আক্রান্ত হন। এ নিয়ে কুমিল্লার সাতজন আক্রান্ত হলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় মারা যাওয়া ৪০ বছর বয়সী নারী এবং নাসিরনগর উপজেলায় মারা যাওয়া ৩৫ বছর বয়সী প্রবাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। গত ৯ এপ্রিল ভোরে নারায়ণগঞ্জ থেকে আখাউড়ায় আসা ওই নারী এবং গত ৭ এপ্রিল রাতে নাসিরনগরে মালয়েশিয়া প্রবাসী ওই যুবক মারা যান। গতকাল রোববার সকালে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার রেইনা এবং নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অভিজিৎ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠিতে ছয় মাসের শিশুসহ একই পরিবারের তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে আইইডিসিআর থেকে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে তাদের করোনা পজেটিভ আসে। তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ও ছয় মাসের শিশু রয়েছে। ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা: শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনজনই গ্রামের বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় একটি গ্রামকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।

মণিরামপুরে স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজেটিভ : মণিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের মণিরামপুরে এক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। গত ৮ এপ্রিল তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর আগে এক নার্সসহ সাতজনের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছিল। পরীক্ষায় ছয়জনের নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী জানান, প্রাথমিক পর্যায় স্বাস্থ্যকর্মীর এলাকা লকডাউন করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা লকডাউন : সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলায় সুনামগঞ্জ জেলা অবরুদ্ধ বা লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে গঠিত জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে লকডাউন ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। গতকাল রোববার বিকেলে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিকেল ৫টা থেকে এই লকডাউন কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

কুড়িগ্রামে একজনের মৃত্যু, পরিবার হোম কোয়ারেন্টিনে : কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ এলাকায় জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আজিজার রহমান নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ওই ব্যক্তির পরিবারের অন্য সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি মৃত আজিজার রহমানসহ তার পরিবারের সব সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত শনিবার সকালে ওই ব্যক্তি মারা যান। তার ছেলে সম্প্রতি গাজীপুর থেকে ফিরেছেন। নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবু বক্কর সিদ্দিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইসলামপুরে গৃহবধূর মৃত্যু করোনায় : ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের ইসলামপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে গত শুক্রবার উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভারচর গ্রামের মোফাজ্জল মিয়ার স্ত্রী আসমা বেগম (২৮) মারা গেছেন। মৃত আসমার শরীর থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার এ এ এম আবু তাহের জানান, আসমার শরীরে করোনার পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এ কারণে ওই গ্রামের ৪০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে রোববার পর্যন্ত জেলায় মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেসনে চারজন ও হোম আইসোলেসনে দু’জন রয়েছেন।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা মেডিক্যাল কলেজে (খুমেক) প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার শনাক্ত করোনা আক্রান্ত রবিউল ইসলাম (৩০) যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্যকর্মী। গত ৭ এপ্রিল খুমেকে পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন মেশিন চালু করার পর এই প্রথম কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হলেন। এ পর্যন্ত খুলনা মেডিক্যাল কলেজে খুলনা বিভাগের ১৫৯ জনের স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল পরীক্ষা করা হয় ৪৭ জনের।

পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর দুমকিতে করোনায় আরো একজন আক্রান্ত হয়েছেন। তার নাম খাদিজা বেগম। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত দুলাল চৌকিদারের বোন। গত ৯ এপ্রিল দুলাল করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুমকির নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। এর পরে ওই পরিবারের ৯ জনের করোনার পরীক্ষা হলে আটজনের নেগেটিভ ও একজনের রিপোর্ট পজেটিভ পাওয়া যায়। পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শিপন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কুষ্টিয়ায় আইসোলেশনে গৃহবধূর মৃত্যু : কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ৪৩ বছর বয়সী এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয়। ওই গৃহবধূ জেলার মিরপুর উপজেলার আমলা মাহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত ১০ এপ্রিল করোনা উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গেলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, গত শুক্রবার সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গ নিয়ে ওই গৃহবধূকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

রামেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে একজনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে এক রোগী পালিয়েছেন। তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ছিল। শনিবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই সন্দেহভাজন রোগী। পরে তাকে হাসপাতালের শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে রাখা হয়। সেখান থেকেই তিনি পালিয়ে যান। এ দিকে রাজশাহীতে করোনা সংক্রমিত সন্দেহে নারীসহ তিনজনকে সংক্রামক ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালের আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে রামেক হাসপাতালে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে করোনা চিকিৎসক টিমের প্রধান অধ্যাপক ডা: আজিজুল হক আজাদ এসব তথ্য জানান। অন্য দিকে শনিবার রামেক হাসপাতালে নওগাঁ থেকে চিকিৎসা নিতে এসে কৃষ্ণ নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি নিয়মিত মদপান করতেন। সে কারণে তার শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তবে সন্দেহভাজন হওয়ায় রোববার তারও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

ফরিদপুরের সদরপুরে কৃষকের মৃত্যু : ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাদের মোল্লা (৫৩) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সদরপুর উপজেলার আকটেরচর ইউনিয়নের আকট কালিখোলা গ্রামের করিম মোল্লার ছেলে। গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান তিনি। তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে গতকাল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওমর ফয়সাল বলেন, তার শরীরে জ্বর, গলা ব্যথা ও কাশি ছিল না। তবুও করোনা পরীক্ষার জন্য তার শরীর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ইতঃপূর্বে তিনি একাধিকবার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম মৃত্যু সাতকানিয়ায়
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয়েছে সাতকানিয়ায়। উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইছামতি আলীনগর এলাকায় গত ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে ওই ব্যক্তি মারা যান। মৃত্যুর দিন তার করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামের বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়। গত শনিবার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা: হাসান শাহরিয়ার কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনা সংক্রমণের বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পুরো উপজেলা জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বরিশাল জেলা লকডাউন
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল জেলাকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এ ঘোষণা দেন বরিশালের জেলা প্রশাসক। তিনি জানান, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই লকডাউন কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে অন্য জেলা থেকে কেউ বরিশালে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার এ জেলা থেকে কেউ বাইরেও যেতে পারবে না। তবে জরুরি শিশুখাদ্য, ওষুধের দোকান, অ্যাম্বুলেন্স, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিসের সেবা লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

রাজবাড়ীতে বৃদ্ধের মৃত্যু
রাজবাড়ী সংবাদদাতা জানান, রাজবাড়ীতে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সীতানাথ দাস (৫৮) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল হরিসভা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তার করোনা নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তার পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলা সিভিল সার্জন ডা: নুরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সবগুলো উপসর্গ নিয়েই সীতানাথ দাসের মৃত্যু হয়েছে। যে কারণে তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/495395/