ছবি: গার্ডিয়ান
১৩ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ৪:৫০

কাজ বন্ধ : দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ

বাসা ভাড়া ও খাবার নিয়ে প্রধান দুশ্চিন্তা

রাজধানীতে দ্রুতি পরিবহনের হেলপারের কাজ করতেন আবুল। ২৬ মার্চ থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় তারও কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় গ্রামের বাড়িতেও যেতে পারেননি। এখন নিরুপায় হয়ে গাবতলীতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার।

রোববার তিনি যুগান্তরকে বলেন, জীবনে কখনও এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। হরতাল হলেও মাঝেমধ্যে গাড়ি চলেছিল। কিন্তু এখন একেবারেই সব কিছু বন্ধ। কেউ টাকা ধারও দিচ্ছে না। আশপাশের লোকজনের কাছে হাত পেতে কোনো রকমে দিন পার করছি।

আবুলের মতো একই অবস্থা রিকশাচালক ঠাণ্ডু মিয়ারও। জামালপুর থেকে এসে মিরপুর এলাকায় রিকশা চালান তিনি। করোনার আগে যা আয়-রোজগার হতো এতে ভালোভাবেই চলত তার সংসার। গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার। এখন রোজগার প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে।

এ অবস্থায় নিজের খাওয়া, ঘরভাড়া দিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। এ রকম অবস্থা ঢাকার সব নিম্নআয়ের মানুষের। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দুর্বিষহ দিন পার করছেন তারা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কথা বলে জানা গেছে এ করুণ চিত্র।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম রোববার যুগান্তরকে বলেন, করোনার কারণে সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। তাই নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সরকার ত্রাণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে।

এসব স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রম হলেও আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অর্থনীতি পুনর্জীবন কার্যক্রম গ্রহণ করছি। যাতে মানুষের হাতে কাজ থাকে, কেউ না খেয়ে না থাকে। করোনার কারণে দেশের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিআইজিডির মাধ্যমে একটি জরিপ করা হচ্ছে।

তারপরই আমরা স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদে কর্মসূচি থাকবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। তবে এ দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় একটি বাসায় কাজ করছেন হনুফা বেগম। তার স্বামী রিয়াজুল ভ্যান চালাতেন। এক ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে।

দু’জনের আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু করোনার কারণে হনুফা ও তার স্বামীর কাজ বন্ধ হয়েছে। এখন তাদের টিনশেড ঘরের ভাড়া ৬ হাজার টাকা কোথা থেকে আসবে সেই চিন্তায় ঘুম নেই তাদের।

ঘরের খাবারও শেষ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণও পাননি। হনুফা বলেন, জানি না সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে। বাড়ির মালিককে ভাড়া মাফ করার কথা বলেছি। কিন্তু তিনি বলেছেন, ভাড়া না নিলে তারও মাস চলবে না। তিনিও নিরুপায়।

বনশ্রী এলাকায় ভ্যানে করে এনার্জি সেভিং বাল্ব বিক্রি করতেন আনোয়ার হোসেন। কুড়িগ্রাম থেকে এসে এখানে ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

কিন্তু ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। কীভাবে বাড়ি ভাড়া দেবেন এবং কী খাবেন তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

একই অবস্থা আগারগাঁওয়ের শাক বিক্রেতা ফেলানী বেগমের। বিভিন্ন স্থান থেকে কচু শাক তুলে এনে সকাল বেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর পাশে রাস্তায় বিক্রি করতেন। যারা সকালে হাঁটতে আসতেন তারা সেই শাক কিনে নিতেন। কিন্তু আর কেউ হাঁটতেও আসেন না।

ফলে তার শাক বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ত্রাণের আশায় প্রতিদিন বসে থাকেন রাস্তায়। কোনোদিন ভাগ্যে ত্রাণ জুটলেও বেশিরভাগ দিনই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে।

কথা হয়, সিএনজি চালক কামাল হোসেনের সঙ্গে। স্ত্রী-সন্তানদের কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়েই সিএনজি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন তিনি। তবে গলির ভেতরেই বেশি থাকছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২শ’ টাকা আয় হয়েছে তার।

এ টাকা দিয়ে কী করবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি জানান, গলিতে মানুষ রিকশায় চড়ছে। সিএনজি নিচ্ছে না। মেইন রাস্তায় পুলিশের কারণে যেতে সমস্যা হচ্ছে। তবুও ফাঁকফোকর দিয়ে চালাচ্ছি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/297808/