১৫ মার্চ ২০১৭, বুধবার, ১২:১১

নিহতেরা জোড়া খুনে জড়িত: পুলিশ

আটকের পর মেহেরপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৪

কুষ্টিয়া অফিস ও মেহেরপুর সংবাদদাতা

মেহেরপুর সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের দুই ব্যক্তি একসঙ্গে খুন হন এক সপ্তাহ আগে। ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোনাপুর গ্রামের দুই যুবকসহ চারজনকে গত সোমবার ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর সোমবার রাতেই মেহেরপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চারজনই নিহত হয়েছেন।
নিহত যুবকেরা হলেন সোনাপুর গ্রামের মশিউর মালিথার ছেলে সবুজ মালিথা ওরফে সাদ্দাম (২৫), রশোময় কর্মকারের ছেলে রমেশ কর্মকার (২২), পাশের পিরোজপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে কামরুজ্জামান কানন (২২) ও টুংগী গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে সোহাগ ইসলাম (২১)। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ প্রত্যেকের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
নিহত চার যুবকই চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, চারজনই ঢাকায় নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। জোড়া খুনের ঘটনার আগে থেকেই ঢাকায় ছিলেন তাঁরা।
মেহেরপুরের পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমবার ঢাকা থেকে চার যুবককে আটক করে মেহেরপুরে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা স্বীকার করেন, ৫ মার্চ সোনাপুর গ্রাম থেকে আবদুল মজিদ ও আসাদুল ইসলাম নামের দুজনকে অপহরণের পর সেদিন রাত দেড়টার দিকে তাঁদের হত্যা করা হয়। এরপর সোমবার রাতে এই চারজনের সহযোগীদের ধরতে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে অভিযানে বের হয় পুলিশ। রাত আড়াইটার দিকে মেহেরপুর-কোমরপুর সড়কের নূরপুর গ্রামের মাঠের মধ্যে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং আটক যুবকদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় আটক চারজন পালানোর চেষ্টা করেন। ১৫-১৬ মিনিট বন্দুকযুদ্ধ চলার পর সন্ত্রাসীদের গুলিতে এই চারজন গুলিবিদ্ধ হন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। বন্দুকযুদ্ধে সাত পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১টি রিভলবার, ১টি কাটারাইফেল, ১১টি হাতবোমা, ২টি ছোরা ও ২টি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবু এহসান জানান, সোমবার দিবাগত রাত চারটার দিকে গুলিবিদ্ধ চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। তবে এর আগেই তাঁরা মারা যান।
মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় ৭ মার্চ নিহত আবদুল মজিদের ছেলে একটি হত্যা মামলা করেন। নিহত যুবকেরা এই মামলার আসামি ছিলেন না।
গতকাল দুপুরে সোনাপুর গ্রামে নিহত সবুজ মালিথার বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় তাঁর মা আকলিমা খাতুনকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে দুই মাস আগে ঢাকায় যান। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গত বছর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পর থেকে এলাকায় বিরোধ চলছিল। সবুজ এক ইউপি সদস্য প্রার্থীর পক্ষে ভোটের কাজ করেছিলেন। এই ভোটই ছেলের জীবনে কাল হলো।
একই গ্রামের বাসিন্দা নিহত রমেশের বাবা রশোময় কর্মকার বলেন, তাঁর ছেলে বিদেশে যেতে তিন মাস আগে পাসপোর্ট করেন। দুই মাস আগে ঢাকায় গিয়ে নির্মাণশ্রমিকের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাঁকে কেন জোড়া খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
পিরোজপুর গ্রামের কামরুজ্জামানের বাবা আবুল কালামও বলেন, দুই মাস আগে তাঁর ছেলে ঢাকায় যান। সেখানে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এর মধ্যে আর বাড়ি আসেননি। জোড়া খুনের দিন কামরুজ্জামান ঢাকাতেই ছিলেন।
টুংগী গ্রামের সোহাগের মা রওশন আরাও বলেন একই কথা। তাঁর ছেলে কয়েক মাস আগে ঢাকায় গিয়ে টাইলস মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন।
তবে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোহাগ ও কামরুজ্জামান এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। তাঁদের সহযোগী হিসেবে রমেশ ও সবুজ কাজ করতেন। জোড়া খুনের দিন তাঁরা এলাকায় ছিলেন।
পুলিশ সুপার প্রথম আলোকে বলেন, নিহত যুবকদের জোড়া খুনে ব্যবহার করা হয়েছে। কীভাবে, কারা ব্যবহার করেছে, কী উদ্দেশ্য ছিল, আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা গেলে সেসব জানা যাবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1108435