৩১ মার্চ ২০২০, মঙ্গলবার, ১২:১১

তৃতীয় নয়ন

বিপদ ও বিভ্রান্তি, হুজুগ ও হাঙ্গামা

এবার করোনা বিপর্যয় বাংলাদেশে দেখা দিতে-না-দিতেই মাস্ক কেনা ও পরার ধুম লেগে যায়। এরপর গ্লাভস বিক্রির হিড়িক। তার পর হেডকভার (যা সাধারণত খাবার দোকানের কর্মীরাই এত দিন পরতেন) কিনে চুল ঢাকলেন অনেকে। এখন চলছে নিজের নিরাপত্তার প্রয়োজনে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চেইনওয়ালা অ্যাপ্রোন। এগুলো দিয়ে উদ্দেশ্য কতটা পূরণ হচ্ছে তা বলা যায় না, তবুও মানুষের স্বস্তি- বেশি টাকা খরচ হলেও তো করোনার সাথে লড়ার কিছু হাতিয়ার মিলেছে।

ক’টি কথা বলা প্রয়োজন। সিনিয়র ডাক্তারদের কেউ বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার মাস্ক পরা জরুরি। আবার কেউ বলছেন, সবাই পাইকারিভাবে নয়; করোনা রোগী এবং তাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার-নার্সসহ কর্মীদের, সেই সাথে রোগীর ঘনিষ্ঠ স্বজনদেরই এ মাস্ক পরা বেশি দরকার। অন্য দিকে যে দস্তানা বা গ্লাভস বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দামে, এগুলো ‘ওয়ান টাইম’ ব্যবহারের। এটি জীবাণুমুক্ত হওয়ার গ্যারান্টি নেই। ২৫ মার্চ সাবেক পিজি হাসপাতালের কেবিন থেকে বেগম জিয়ার মুক্তির সময়ে টিভিতে দেখা গেল, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির কোনো কোনো নেতার পরনে অ্যাপ্রোন। সেখানে শত শত মানুষের ভিড়ে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্য এটি দরকার বটে।

শুক্রবার ২৭ মার্চ টিভির খবরে জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসে নতুন করে যারা আক্রান্ত, তাদের মধ্যে একাধিক ডাক্তারও রয়েছেন। খোদ রাজধানীতেই ডাক্তার ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা জীবাণু দ্বারা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে নিজেদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুগছেন। অতএব, ঢাকার বাইরে অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে, সহজেই অনুমেয়। টিভিতে বলা হয়েছে, করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে এসব স্বাস্থ্যকর্মী পরিবারের কাছে ফিরে গেলে তারা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। পিপিই অর্থাৎ পার্সোনাল প্রটেকশান ইকুইপমেন্ট (ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী), পর্যাপ্ত থাকলে কিংবা এর যথাযথ বণ্টন নিশ্চিত হলে এ সমস্যা হতো না। চীনসহ কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশকে প্রচুর পিপিই এবং করোনা পরীক্ষার কিট দিয়ে সাহায্য করার খবর মিডিয়ায় এসেছে। আমাদের সরকার বারবার বলছে, ‘পিপিই যথেষ্ট আছে’। কিন্তু বারবার অভিযোগ আসছে, পিপিই ছাড়াই ডাক্তার-নার্সদের করোনা রোগীকে চিকিৎসা করতে হচ্ছে, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে, যেন অন্তত করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা পিপিই থেকে বঞ্চিত না হন।

করোনা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরস্পর কতটা দূরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত, তা নিয়ে ‘নানা মুনির নানা মত’ থাকায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। প্রথমে বলা হলো, গণপরিবহনে, সমাগমস্থলে, কোনো লাইনে দাঁড়ানোর সময়ে এবং যেকোনো ব্যক্তি থেকে, অন্তত এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব থাকলেই চলবে। এর কয়েক দিন পর মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে, একে অন্যের পাঁচ ফুট দূরে থাকা চাই স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার স্বার্থে। এ দিকে কোনো কোনো মহল থেকে জানানো হলো, এ দূরত্ব হতে হবে ছয় ফুট। বাস্তবে তা কতটা সঙ্গত ও সম্ভব, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে যানবাহন ও মানুষজন ছিল অনেক কম। তখনকার নিয়মানুযায়ী, রাস্তায় ট্রাক থেকে অন্য গাড়িগুলোকে ১০০ হাত দূরে থাকতে হতো। আজো অনেক ট্রাকের পেছনে তা লেখা থাকে। কার্যত এটি সম্ভব হয় না যানভর্তি ও ব্যস্ত সড়কে।

সরকার আপাতত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিন দেশব্যাপী লকডাউন বা শাটডাউন ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য যেন Social Distanec নিশ্চিত হয় এবং এর মাধ্যমে এ রোগের Community Transmission বন্ধ করা যায়, সে জন্যই এটা করতে হয়েছে। সরকার জোর দিয়ে জানিয়েছে, এই ছুটি বিনোদন বা উপভোগের নয়। কিন্তু কে শোনে কার কথা? করোনার মতো মহাদুর্ভোগের কবল থেকে বাঁচার এই ১০ দিন, ছুটি ভোগ করতে হাজার হাজার মানুষ বউ-বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। কিন্তু এতে বেড়ে গেছে Community Transmission এর ঝুঁকি। এ রোগের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। সেখানে এই করোনা সংক্রমণের প্রতিকারের একমাত্র পন্থা হলো, প্রতিরোধ। সে জন্য Social Distanec বজায় রাখার বিকল্প নেই।

কিছু দিন থেকে মাছির উপদ্রব বেশি দেখা যাচ্ছে। ঘরে-বাইরে ব্লিচিং পাউডার কিংবা ফিনাইল দিলে মাছি বা পোকামাকড়ের উৎপাত থাকে না। কারণ এতে দুর্গন্ধ আর জীবাণু দূর হয়ে যায়। তবে বহু জায়গায় দোকানপাট থেকে দুই দিনেই এসব পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক সামগ্রী উধাও! এর কারণ প্রথমত পণ্য পাওয়া যাবে নাÑ এ উদ্বেগ ও ভীতির কারণে অতিরিক্ত জিনিসপত্র (দরকার না হলেও) কিনে রাখা; দ্বিতীয়ত, নিত্যপণ্যের হঠাৎ বিপুল (কৃত্রিম ও অপ্রয়োজনীয়) চাহিদার সুবাদে বেশি বিক্রি করে অসৎ ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নেয়া; তৃতীয়ত, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আরো লাভের আশায় এবং পণ্য উৎপাদন বা আমদানি হবে না ভেবে অধিক চাহিদার পণ্যগুলো বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা। মোটকথা, ঠকছে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ এবং লুটছে মুনাফালোভী ও মজুদদার। সরকার বেকায়দায় আর পোয়াবারো গুজবের। এ দিকে প্রশাসন বারবার বলছে, ‘পণ্যের অভাব নেই এবং মজুদ পর্যাপ্ত।’


বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এখনো বেশি না হলেও আগামী দিনের কথা কেউ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে না। ‘সাবধানের মার নেই।’ তাই প্রশাসনের ঘোষণামাফিক, সর্বাত্মক সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিঞ্চিৎ স্বস্তিমিশ্রিত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এক কারণে। তা হচ্ছে, যে ক’জনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা করোনার শিকার; জানা গেল- তাদের কয়েকজন তা নন এবং তাদের মৃত্যুর কারণ ভিন্ন। সিলেটের এক প্রবাসী মহিলা দেশে এসে পৌঁছার দু-এক দিনের মধ্যে মারা গেছেন। এরপর করোনা সন্দেহে তার লাশ তাড়াতাড়ি সিলেট থেকে মৌলভীবাজার নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে একজন পীর সাহেবের মাজারসংলগ্ন গোরস্তানে এই মহিলাকে কবর দেয়া হয়েছে। পত্রিকায় খবর এসেছে, ভীতির দরুন গোসল ও জানাজা ছাড়া তাকে কবর দেয়া হয় এবং তখন তার নিকটজনও সেখানে হাজির থাকতে পারেননি। আসলে তার রক্তের নমুনা সিলেটের হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এসে পৌঁছার আগেই তার মৃত্যু ঘটে। রিপোর্টে জানা যায়, তিনি করোনা রোগী ছিলেন না। এরপর ভৈরবে বিদেশফেরত এক ব্যক্তির করোনাভাইরাসে মৃত্যুর খবর প্রচারিত হলেও জানা গেছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে টিভির খবর, খুলনায় যার করোনার কারণে মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে, তিনিও এ ভাইরাসে সংক্রমিত হননি।

বাংলাদেশে ‘শাটডাউন’ কথাটারই ব্যাপক প্রচলন ছিল না, লকডাউন দূরের কথা। ‘করোনার করুণা’য় এখন এ দেশে আমরা সবাই সে লকডাউনের কঠিন অভিজ্ঞতা টের পাচ্ছি। ভারতে এর নাম ‘জনতার কারফিউ’। কিন্তু মোদি মশাই এ নাম দিলেও কারফিউ কার্যকর করতে গিয়ে তার পুলিশরা জনতাকে লম্বা লম্বা বাঁশ দিয়ে রাস্তাঘাটে বেদম পেটানোকে ‘বাড়াবাড়ি’ ছাড়া কিছু বলা যায় না। গত মঙ্গলবার রাতে টিভিতে এমন অদ্ভুত দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। ভারতীয় পুলিশদের বংশদণ্ডনির্ভর আচরণ দেখে মনে হয়েছে, বাঁশের বাড়ি খেয়ে ছেলেবুড়ো কারো হাত ঠ্যাং ভেঙে গেলেও আফসোস নেই; বরং কারফিউ যাতে কেউ না ভাঙে, তা নিশ্চিত করা চাই। যা হোক, সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের মতো নগররাষ্ট্র বা স্বায়ত্তশাসিত শহর লকডাউন করা ছাড়াই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।

সিঙ্গাপুরের কথাই বলা যাক। সিঙ্গাপুরে করোনায় মৃতের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি নয়। তারা এই ভয়ানক ভাইরাস প্রতিরোধে বহু দেশের চেয়ে অনেক বেশি সফল। অথচ সিঙ্গাপুরের জনগোষ্ঠী প্রধানত চীনা বংশোদ্ভূত এবং দেশ দু’টির মাঝে ব্যাপক আসা-যাওয়া নিত্যদিন ঘটে থাকে। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের সাফল্যের কারণ হিসেবে জানা যায়, ২০০২ সালে SARS ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়ে তারা আইসোলেশন হাসপাতালসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলেছেন। সর্বোপরি গত ডিসেম্বরে যখন সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব চীনে ধরা পড়েছিল, তখনই সিঙ্গাপুর সতর্ক হয়ে যায় এবং এর মোকাবেলার জোর প্রস্তুতি নিতে থাকে। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে বিরাট হুমকি হিসেবে যখন ঘোষণা দিয়েছে, তত দিনে সিঙ্গাপুর করোনা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। এ দিকে অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ এ প্রস্তুতির জন্য মাস দুয়েক সময় পেয়েও তা কাজে লাগায়নি। আর এখন লকডাউন-শকডাউন করেও সামলানো যাচ্ছে না।

করোনা মহামারী সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। সে কারণে Pandemic (প্যান্ডেমিক) কথাটা ঘনঘন উচ্চারিত হচ্ছে। এত দিন আমরা মহামারীর ইংরেজি প্রতিশব্দ হিসেবে Epidemic (এপিডেমিক) জেনে এসেছি। জানা যায়, বিশেষ কোনো দেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলে মহামারীকে ‘এপিডেমিক’ বলা হয়। আর যদি কোনো ব্যাধি মহামারীর মাত্রায় উন্নীত না হলেও ছোঁয়াচে হয়ে থাকে, তাকে বলা হয় Contagious (কন্টেজিয়াস)। উল্লেখ করা দরকার, এ যাবৎ অনেক ক্ষেত্রে Pandemic কথাটা সেই রোগের ব্যাপারে প্রয়োগ করা হতো, যা কোনো একটা দেশজুড়ে সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস এমন ভয়াবহ মহামারী সৃষ্টি করেছে, যা বিশেষ কোনো দেশ নয়, দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই বলছেন, করোনা জীবাণু যেন বিশ্বায়নকে ব্যঙ্গ করে ধ্বংসাত্মক আন্তর্জাতিক রূপ নিচ্ছে। আর তা দেশে দেশে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে; কারণ বিশ্বায়নপূজারীদের দৃষ্টিতে, পুরো পৃথিবী নিছক একটি ‘বিশ্বগ্রাম’!

বলতে হয় একটি ইংরেজি শব্দের বিষয়ে। তা হলো ‘Pandemoniam’(প্যান্ডেমোনিয়াম)। এর অর্থ হচ্ছে, এমন এক পরিস্থিতি যখন গোলযোগ হয় প্রচণ্ড। যখন ব্যাপক গণ্ডগোল-বিভ্রান্তির পাশাপাশি মানুষ ক্রুদ্ধ কিংবা সন্ত্রস্ত থাকে। করোনাভাইরাসজনিত Pandemic যেন উত্তেজনাপূর্ণ Pandemoniam সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিকভাবে।

বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমের সুবাদে ভাইরাল (viral) কথাটার প্রচলন ব্যাপক। এটি মূলত ভাইরাসের (virus) বিশেষণ আর ভাইরাসের মূল অর্থ হলো, বিষাক্ত। সে কারণে ‘ভাইরাস’ কথাটাও ‘বিষমুক্ত’ নয়। এখন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি ব্যবহারকারীরা তাদের কোনো কথা বা ছবি মুহূর্তেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া বোঝাতে ‘ভাইরাল’-এর বদলে কী ব্যবহার করেন, দেখার বিষয়।

পাদটীকা : করোনাভাইরাসঘটিত মহামারীও বাংলাদেশের বৈরিতামূলক রাজনীতিকে ঠাণ্ডা করতে পারেনি। তাই এমন পরিস্থিতিতেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির উদ্দেশে বলেছে, ‘ওদের করোনাভাইরাসে ধরেছে’। বিএনপি জবাবে বলেছে, ‘আওয়ামী লীগে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে’।

এ দিকে জাতীয় ক্রিকেটার রুবেল হোসেন বলেছেন, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরাই আসল করোনাভাইরাস। টেক্কা মেরেছেন ভারতের প্রতিবাদী লেখক বুদ্ধিজীবী অরুন্ধতী রায়। দিল্লিতে সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী বিজেপি দলের মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িক সহিংস তাণ্ডবের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘ভারতে করোনাভাইরাসের স্বরূপ এটাই।’

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/492253