২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১:৫৭

নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে ২৯ দেশে

আক্রান্ত ৭৭ হাজার, মৃত্যু ২৩৬০

চীনসহ ২৯টি দেশে ছড়িয়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭৭ হাজার। বিশ্বে এ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা ২৩৬০ জন।

যাদের মধ্যে ১৫ জন ছাড়া বাকি সবার মৃত্যু চীনে। বাংলাদেশে এখনও এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। উহান ফেরত ৩১২ জন ভালো আছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চীনের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৩৯৭ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৮৮৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২৮৮ জন।

আর ২৯টি দেশ ও তিনটি অঞ্চল মিলিয়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৭ হাজার ৭৬৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মরনিং পোস্ট।

শুক্রবার চীনে মোট ১০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০৬ জন। এতে চীনের মূল ভূখণ্ডে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৪৫।

চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে। এদের মধ্যে ইরানে চারজন, জাপানে তিনজন, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দু’জন করে এবং ফিলিপাইন, ফ্রান্স, তাইওয়ান ও ইতালিতে একজন করে আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, হংকং, ম্যাকাওয়, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়েছে।

প্রথমদিকে নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই ছিল বেশি। কিন্তু গত কয়েক দিনে চীনের বাইরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দ্রুত বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা।

রয়টার্স জানিয়েছে, এ রোগ যাতে অন্যান্য দেশে মহামারী আকার না নেয় সেজন্য এখনই সর্বোচ্চ তৎপরতা চালানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস। তার মতে, এখনও এই ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তবে যত সময় যাচ্ছে, সুযোগ ততই কমে আসছে। যদি আমরা ঠিকভাবে কাজ করি তাহলে গুরুতর সংকট এড়াতে পারব। তবে আমরা যদি সুযোগগুলো নষ্ট করি তাহলে আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপদ।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি : আইইডিসিআরের ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিতে সন্দেহজনক (COVID-19) আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করে এযাবৎ কারও নমুনাতে এই ভাইরাস পাওয়া যায়নি। উহান ফেরত ৩১২ যাত্রীর কোয়ারেন্টিন পরবর্তী আরও ১০ দিন ৩১২ জনকে সীমিত চলাচল ও নিজেদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অবহিত করতে আইইডিসিআরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতি নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তাদের কেউ কেউ হটলাইনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়েছে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক COVID-19 সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউতে। কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক।

দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ : এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় একদিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেওংডোকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। আতঙ্কে দায়েগু শহরের সব রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

ওই শহরে একটি চার্চে প্রার্থনায় যোগ দেয়া ১৬৯ জন মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ওই সম্প্রদায়ের নয় হাজার সদস্য স্বেচ্ছায় নিজেদের ঘরে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকার এবং পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চীন এবং জাপানের প্রমোদতরীর বাইরে দক্ষিণ কোরিয়াতেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

দেশে দেশে করোনা : উপকূলে কোয়ারেন্টিন করে রাখা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৩৯ জনসহ জাপানে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭২ জনে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে দেশটির কওম শহর থেকে। সেখান থেকে মানুষের চলাচলের মধ্য দিয়ে ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে তেহরান, বাবোল, আরাক, ইসফাহান, রাস্তসহ অন্যান্য শহরে। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।

এর মধ্যে তেহরানের এক শহরের মেয়রও রয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কওম শহরে কাজ করা চীনা শ্রমিকদের কাছ থেকেই এ ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন ইরানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। কেবল শুক্রবারই সেখানে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, স্থানীয়ভাবে বড় আকারে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে ধরে নিয়ে তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সে রকম পরিস্থিতি দেখা দিলে স্কুল ও অফিস আদালত বন্ধ করে দেয়া হবে।

দেশটির সেন্টার্স ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের কর্মকর্তা ন্যান্সি মেসোনিয়ের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়লেও কমিউনিটিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমে এলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করছে।

এর মাঝেই শনিবার ইরান এবং ইতালিতে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ইতালিতে মোট ৩০ ও ইরানে ২৮ জনের শরীরে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, শনিবার ইরানে নতুন করে ১০ জনকে করোনাক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়াল ৫ জনে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপোর বলেছেন, আমরা নতুন করে ১০ জনের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। আক্রান্তদের একজন মারা গেছেন, ৮ জন কম শহরে ও দু’জন তেহরানের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাস আগে হানা দিলেও প্রথম প্রাণ কাড়ে ইরানে।

এদিকে ইউরোপের দেশ ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক নারীর প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা আনসার বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ইতালিতে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। আনসা বলছে, মারা যাওয়া ওই নারী মিলান শহরের লম্বার্ডি অঞ্চলের বাসিন্দা। ভেনেতো অঞ্চলের পাদুয়া এলাকায় ৭৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ওই নারীর প্রাণহানির খবর এসেছে।

আমিরাতে এক বাংলাদেশি আক্রান্ত : সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরও দু’জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। আমিরাতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে গালফ নিউজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। সব মিলিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ জনে। গালফ নিউজ লিখেছে, নতুন দুই রোগীর মধ্যে একজন ৩৪ বছর বয়সী ফিলিপিনো এবং অন্যজন ৩৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ইন্টারন্যাশনাল স্বাস্থ্য রেগুলেশন্স বিভাগের প্রধান ডা. ফাতিমা আল-আক্তারকে উদ্ধৃত করে আল-আরাবিয়া লিখেছে, যাদের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস ধরা পড়ছে, তাদের সবাইকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত তাদের সবাইকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।

সতর্ক বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো : করোনাভাইরাস আতঙ্কে পুরো বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। দেশে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিদেশিদের বাংলাদেশের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সম্প্রতি চীন থেকে ফিরেছেন এমন ব্যক্তিদের ভিসা দেয়া থেকে বিরত থাকছে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো।

দূতাবাসের কার্যক্রম ঠিক রেখে নিজেদের যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তাদেরকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে চীন, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ যেসব দেশে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে, সেসব দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে এসব নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।

চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমরা এখানে এক ধরনের ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। তবে এ ভাইরাস প্রতিরোধে চীন সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা আমরা মেনে চলছি। পাশাপাশি বাংলাদেশি কমিউনিটিকেও একই পরামর্শ মেনে চলতে অনুরোধ করে যাচ্ছি।

ইউক্রেনে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ : করোনা আতঙ্কে চীন থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফেরানোর প্রতিবাদে ইউক্রেনে বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার চীনফেরত ৪৫ ইউক্রেনীয় ও ২৭ বিদেশিকে ছয়টি বাসে করে রাজধানী কিয়েভের দক্ষিণে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে দেশটির নাগরিকরা। তাদের আশঙ্কা, চীন থেকে ফেরা ব্যক্তিদের মাধ্যমে ইউক্রেনে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইতিমধ্যেই চীন থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ।

এ তালিকায় বাংলাদেশ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, জার্মানি, রাশিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশের নাম রয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বলে দাবি করা একটি ভুয়া ইমেইল অ্যাড্রেস থেকে লোকজনকে মেইল করে বলা হয়েছে, চীনফেরত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

বিল গেটসের অনুদানের প্রশংসায় জিনপিং : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ এর অনুদানের প্রশংসা করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ৬ ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল বিল গেটসের সংস্থাটি।

জবাবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের এমন আর্থিক অনুদানের কাজের গভীর প্রশংসা করছি। চীনের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনাদের এমন চিঠি, এদেশের জনগণের সঙ্গে আপনাদের সংহতির বহিঃপ্রকাশ।

অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুরু হতে পারে : শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, দীর্ঘ মেয়াদে প্রস্তুতি নিতে হবে অন্য ভাইরাসের জন্যও। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী কয়েক বছরে আরও কী কী ভাইরাস আসতে পারে তা নিয়ে এখনই কাজ করতে হবে সরকারকে। তবে বর্তমানে চীনে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুরু হতে পারে। চীনে করোনাভাইরাস দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ নিজেদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেবে। বাংলাদেশকেও এ কারণে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

শনিবার ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত রাজধানীর এফডিসিতে অনুষ্ঠিত এক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে পোশাক শিল্প ১০ থেকে ২০ বছর থাকবে। উন্নত দেশগুলোতেও পোশাক প্রতিযোগিতামূলক দামে উৎপাদন করার মতো ক্ষমতায় চলে আসছে। কারিগরি পরিবর্তনের ফলে পোশাক শিল্পের প্রভাব বাংলাদেশ থেকে আস্তে আস্তে কমে যাবে। তাই পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। এ ধরনের ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারকে একটা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।

বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে : বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সঙ্গে চীনের দৃশ্যমান কোনো সংযোগ না থাকার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি বলেন, ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকানোর সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা কম।

কিন্তু যেভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, তা উদ্বেগজনক। চীনে ভ্রমণ বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শের মতো স্পষ্ট মহামারীর সংযোগ না থাকার কারণে বিভিন্ন দেশে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ইরানে মৃত্যু ও নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া খুব উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।

তিনি মনে করেন, চীনসহ অপর দেশগুলো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে এখনও ভাইরাসটির আরও বেশি ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর সুযোগ রয়েছে। তিনি সম্ভাব্য মহামারী ঠেকাতে আরও বেশি প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/281309