১৪ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার, ১১:৫০

পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন

আবারও দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা!

পেঁয়াজের বাজার ক্রমেই লাগামহীন হয়ে পড়ছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে এ নিত্যপণ্যটির দাম আবারও কেজিপ্রতি ১০০ টাকা ছাড়াল। চলতি মাসের শুরুতে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। টিসিবির খোলাবাজার কার্যক্রম এবং মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রভাবে দাম কিছুটা কমে নেমে আসে ৭০-৮০ টাকায়। তবে এ অবস্থা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। ভোক্তাদের স্বস্তি পাওয়ার আগেই আবারও বাড়তে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। সরবরাহ সংকটসহ নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়াল।

গতকাল রবিবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। যা দুই দিন আগেও ৭৫-৮০ টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো দোকানিকে ৯৫ টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা। এদিকে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়। যা আগে ছিল ৬৫-৭৫ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ আমদানি করা পেঁয়াজেও কেজিতে দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা।

একইভাবে পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের আড়তগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ গতকাল ৯২-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮৫ টাকায়।

ভোক্তারা অভিযোগ করে, দুই দিন পরপর দাম বাড়ানো আসলে ব্যবসায়ীদের কৌশল। তাঁরা ঠিকই কোনো না কোনো কারণ বের করে দাম বাড়িয়ে দেন। বাজারটা সিন্ডিকেটের দখলে। তা না হলে এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বৃদ্ধি সম্ভব নয়।

তবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে গত মাসের ২৯ তারিখ। এর পর থেকে মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ক থেকে কিছু পেঁয়াজ এসেছে। তবে তা পরিমাণে অনেক কম। মায়ানমারের যে পেঁয়াজ আসছে তার একটা বড় অংশ পচে যাওয়া। যে কারণে বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

দেশি পেঁয়াজ কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে তা জানতে চাইলে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দাম চাইলে ১১০ টাকা। যদি নেন তবে এক দাম ১০০ টাকায় নিতে পারবেন। কারো কাছেই এর থেইকা কমে পাবেন না।’ দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা পাইকারি বাজার থাইকা আনি। তাগো গিয়া ধরেন, কেন তারা দুই দিন পর পর দাম বাড়ায়।’ আল-আমিন নামের এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে যা মনে চায় তাই করছে। এগুলো দেখার কি কেউ নেই?’

কারওয়ান বাজারের অন্য এক ক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের পেঁয়াজ বিক্রির পরিসর আরো বাড়াতে হবে। না হলে ব্যবসায়ীদের ঠেকানো যাবে না।’ গুলশান গুদারাঘাটের মুদি দোকান রাফসান স্টোরে গিয়ে দেখা যায় একটি বস্তা ও একটি ঝুঁড়ির মধ্যে পেঁয়াজ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাশের আরো তিন-চারটি দোকানেও পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি লক্ষ করা যায়নি। তবে সব দোকানিকেই বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এদিকে পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ দেখতে অনেকটা একই রকম। সাধারণ ভোক্তাদের বিক্রেতারা না জানালে আসলে বোঝার উপাই নেই কোনটা দেশি, কোনটা মায়ানমারের পেঁয়াজ। যে সুযোগটা নিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। মিয়ানমারের পেঁয়াজও অনেক বিক্রেতাকে দেশি বলে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের প্রায় ১৫ দিন পরও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি রয়েছে দেশি পেঁয়াজও।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা মো. হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে যেসব পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে সেখানে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নষ্ট বের হচ্ছে। প্রথম দিকে মিয়ানমার থেকে এভাবে পেঁয়াজ আনলেও এখন সেখানে খুব বেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এটাই মূল্যবৃদ্ধির বড় কারণ।’

তবে ১৫ দিন আগে বন্ধ হওয়ার পরও ভারতীয় পেঁয়াজ কোথা থেকে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের কেনা কিছু পেঁয়াজ সবার কাছেই ছিল। সেগুলোই বিক্রি হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ চাহিদা ২৪ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এর আগের বছরগুলোতে এই উৎপাদন ছিল ১৭-১৯ লাখ টনের মধ্যে। চাহিদার বাকি অংশ পূরণ করা হতো ভারত থেকে আমদানি করে।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পেঁয়াজের সর্বোচ্চ চাহিদা হলো ২৪ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এর আগের বছরগুলোতে এই উৎপাদন ছিল ১৭-১৯ লাখ টনের মধ্যে। চাহিদার বাকি অংশ পূরণ করা হতো ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/industry-business/2019/10/14/826185