২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৩:৪৮

আইএমএফের প্রতিবেদন: খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা

খেলাপিদের কাছে জিম্মি দেশের ব্যাংকিং খাত। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে তা ২ লাখ ৪০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের প্রায় ২৬ শতাংশ।

এসবের মধ্যে আদালতের স্থগিত আদেশ, পুনঃতফসিল এবং বিশেষ অ্যাকাউন্টের ঋণও রয়েছে। এই পরিমাণ খেলাপি ঋণ দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় অর্ধেক। যা ৭টি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ রিপোর্ট হস্তান্তর করে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল। এতে দেশের ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ৪৩টি সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এটা কমাতে না পারলে অর্থনীতি টেকসই হবে না।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণের জন্যই শিল্প ঋণের সুদের হার কমানো যাচ্ছে না। কারণ এই ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে মুনাফা থেকে প্রভিশন করতে হয়। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে না পারলে এ খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। মির্জ্জা আজিজ বলেন, জামানত ছাড়া যে ব্যাংক ঋণ দিয়েছে, ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

কোন বিবেচনায় এত বড় ঋণ দেয়া হয়েছে- তা জবাবদিহিতার আওতায় আনতে না পারলে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

আইএমএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খেলাপি ঋণ আসলে দ্বিগুণ। বাংলাদেশ ব্যাংক ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার হিসাব দেখায়। কিন্তু আদালতের স্থগিত আদেশে ৭৯ হাজার ২৪২ কোটি টাকার ঋণ আটকে আছে।

৬৭৫ জন শীর্ষ ঋণ গ্রহীতার আবেদনের ভিত্তিতে এই স্থগিত আদেশ দেন আদালত। ফলে ঋণখেলাপির হিসাবে দেখায় না বাংলাদেশ ব্যাংক।

এছাড়া বিভিন্ন কারণ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ২১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এগুলোও খেলাপি ঋণের মধ্যে পড়ে। বিশেষ অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে ২৭ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ ৯ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের ২৬ শতাংশ খেলাপি। আবার জাতীয় বাজেট ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ জাতীয় বাজেটের প্রায় অর্ধেক খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ কমানো সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ৪৩টি সুপারিশ করেছে আইএমএফ। এর মধ্যে ঋণ নীতিমালায় পরিবর্তন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং ব্যাংকের পর্ষদের রাজনৈতিক নিয়োগ বন্ধের সুপারিশ করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এদের বেশির ভাগই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। এরা অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা জানে ঋণ নিলে ফেরত দিতে হবে না। তাদের কালো টাকা এবং শক্তি দিয়ে বছরের পর বছর আইনি প্রক্রিয়া এড়াতে সক্ষম। তিনি বলেন, অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে খেলাপিদের ধরা সম্ভব নয়, এটা এক ধরনের প্রতারণা।

তার মতে, সরকার যদি সত্যি সত্যি এদের শাস্তি দিতে চায়, তাহলে শীর্ষ খেলাপিদের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। না হলে খেলাপিদের ধরা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, ঋণদাতা ও গ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অবসরে যাওয়া এসব এমডির কার আমলে কত ঋণ, কীভাবে গেছে, কার কাছে গেছে- তা খতিয়ে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ওইসব এমডিরাও ঋণের নামে অর্থলুণ্ঠন করেছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/225230/