সুনামগঞ্জের শিল্প শহর ছাতকের একটি গ্রামের ব্রিজের ওপর দিয়ে নৌকায় লোকজন চলাচল করছে
১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ১১:২৪

চৌদ্দ জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দশটি জেলা বন্যা কবলিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলে পানি নেমে আসায় জেলাগুলোর মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। কোন কোন এলাকার মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে এবং বাড়িঘর হারানোর আশঙ্কায় ভিটেবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গতকাল বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে প্রবল স্রোত নামছে। সেজন্য দেশের অন্তত ১৪ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলাগুলো হলো- লালমনিরহাট, নিলফামারি, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, নেত্রকোনা, সিলেটের সুনামগঞ্জ, বগুড়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, শেরপুর, মানিকগঞ্জ ও জামালপুর।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির ‘বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি’ বিষয়ে এক সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে ১০টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে সেসব জেলার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিশেষ বরাদ্দ রেখেছে।

তিনি জানান, এই ১০ জেলার জন্য ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ১৭ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৫০ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট রাখা হয়েছে। ১০ জেলায় ৬২৮টি পয়েন্ট ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৬টি পয়েন্ট ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’। তবে সরকার ৫২১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিমুক্ত করতে দ্রুত কাজ করছে।

তিনি জানান, মানিকগঞ্জ ও জামালপুরে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটেও তিস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এসব মোকাবিলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং পরিস্থিতি তদারকি করছেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অতি বন্যার আশঙ্কাজনক প্রত্যেক এলাকায় সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে কমিটি হয়েছে। যাতে পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। খাদ্য গুদামগুলোর কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা সঙ্কট হলে ৫শ’ করে তাঁবু পাঠানো হচ্ছে। প্রত্যেক তাবুতে ২০ জন করে থাকতে পারবে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা জোর দিচ্ছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড, আবহাওয়া অফিসসহ সকল বিভাগকে সর্বশেষ তথ্য দিতে হবে। সরকারি সাহায্য যাতে স্থানীয় সরকার বিভাগ সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের ৯৩টি নদ-নদীর পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ১২টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৯৩টি পানি সমতল স্টেশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ৭৭টি পয়েন্টে বৃদ্ধি ও ১৪টি পয়েণ্টে হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের সিকিম, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশসমূহের বিস্তৃত এলাকায় আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় মাঝারী থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সংলগ্ন ভারতের বিহার এবং নেপালে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

নদ-নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীরণ কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পানি পরিস্থিতি ১টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ১টি পয়েন্টের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের সকল প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্ট, চিলমারি ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্ট, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্ট এবং তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্ট বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আগামী ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী ও সাঙ্গুসহ প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘন্টায় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও লালমনিরহাট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী
চট্টগ্রাম ব্যুরো : গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে বৃহওর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বৃহওর চট্টগ্রামের বান্দারবান জেলা সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলছে না চট্টগ্রাম নগরবাসীর। গতকাল শুক্রবারও আবারও তলিয়ে গেছে নগরীর নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে অক্সিজেন মোড়ে কাটছে না পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ। এ কারণে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি বাদে উত্তর চট্টগ্রামের তিন উপজেলার লোকজনকেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নগরীতে গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিতে হালিশহর কে ব্লক, আগ্রাবাদ সিডিএ, গোসাইলডাঙ্গা, শোলকবহর, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, দামপাড়া, বাকলিয়া ও চান্দগাঁওর নিচু এলাকাগুলোতে পানিবদ্ধতা তৈরি হয়। আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকার বাসিন্দা মোঃ জাহাংগীর আলম বলেন, সিডিএতে জোয়ারের পানি ঢুকছে। চলতি বছর কিছু রাস্তা উঁচু করা হলেও, বেশিরভাগ জায়গা নিচু হওয়ায় জোয়ারের সময় পানি ঢুকে যায়।

এদিকে বান্দারবান থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে,টানা ৭ দিনের অব্যাহত ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ে বান্দরবানে দেখা দিয়েছে বন্যা। বৃহস্পতিবার বিকালের পর থেকে পানি বেড়ে যাওয়ায় সদর উপজেলাসহ লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে শহরের আর্মি পাড়া, ইসলামপুর, শেরে বাংলানগর, উজানিপাড়া, মেম্বার পাড়া, ওয়াপদা ব্রিজ এলাকা, কাশেম পাড়াসহ বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল। সারাদেশের সাথে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে পানি ওঠে ও মাটিধসে অন্য উপজেলার সাথে সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। বান্দরবান জেলা প্রশাসক দাউদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা।বান্দরবান সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নোমান হোসেন জানান, হঠাৎ করে বন্যা পরিসি’তির অবনতি হয়ে পড়েছে, আমরা আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা আরো বাড়িয়েছি এবং বন্যাদুর্গতদের শুকনা খাবার ও খিচুড়ি বিতরণের ব্যবসা করা হয়েছে। দুর্যোগ কালীন পরিসি’তি মোকাবেলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

ফটিকছড়ি সংবাদদাতা জানায়,অতি বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল সহ প্রায় অর্ধ শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হালদা নদী, ধুরুং নদী, সর্তা, গজারিয়া, তেলপারী, লেলাং, বার মাসিয়া ও ফটিকছড়ি খালসহ বিভিন্ন খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানের পুরনো ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে।উপজেলার গহিরা-হেয়াঁকো সড়কের আমতলী,চাড়ালিয়াহাট, শাহনগর, চৌমুহনী, ফটিকছড়ি পৌরসভা হতে উত্তর ফটিকছড়ির হেয়াঁকো পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে প্রধান সড়কে সেতুর কাজ চলার কারনে বিকল্প সেতু গুলো যে কোন সময় ডুবে উত্তর ফটিকছড়ির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। নাজিরহাট- রামগড় সেকশন ১ সড়ক সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকায় সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যায় ইতো মধ্যে ৮টি বসত ঘর হালদা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরো শত শত ঘর নদী ও খালে বিলীন হবার উপক্রম হয়েছে।লেলাং ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভারি বর্ষণের ফলে তার এলাকার নিন্মাঞ্চল ও গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। লেলাং ও কুতুবছড়ি খালের পূর্বের ভাঙন দিয়ে পানি বের হওয়াতে কয়েকটি মৎস্য ও মুরগীর খামারেও পানি ঢুকে পড়েছে।ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ভারী বর্ষনে পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক পানিতে ডুবে থাকার পর ও মানুষ নিত্য প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়ত করছে; তবে গ্রামীন অনেক সড়কের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সায়েদুল আরেফীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিতে উপজেলার সমিতিরহাট ইউনিয়নে ৮টি বসতঘর হালদায় বিলীন হয়ে গেছে।
এদিকে ফটিকছড়ি সংবাদদাতা আরও জানায়,চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বন্যার পানিতে ডুবে মুহাম্মদ ইমাম হোসাইন(১২) নামে এক শিশুর শলীল সমাধি হয়েছে।

এদিকে রাংগুনিয়া সংবাদদাতা জানায়, রাংগুনিয়ায় ইছামতী নদীতে ডুবে শফিউল আলম মান্না (২০) নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড হালিমপুর এলাকার আবুল কাশেম মাস্টার বাড়ির বদিউল আলমের পুত্র। বৃহস্পতিবার সকালে নদীতে স্রোতের টানে ভেসে আসা বাঁশ ধরতে গিয়ে সাতঘড়িয়া পাড়া এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হন। স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন মাতব্বর জানান, ভোরে হালিমপুর এলাকার স্থানীয় আবদুর রহমান ও শফিউল আলম মান্না ইছামতী নদীর চরে সবজি তুলতে যায়। এর এক পর্যায়ে দু’জন নদীতে বাঁশের তৈরি একটা মাচা ভেসে আসতে দেখে তা ধরতে নদীতে ঝাঁপ দেয়।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকে ৫ ফুট মীন সি লেভেল (এমএসএল) পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এই পানি বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেড়েছে বলে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। পানি বৃদ্ধির সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়ানো হয়। পানি বৃদ্ধির আগে প্রতিদিন একটি জেনারেটর চালানো হতো। আর একটি জেনারেটর থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে পানি বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে তিনটি জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আর এই তিনটি জেনারেটর থেকে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। যার পুরোটাই জাতীয় সঞ্চালন গ্রীডে সরবরাহ করা হয়।

সাতকানিয়া থেকে প্রাপ্ত খবওে জানা গেছে, টানা ভারি বর্ষণের সাথে পাহাড়ি ঢল যোগ হয়ে বন্যায় আক্রান্ত সাতকানিয়ার অর্ধলক্ষ মানুষ। শক্সখ নদীর পানি অনেক জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনও। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সাতকানিয়ার বাজালিয়া অংশে সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।গত শনিবার থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি সাতকানিয়ার বেশ ক’টি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন এই অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বন্যায় কবলিত মানুষদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ মেট্রিক টন চাউল ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, উপজেলা পরিষদের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

হাটহাজারী থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে,অবিরাম বর্ষণে হাটহাজারীতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার ১ নম্বর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের উদালিয়া গ্রামের পাহাড়ে ঘেরা মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে এ ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় প্রশাসন উক্ত পল্লীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত ১৫টি পরিবারকে আগাম সরিয়ে নেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও দুইটি বসতঘর বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পৌরসভা ও উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে উক্ত এলাকার সাধারণ জনগণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এদিকে নাজিরহাট বাজার সংলগ্ন হালদা নদীর উপর নির্মিত বহু বছরের পুরানো সেতুটির মাঝখানে দেবে গেছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে শত শত মানুষ এ সেতু দিয়ে পারাপার করছে। তবে যে কোন মুহূর্তে সেতুটি বিলিন হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানি জমে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন জানান, মনাই ত্রিপুরা পল্লীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত ১৫টি পরিবারকে সময়মত সরিয়ে নেওয়ার কারণে পাহাড়ধসের মত ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ বেলা খাবারের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া পৌর এলাকা ও উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থান আমরা পরিদর্শন করেছি এবং উপজেলাবাসীর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

চন্দনাইশ সংবাদদাতা জানায়, আষাঢ়ের শেষের দিকের কয়েকদিনের টানাবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা শক্সখ ও চাঁনখালী নদীর পানি বেড়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পাহাড়ি ঢলের পানি ও জোয়ারের পানি মিশে চন্দনাইশ থানাধীন ৪নং বরকল ইউনিয়নের কানাইমাদারী গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। এলাকার যোাগযোগের সকল রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে ও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কানাইমাদারী এলাকাসহ আশেপাশের আরো ২০টি গ্রাম, হাজার হাজার নরনারী ও গৃহপালিত পশু। স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার আবদুল মুবিন জানান, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। ক্ষেতখামার নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষ অসহায় অবস্থায় আছে। এই মুহূর্তে এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণের প্রয়োজন। কানাইমাদারী উন্নয়ন ফোরামের পক্ষ থেকে ফোরামের সভাপতি আলাউদ্দিন চৌধুরী মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক পরিবেশবিদ এ কে এম আবু ইউসুফ বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কানাইমাদারী এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও সরকারি ত্রাণের সহযোগিতা চেয়ে এলাকার সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

উত্তাল সুরমা কুশিয়ারা মনু খোয়াই ধলাই ও পিয়াইন

কবির আহমদ, সিলেট : হাওর অঞ্চল নামে খ্যাত সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার থেকে শিল্প শহর ছাতকের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা ৫ দিনের বৃষ্টিপাত আর পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাহাড়ী ঢলে আসা বৃষ্টির পানির সিলেটের সুরমা ও মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা উত্তাল হয়ে উঠেছে। মৌলভীবাজারের মনু, হবিগঞ্জে খোয়াই ও কোম্পানীগঞ্জের ধলাই ও প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ের পিয়াইন নদীর ভয়াবহ গর্জন দেখে আতঙ্কিত সিলেট বিভাগের লোকজন। উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে সিলেট বিভাগের মানুষের মধ্যে। খাদ্য সংকটের পাশাপাশি গৃহ পালিত পশু বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে কৃষক পরিবারের। কৃষকদের যেন দুশ্চিন্তার শেষ নেই। প্রতিদিনের বৃষ্টিতে বাড়ছেই পানি, ডুবছে নতুন নতুন জনপদ। টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন উপজেলায় আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি। এতে প্লাবিত হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল এবং নদী তীরবর্তী এলাকা।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে চেঙ্গের খাল নদীর পানি বৃদ্ধিতে সিলেট শহরতলীর খাদিমনগর ইউনিয়নের বাউয়ার কান্দি, বাইশটিলা, যুগলটিলা, কামাউরা কান্দি, নীল গাও সহ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। মুল সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তারা।
গতকাল সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন ও সারী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। সেই সাথে উপজেলা সদরের সাথে প্রত্যন্ত গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বিপাকে পড়েন পানিবন্দী সাধারণ মানুষ। বানের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সারীঘাট-গোয়াইনঘাট, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, হাতির পাড়া-ফতেহপুর সড়ক তলিয়ে গেছে পানির নিচে। আজও বন্যা পরিস্থিতি একই অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

কানাইঘাট উপজেলাও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধিতে গতকাল নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও আজ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর সুরমা কানাইঘাটে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে শুক্রবার বেলা ১২টায় পানি নেমে প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ১৩.২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
গত বৃহস্পতিবার সিলেটের সুরমার পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও গতকাল শুক্রবার তা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে পানি ছিল বিপদ সীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে। কিন্তু শুক্রবার বেলা ১২টায় পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ১০.৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

সুরমার মতো ডেঞ্জার সিগন্যাল দিচ্ছে কুশিয়ারা নদীও। শেরপুরে কুশিয়ারার পানি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টায় শেরপুরের কুশিয়ারায় প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ৮.৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। শেরপুরেও নদীর তীরসংলগ্ন এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটের বিয়ানীবাজারের কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টেও পানি বিপদসীমার কিছুটা নিচে ছিল। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার রিডিংয়ে এই পয়েন্টেও বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ১২টার প্রাপ্ত রিডিংয়ে এ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১২.৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এছাড়া শুক্রবার বেলা ১২টায় সিলেটের জৈন্তাপুরে সারী নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ১১.৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং কানাইঘাটে লোভাছড়ার পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদসীমার ১৪.৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।

এদিকে কুশিয়ারার অন্য দুই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে ছিল। আমলশীদে বিপদসীমা ১৪ দশমিক ৯৫ মিটার। সকাল ৬টায় পানি ছিল ১৩ দশমিক ৯১, ৯টায় ১৪ দশমিক ০৪, দুপুর ১২টায় ১৪ দশমিক ২৪ বিকেল ৩টায় ছিল ১৪ দশমিক ৪০ ও সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ১৪ দশমিক ৬৪ মিটার।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় সারাদিন থেমে থেমে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে উজানে ভারতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যেও তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। আর তাই সুরমা-কুশিয়ারার পানি আরো দ্রুত বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
ছাতকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

সুনামগঞ্জের শিল্প শহর ছাতকে টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইতোমধ্যে উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তবে পানিবন্দী মানুষের জন্য কোনো আশ্রয় কেন্দ্র খোলার খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এমনকি গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে বেশ কয়েকটি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রবল বর্ষণে সুরমা, পিয়াইন ও চেলা নদীতে পাথর ও বালুবাহী বার্জ-কার্গো ও বাল্কহেড নৌকায় লোডিং-আনলোডিং বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা।

নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বেশ কয়েকটি মাছের খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-এক দিনের মধ্যেই ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে সারাদেশের সঙ্গে ছাতকের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

রংপুরে ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী
কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, রংপুর অফিস : গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষন আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শুক্রবার বিপদ সীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে ৩ টায় কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় বিপদ সীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হচ্ছে । তিস্তার পানি বাড়ে যাওয়ায় রংপুরের কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া এবং পীরগাছা উপজেলায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের গ্রাম গুলোতে পানি প্রবেশ করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে তিস্তার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কাউনিয়া উপজেলা টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, তিস্তা পানি বাড়ে যাওয়ায় ইউনিয়নের বিশ্বনাথ, চরগনাই, হয়বৎখা ও বালাপাড়া ইউপির ঢুষমারা গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শুক্রবার সকালে নদীর তীরবর্তী ১০ গ্রামের হাজারও পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেক পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কাউনিয়ার ইউএনও উলফৎ আরা বেগম জানান, বন্যায় পানিবন্দী মানুষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে। বন্যার ব্যাপারে সরকারিভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জরুরী অবস্থায় সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা বেষ্টিত ইউনিয়নগুলোর চর এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পুকুর, মৎস খামারের মাছ। বিভিন্ন আবাদী ফসল তলিয়ে গেছে। গবাদি পশু পাখি ও ছোট শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষ নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবারের প্রধান নারী-পুরুষরা। বিশুদ্ধ পানি ও রান্নাকৃত খাবার সমস্যা কারণে অনেকে শুকনো খাবার, আবার কেউ স্বজনদের দেয়া খাবার খাচ্ছে। পানিবন্দী মানুষগুলো পয়ঃনিস্কমন জটিলতায় পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উঠেছে পানি। পানিবন্দী মানুষগুলো ভেলায় চলাচল করছে। জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বৃহস্পতিবার লক্ষীটারী ইউনিয়নের পানিবন্দী এলাকা পরিদর্শন করেছেন । তিনি দ্রুত এসব মানুষকে সহায়তার আস্বাস দেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দী ৮’শ ৫০ জনের মাঝে চিড়া, মুড়ি, গুড়, দেশলাই, মোমবাত শুক্রবার বিতরণ করা হয়েছে।

পীরগাছা উপজেলার ছাওলা, তামম্বুলপুর ইউনিয়নের চলগুলোতে ১ হাজার মানুষ পান্দিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, শুক্রবার বিকেলে ৩ টার দিকে কাউনিয়া পয়েন্টে ৫৫ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে । যা বিপদ সীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন তিস্তার নিম্ন এলাকা গুলোতে পানি প্রবেশ করছে । বাঁেধ আশ্রিতদের অনত্র নিরাপদ এলাকায় সরে যেতে বলা হয়েছে।
তিস্তার পানি এখনও ২০ সেন্টিমিটার উপরে

নীলফামারী সংবাদদাতা : পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি শুক্রবারও ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শৌলমারী বানপাড়ায় ডানতীর গ্রাম রক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় ওই এলাকার ২ হাজার পরিবার ও ডিমলা উপজেলার চরখরিবাড়ি এলাকার স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটি হুমকীর মুখে পড়ায় ওই চরে বসবাসকৃত ৩ হাজার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যাপূর্বভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। এর পর বিকাল তিন টায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে যা শুক্রবারও অব্যাহত রয়েছে। এতে প্লাবিত হয় তিস্তা ব্যারাজের উজান ও ভাটির চর এবং নদীতীরবর্তী গ্রাম গুলো। চরে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরে উঁচুস্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী জোনের এসডি হাফিজুল হক জানায় বানপাড়া বাঁধ ৬০ মিটার পর্যন্ত ভাঙ্গন পাওয়া গেছে। আমরা ১২০ মিটার পর্যন্ত এই ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছি। তবে এ বাঁধটি প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৗশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারনে আমরা সর্তকাবস্থায় রয়েছি। বৃহস্পতিবার হতে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
যমুনা ভাঙনে বিলীন হচ্ছে জনপথ

আব্দুস ছামাদ খান, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। প্রতিদিনই যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙনের তীব্রতা। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে এলাকার ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালা।যমুনা নদীতে অবৈধ আর অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্প্রতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ শুক্রবার বিকল ৩টা পর্যন্ত ১৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দু-একদিনের মধ্যে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। বাঐখোলা বাঁধসহ বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপথ। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে নদীপাড়ের আট গ্রামের মানুষের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে, ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে। যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের কবলে পড়েছে কাজীপুর উপজেলার বাহুকা, সিংড়াবাড়ি, বাঐখোলা ও পাটগ্রাম এলাকা। প্রতিদিন ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাঐখোলা বাঁধসহ এসব এলাকার জনপথ। যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকির মধ্যে রয়েছে গান্দাইল, রতনকান্দি ও শুভগাছা ইউনিয়নের বাহুকা, বাঐখোলা, পূর্ব খুশকিয়া, পাটাগ্রাম, কুড়ালিয়া, সিংড়াবাড়ি, চিলগাছাসহ নদীতীরবর্তী আট গ্রামের হাজার হাজার মানুষ।অব্যাহত ভাঙনে এসব এলাকার ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বাঐখোলা বাঁধের অর্ধকিলোমিটারসহ অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে প্রত্যাশা করছেন নদীপাড়ের মানুষ।এদিকে এনায়েতপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায়ও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যমুনা নদীর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নদ-নদীগুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, ভারতের আসামে প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে যমুনা নদীর উজানে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে দু-একদিনের মধ্যে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। বাঐখোলা বাঁধ রক্ষায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। দুই কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এরই মধ্যে কাজের ওয়ার্কঅর্ডার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পানি কমলে কাজ শুরু হবে। আগামী বছরগুলোতে আর ভাঙন থাকবে না।পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ভাঙনের কারণ হতে পারে। ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার নদীপথ আছে। তার মধ্যে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ৩৫ কিলোমিটার নদীভাঙন রোধ করে ফেলেছি। এ মুহূর্তে আমাদের দুটি প্রকল্প চলমান আছে। এ ছাড়া কাজীপুরের বাঐখোলা, খুদবান্দি এবং এনায়েতপুরের ব্রক্ষনগাতী, হাটপাচিল এলাকায় ভাঙন রয়েছে। এখানে ভাঙন রোধে প্রকল্প তৈরি করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। এগুলো অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।’
চলনবিলে বন্যা পরিস্থি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে শাহজাহান : একটানা লাগাতার ভারিবর্ষনে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ চাটমোহর,সিংড়া ভাঙ্গুড়া আত্রাই,সিরাজগঞ্জ,নাটোর,পাবনা জেলার নিম্মাঞ্চল তলিয়ে গেছে।সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হামকুড়িয়া গ্রামের বিধবা সবুরা ও মজিরউদ্দিনের ঝুপড়ি ঘরটি পানিতে তলিয়ে গেছে। তুলিয়ে যাওয়া ঘরটির ছবি উঠাতে গিয়ে মানবতার করুন চিত্র ফুটে উঠে। তাড়াশের ৮ ইউনিয়নের মধ্যে সগুনা,মাগুড়াবিনোদ ও নওগা ইউনিয়নের পাচ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। যমুনাসহ সবগুলো নদীর পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারি বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে হাজার , হাজার পরিবার। ভোর রাত থেকে পাড়ের অধিকাংশ বাড়ী ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

সুনামগঞ্জ : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এতে জেলার আটটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার সড়ক, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে জেলার শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে আটটি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার। এই দুই উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তবর্তী হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে এখানে সড়ক ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ উপজেলার পুরোটাই বন্যাকবলিত। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যেগুলোতে পানি ওঠেনি, সেগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু স্কুলে বন্যাকবলিত লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এই মুহূর্তে মানুষের শুকনো খাবার প্রয়োজন। তাঁরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।

গাইবান্ধা: অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে গাইবান্ধার প্রায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৮ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি ১৭ সেন্টিমিটার এবং করতোয়া নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনও শুরু হয়েছে। এভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ১৬ জুলাই এর পর থেকে মাঝারি ধরনের বন্যা হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে, বন্যা আশংকার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ নিজনিজ বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া চলমান বাঁধ মেরামতের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সহ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

বান্দরবান : টানা সাত দিনের অবিরাম বৃষ্টির কারণে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের কয়েকটি স্থানে সড়ক ধসে ও পানিতে তলিয়ে গিয়ে গিয়ে জেলার সাথে চতুর্থ দিনের মতো সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় দশ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শহরের আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, অফিসার্স ক্লাব, বনানী সমিল এলাকা, শেরেবাংলা নগর, সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হলেও শুক্রবার সকাল থেকে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নত হয়েছে। এছাড়াও জেলার লামা, আলীকদম ও থানচি, রুমা উপজেলায় নিম্মাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় ছোট ছোট পাহাড় ধস ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলার সাথে জেলার ৫টি উপজেলার আন্ত সংযোগ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বান্দরবান বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঝুন্টু দাশ বলেন, প্রধান সড়ক থেকে পানি নেমে গেলে ফের বান্দরবানের সাথে অন্য জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে।

কুড়িগ্রাম : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির পানিতে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২ সেমি ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে নদ-নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মাছের ঘের, শাক সবজিসহ আমন বীজতলা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়া, গারুহারা, ভগবতিপুর, কালির আলগা; উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চরবাগার কুটি, চর গুজিমারী, বাবুর চর, গাবুরজানসহ চরাঞ্চলের ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদিপাড়া গ্রামের এরশাদুল হক জানান, গত রাত থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হু হু করে বাড়ছে। তীরবর্তী ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের বন্যার আশংকা রয়েছে।

জামালপুর : জেলার বকশীগঞ্জে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের বাক্কার মোড় এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার দুপুরের দিকে বাঁধটি ভেঙে এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে উল্লেখ করে এলাকাবাসী জানায়, কামালপুর ইউনিয়নের সাতানীপাড়া, বালুঝুড়ি, কনেকান্দা ও সোমনাথ পাড়াসহ ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২০টি পুকুর ও ২টি মাছের প্রকল্পসহ অসংখ্য বীজতলা ডুবে গেছে। এর ফলে এলাকাবাসীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে অন্যান্য এলাকাও প্লাবিত হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে এলাকাবাসী বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছে। বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে পানি একটু কমতে শুরু করছিল। কিন্তু আবার বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

https://www.dailysangram.com/post/382554