২৪ জুন ২০১৯, সোমবার, ১০:৫২

যোগাযোগ সঙ্কটে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে গোটা সিলেট

পরিবহনে জরুরি ভিত্তিতে ট্রেন সংযুক্তি ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি

সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে যান চলাচল হবে বলে শোনা গেলেও তবে তাতে আস্থা রাখা যাচ্ছে না। এতে করে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে সিলেটের সামগ্রিক আর্থিক খাত। পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় বাজারে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। রাস্তায় পঁচে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সব্জি, মৌসুমী ফলসহ কাঁচামাল। এমতাবস্থায় বিমানে ভরসা রাখতে চাইলেও সম্ভব হচ্ছে না। সন্ধ্যাকালীন ফ্লাইটের ব্যবস্থা নিলেও স্টাফ সঙ্কট দেখিয়ে তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, সঙ্কট মোকাবেলায় একটি বাড়তি ট্রেনের ব্যবস্থা করতে পারতেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় অপূরণীয় ক্ষতির মুখে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, সেতু পারাপারে বিকল্প সুযোগ রাখা হয়নি। প্রতিদিন ৭০০/৮০০ যাত্রীবাহী গাড়ি সিলেট-ঢাকা রোডে যাতায়াত করে। গাড়িগুলোর সাথে জড়িয়ে রয়েছে লাখ মানুষের স্বার্থ। কিন্তু সব কিছুই এখন অন্ধকারে। চাপা ক্ষোভে ফুঁসছে ভোগান্তির শিকার মানুষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে যাত্রী নামিয়ে শুধু খালি বাস সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে দেয়া হবে। তবে মাল বোঝাই ট্রাকগুলোকে বিকল্প সড়ক দিয়েই চলতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে তিতাস নদীতে ফেরি দিয়ে যান পারাপারের উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের এ কর্মকর্তা। তবে প্রয়োজনীয় এপ্রোচ সড়ক ও ঘাট না থাকায় সহসা ফেরি চালু হচ্ছে না। চলছে বেইলি সেতু স্থাপনের পাশাপাশি এপ্রোচ সড়ক ও ঘাট বানানোর কাজ। এতে আরো ৩/৪ দিন সময় লাগবে বলে জানান এ কর্মকর্তা। পুরাতন সেতুর পাশাপাশি নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এটি আগামী ৩ জুলাই যান চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিকল্প হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর-সরাইল ও হবিগঞ্জের লাখাই-হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করার সুযোগ থাকলেও সড়কটি সরু হওয়ায় লেগে রয়েছে দীর্ঘ যানজট। এই যানজট অতিক্রম করে পৌঁছানো যাচ্ছে না গন্তব্যে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেনের টিকেটও মিলছে না। বেড়ে গেছে ট্রেন টিকেটের চাহিদা। রেলস্টেশনে গিয়ে যাত্রীরা পাচ্ছেন না ‘সোনার হরিণে’ পরিণত হওয়া ট্রেনের টিকেট।

গত শুক্রবার রাত ১০টায় সিলেট থেকে রওনা দিয়েছিল শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। শনিবার বিকাল চারটায় ওই বাসটি ভৈরব এলাকার কাছাকাছি পৌঁছে। বিকল্প সড়কটি সরু হওয়ায় যানজটে পড়ে দীর্ঘ ১৮ ঘন্টায় বাসের যাত্রীদের ঢাকা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তাই শনিবার থেকে ঐ রুটে শ্যামলী পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান পরিবহনটির কাউন্টার মাস্টার টিপু দাস।

শ্যামলী পরিবহনের মতো সিলেট থেকে সারা দেশে বাস যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে গ্রীনলাইন পরিবহন, লন্ডন এক্সপ্রেস, ইউনিক সার্ভিস, এনা ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড, হানিফ পরিবহনসহ বেশিরভাগ দুরপাল্লার বাস।
বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে বলা হলেও তা বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী। চারদিন যাবত ভারী যানবাহন চলাচল করায় ইতোমধ্যে এই বিকল্প সড়কে বিভিন্ন জায়গায় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এই সড়কটি আকারে সরু হওয়ায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট থাকে।

https://www.dailyinqilab.com/article/215149