৫ এপ্রিল ২০১৯, শুক্রবার, ৭:২২

পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ॥ আহত ৮০ ॥ মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ ॥ জনদুর্ভোগ

বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধে নামে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের শ্রমিকরা। তাদের অবরোধের ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ। এসময় শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নরসিংদীতে ট্রেনে হামলা চালিয়েছে শ্রমিকরা। রাজশাহীতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। তবে শ্রমিকদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে নির্বিকার বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাসও আসেনি।

আগের দুই দিনের মতো বৃহস্পতিবার ধর্মঘটে নামে পাটকল শ্রমিকরা। এসময় বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন দেওয়াসহ সমাবেশ করেন তারা। শ্রমিক নেতারা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন। আর দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।

শ্রমিকরা বলছেন, বিজেএমসির আওতাধীন জুট মিলগুলোতে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া আছে। এছাড়াও ২০১৫ সালে ঘোষিত মজুরি কমিশন এখনও চালু করা হয়নি। বিজেএমসি অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা জোনে মোট ২৬টি পাটকল রয়েছে। তবে শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস দিতে পারেনি বিজেএমসি। সংস্থাটির তরফে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্যও আসেনি।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহবায়ক সোহরাব হোসেন জানান, শ্রমিক ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলের শ্রমিক নেতারা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠক থেকে লাগাতার এবং আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সেই আন্দোলনের খবর-

খুলনা অফিস : নয় দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে রাজপথ-রেলপথ অবরোধের কর্মসূচির শেষ দিন শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে একাধিকবার এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ের পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এতে চারজন পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। বৃহসপতিবার ভোর ৬টায় মিলের উৎপাদন বন্ধ করে পাটকলের প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক আন্দোলনের শেষ দিনে এ কর্মসূচি পালন করে।

পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধ, মজুরী কমিশন কার্যকর ও প্রতি সপ্তাহর মজুরী প্রতি সপ্তাহে প্রদান সহ ৯দফা দাবীতে গেল ২৯ মার্চ ৪ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় পাটকল শ্রমিক লীগ। এ কর্মসূচির শেষ দিনে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, খালিশপুর, দিঘলিয়া, আলীম, ইস্টার্ন, কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে না যেয়ে স্ব স্ব মিল গেটে সমবেত হয়। সেখানে শ্রমিকরা পৃথক পৃথকভাবে মূল ফটকের সামনে ধর্মঘট শুরু করে। পরে সকাল ৮টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নতুন রাস্তা মোড়, আটরা আলীম গেট ও নওয়াপাড়া রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবস্থান করে। পাওনার দাবিতে শ্রমিকরা মহাসড়ক ও রেললাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের সকল যান ও রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে। শ্রমিকরা দুপুর ১২টাা পর্যন্ত রাজপথ রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রমিকদের রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কিছু উশৃঙ্খল শ্রমিক পাবলা পুলিশ বক্সে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীরা পুলিশ বক্সের দরজা, জানালা ভাংচুর করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত দু’দিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার সকালে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলরত শ্রমিকরা। তারা দৌলতপুরের নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থিত পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এসময় বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাংচুর করে তারা। এ সময় এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) সরদার রকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কেএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘হঠাৎ করেই শ্রমিক-পুলিশ উত্তেজনার পর শ্রমিকরা দৌলতপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে। ফাঁড়িতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আহতদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। হামলার কারণ জানার চেষ্টা চলছে।’

শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি থেকে পুলিশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১০-১৫ শ্রমিক আহত হয়েছে। শ্রমিক আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।’

এদিকে অনেকে বলছেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান খুলনায় আসছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় পাটকল হওয়ায় শ্রমিকরা উদ্দেশ্য করে এ হামলা চালিয়েছে।

শ্রমিকরা নগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রেখেছে। এছাড়া তারা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। শ্রমিকদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করার কারণে নতুন রাস্তা মোড় দিয়ে যানবাহন ও খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে।

শ্রমিকরা জানান, মঙ্গলবার রাতে খুলনা অঞ্চলের সকল পাটকল শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা জানান, পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরি-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্রাচ্যুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল, সব মিলে সেটআপের অনুকুলে শ্রমিক-কর্মচারীদের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীসহ ৯ দফা দাবিতে লাল পতাকা মিছিল, ৭২ ঘণ্টা অবরোধসহ চারদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে পাটকল শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, দিঘলিয়ার স্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইস্টার্ন ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই, কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট বৃহস্পতিবার শেষ হয়। এরপর ৭ এপ্রিল ঢাকায় বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সবগুলো পাটকলের শ্রমিক নেতারা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

এ অবরোধের ফলে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়কে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হয়। রেল চলাচলও ভোর থেকে বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করছেন। শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার খালিশপুর ও আটরা শিল্পাঞ্চল এবং যশোরের নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে উঠেছে। সড়ক অবরোধ থাকায় মহাসড়কের যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান জানান, ‘সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ-গ্রাচ্যুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মওসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ নয় দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজপথের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে পাটকল শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বৃহস্পতিবারও ভোর ৬টা থেকে খুলনা রেল স্টেশন থেকে কোনও ট্রেন ছাড়েনি। ফলে যাত্রীরা স্টশনেই অবস্থান নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। খুলনা স্টেশন ও প্লাটফর্মে সব বয়সী যাত্রীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।

খুলনা স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বুধবারও সকাল ৬টা থেকে ট্রেন ছাড়া সম্ভব হয়নি। সকাল ৬টার কমিউটার, সাড়ে ৬টার কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসে, সোয়া ৭টার রূপসা এক্সপ্রেস, ৮টা ৪০ এ চিত্রা এক্সপ্রেস ছাড়া সম্ভব হয়নি। ১২টা পর্যন্ত কোনও ট্রেনই ছাড়া সম্ভব হবে না।’

অবরোধ চলাকালে এক সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মসূচি চলাকালে নতুন রাস্তা, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার সমাবেশের আয়োজন করে শ্রমিক নেতারা। খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ের সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন পাটকল শ্রমিকলীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ’র সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দীন। সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা মো. সোহরাব হোসেন, সাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শেখ মোঃ ইব্রাহীম, মো. বেল্লাল মল্লিক, আব্দুল মান্নান, পাটকল শ্রমিকলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান, সেলিম আকন, কাওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম শিকদার, আবু জাফর, এস এম আজম, আবু হানিফ, আব্দুল মজিদ বকুল, মো. সেলিম শিকদার, সরদার আলী আহম্মেদ, মো. সাহিদুল ইসলাম সাহিদ, আইয়ুব আলী, বেলায়েত হোসেন ও আবু হানিফ। আটরা শিল্প এলাকার শ্রমিক সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিঠু। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আলীম সিবিএ’র শ্রমিক নেতা আব্দুল হামিদ সরদার, সভাপতি মো. আলাউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন, আ. সালাম, আ. রশীদ, মুজিবর রহমান, মকবুল হোসেন, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন।

নওয়াপাড়া শিল্প এলকার রাজঘাটের শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান, মো. মজিবর রহমান, জাহিদুল ইসলাম। শ্রমিকদের রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শেষে পাটকল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দীন বলেন, ২৬ টি পাটকলে ৯ থেকে ১০ সপ্তাহ শ্রমিকরা মজুরী না পাওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। সন্তানদের লেখা পড়া বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। অর্থাভাবে অনেক শ্রমিক পরিবার বিনা চিকিৎসায় মুখোমুখি। ৬ এপ্রিল শনিবারের মধ্যে ৯ দফা দাবি বাস্থাবায়ন না হলে, ৭ এপ্রিল আলোচনা সভায় লাগাতার মিল ধর্মঘট ও রাজপথ-রেলপথ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। শ্রমিক নেতাদের ডাকা ৪ দিনের কর্মসূচির শুক্রবার ভোর ৬টায় শ্রমিকদের ৭২ ঘণ্টা মিল ধর্মঘট শেষ হয়েছে।

রাজশাহী অফিস : রাজশাহীতে তৃতীয়দিনের মতো জুটমিল শ্রমিকদের ধর্মঘট পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কাটাখালি পৌরসভার শ্যামপুরে অবস্থিত রাজশাহী জুটমিলের শ্রমিকরা লাঠি ও পতাকা হাতে পুলিশি বেষ্টনির মধ্যে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এরপর বেলা ১২টা পর্যন্ত শ্রমিকরা অবস্থানের পর মিছিল নিয়ে জুটমিলের ভেতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন ও বেতন ভাতা আদায়সহ ৯ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়। এই তিনদিন সকাল আটটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত এই ধর্মঘট পালিত হয়। গত রোববার থেকে রাজশাহী জুটমিলের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন।

নরসিংদী সংবাদদাতা: মুজুরী কমিশন বাস্তবায়ন ও বকেয়া বেতন পরিশোধ সহ ৯ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে ৭২ ঘন্টা অবরোধের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল ও রেল সড়ক অবরোধ, ভাংচুর করে নরসিংদীর পাটকল শ্রমিকরা। শ্রমিকদের এ তান্ডবে ভোগান্তিতে পরেছে কিশোরগঞ্জ, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামগামী রেলের যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় নরসিংদী জেলা পাটকল শ্রমিকলীগ ইউ.ইম.সি শাখার কয়েক হাজার শ্রমিক রেল সড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় শ্রমিকরা নরসিংদী শহরের তরোয়া-বাসাইল এলাকায় রেল লাইনে গাছ ফেলে এবং রেল লাইনের উপর শুয়ে পড়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এ সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ৪ নং ডাউন কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনটি উল্লেখিত স্থানে থেমে যায়। উত্তেজিত শ্রমিকরা লাঠি সোটা এবং রেলের পাথর দিয়ে ট্রেনের উপর আঘাত করে। এতে ট্রেনের জানালা এবং কাচ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। পাথরের আঘাতে প্রায় ৫০-৬০ জন ট্রেনযাত্রী আহত হয়।

সকাল সাড়ে নয়টায় নরসিংদীর ইউ.ইম.সি জুট মিল হতে কয়েক হাজার শ্রমিক শহরের প্রধান প্রাধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং পরে তরোয়া-বাসাইল রেলগেইট এ তান্ডব চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের বকেয়া মুজুরী দিচ্ছে না পাটকল কর্তৃপক্ষ। তাই কোন উপায়া না পেয়ে, ঢাকা-সিলেট রেলপথ অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা। তাদের দাবী আগামী এক সাপ্তাহের মধ্যে বকেয়াসহ বেতন ভাতা পরিশোধ না করা হলে শ্রমিকরা কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিবে।

http://www.dailysangram.com/post/370978