৫ জুন ২০১৬, রবিবার, ৫:৩৮

সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে

বর্তমান সরকার সদ্য সমাপ্ত ৬টি ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শুধু নজিরবিহীন সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রাণহানিই ঘটায়নি বরং নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে। সরকারের এ স্বৈরাচারী আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ০৫ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “৬টি ধাপে সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে এ নির্বাচনে কমপক্ষে ১১৯ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। প্রতিপক্ষের ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করা হয়েছে। নিহত ও আহতদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারী দলের প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের রক্তাক্ত সংঘাতের ফল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অনেক সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ করা হয়নি।

নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাবৃন্দ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাও ছিল আগাগোড়া প্রশ্নবিদ্ধ। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার পরিবর্তে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছাকেই বাস্তবায়ন করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্লজ্জভাবে এ নির্বাচনকে ভাল নির্বাচন হিসেবে দফায় দফায় আখ্যা দিয়েছেন। বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন এবং ব্যক্তিত্বের অধিকারী কোন মানুষ এ ধরনের মিথ্যা এবং বানোয়াট বক্তব্য দিতে পারেন না। কাজেই এ বিষয়টি জাতির নিকট অত্যন্ত পরিষ্কার যে, এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

সরকারী দলের অনেকেই বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে, হামলা করে মারধর করে ও মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে এবং কাউকে কাউকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী রাখা হয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থীদেরকে মাঠেই নামতে দেয়া হয়নি। ফলে বিপুল সংখ্যক সরকার দলীয় প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে, যা অতীতে কোন নির্বাচনেই ঘটেনি।

নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর চরম জুলুম-অত্যাচার চালিয়েছে। ফলে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী এবং তার সমর্থকরা জনগণের নিকট ভোট পর্যন্ত চাইতে পারেনি। জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে ভোট কেন্দ্র দখল, বিরোধী দলের এজেন্টদেরকে জোর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি প্রদান এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করিয়ে নির্বাচনের পরিবেশকে সরকারী দলের অনুকূলে আনা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর পৈশাচিক কায়দায় হামলা চালানো হয়েছে। তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ কয়েকজনকে ইতোমধ্যেই ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সরকার এ হত্যাকা-ের মাধ্যমে জামায়াতকে নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অনেক সম্ভাবনাময় নেতা ও কর্মীদের ক্রস ফায়ার করে হত্যা করেছে এবং অনেককে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও স্বৈরাচারী সরকার নেতাকর্মীদের মাথা নত করাতে পারেনি। নির্যাতন যত বেড়েছে, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ও সমর্থন ততই বেড়েছে।

ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল এবং ব্যালট বাক্স ছিনতাই-এর নির্বাচনে যেখানে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত কোন প্রার্থীরই জয়লাভ করার কথা নয়, সেখানে শুধু মাত্র আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে, জনগণের আস্থা, ভালবাসা এবং জনগণের প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে। ফলে এত সন্ত্রাসের মধ্যেও জামায়াত সমর্থিত ৫৪ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনে ১,০১১ জন মেম্বার ও মহিলাদের সংরক্ষিত আসনে ২৭১ জন মহিলা মেম্বার জয়লাভ করেছে। এর জন্য আমরা মহান আল্লাহ পাকের দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। জামায়াতের এ বিজয় জনগণের বিজয়। গণতন্ত্রের বিজয়। যদি এ নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে স্বাচ্ছন্দের সাথে ভোট দেয়ার সুযোগ পেত, তাহলে সরকারের জন্য নির্বাচনী বার্তা হত খুবই ভয়াবহ। এ বিজয়ের মাধ্যমে জনগণ সরকারের নিকট এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ওপর লোমহর্ষক নির্যাতন জনগণ কোনভাবেই গ্রহণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। জনগণ যখনই সুযোগ পাবে, তখনই ব্যালটের মাধ্যমে এর উপযুক্ত প্রতিশোধ নেবে।

জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার বাংলাদেশের আপামর জনগণের ওপর এতটাই জুলুম-অত্যাচার করেছে যে, আজকে সরকার জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে জনগণের ওপর সরকারের সামান্যতম আস্থা নেই। তাই জনগণের রায়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেয়নি। সরকারের এ জুলুম-অত্যাচার সত্ত্বেও দেশপ্রেমিক জনগণ জামায়াতে ইসলামীর পাশে সাহসিতকার সাথে যেভাবে দাঁড়িয়েছে আমরা তার জন্য প্রিয় দেশবাসীর কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তাই দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আগামীর আন্দোলন-সংগ্রামে দেশবাসীকে পাশে পাওয়ার ব্যাপারে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী।”