১১ জুন ২০১৬, শনিবার, ৫:০৮

সাঁড়াশি অভিযানের নামে জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি এবং গ্রেফতার বাণিজ্যের নিন্দা

জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ধরার উদ্দেশ্যে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের নামে জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি এবং গ্রেফতার বাণিজ্যের নিন্দা জানিয়ে ও এ ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ১১ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ নানা পেশার নারী ও পুরুষ নির্মম গুপ্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার হয়নি।

কোন একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীবর্গ, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ জামায়াত এবং অন্যান্য বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে গিয়ে এ অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ পাচ্ছে।

সাম্প্রতিক প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পরপরই আমরা বিবৃতির মাধ্যমে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছি। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অথচ সরকারের প্রধানতম দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা। প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করে শাস্তি বিধানে সরকারের অনীহা কেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। সাগর-রুনি দম্পত্তি হত্যাকাণ্ড, কুমিল্লায় তনু হত্যা, কয়েক জন বিদেশী নাগরিকসহ ব্লগার হত্যা এবং ধর্মীয় নেতা ও ধর্মীয় সেবকদের হত্যাকাণ্ডে দেশে-বিদেশে তোলপার সৃষ্টি হলেও এখন পর্যন্ত কোন একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। আদৌ এ সব হত্যাকাণ্ডের কোন বিচার হবে কিনা তা নিয়ে নিহতদের পরিবারবর্গ উদ্বিগ্ন।

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় কর্মীর ন্যায় ব্যবহার করছে। বিরোধী দলকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। এমনকি সরকার ইফতার মাহফিলের মত ধর্মীয় এবং সামাজিক কর্মসূচিও বন্ধ করে দিচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিরোধী দল সরকারেরই একটি অংশ। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার জুলুম-অত্যাচার চালিয়ে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে একদলীয় স্বৈরশাসন শাসন কায়েম করতে চায়। গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সরকার বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে।

সরকারের এহেন স্বৈরাচারী আচরণের কারণে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে যাচ্ছে। দেশে কোন বিনিয়োগ নেই। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকৃত বিরোধী দলকে রাজনীতির ময়দানে একেবারেই কোণঠাসা করার ফলে রাজনীতিতে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সরকার একদিকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে আটক করে রেখেছে, অন্যদিকে দুর্বৃত্তদেরকে লালন-পালন করছে। ফলে দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকার যদি আন্তরিকভাবে গুপ্ত হত্যা বন্ধ করতে চায়, তাহলে প্রয়োজন দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে না দেয়া। এ ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে হয়রানি ও গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করেছে, তাতে সমাজের নিরীহ ও সৎ লোকেরা বেশি নিগৃহীত হচ্ছেন। গত ৭ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত এ চারদিনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে বিনা বিচারে সারা দেশে ১০ জন লোককে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ইতিপূর্বেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ শতশত নিরীহ নাগরিকদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ঘরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আইন লঙ্ঘন করে বেপরোয়াভাবে বন্দুক যুদ্ধের নামে নাটক সাজিয়ে তাদেরকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। এ মুহূর্তে এ ধরনের বিনা বিচারে হত্যা ও গুপ্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হোক এটাই জাতির দাবি।

পবিত্র রমজান মাসে মানুষ প্রশান্তির সাথে রোজা পালন করতে চান। কিন্তু পুলিশের এ উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত সাঁড়াশি অভিযানের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই আমি আবারও দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাস দমনে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাচ্ছি। ধর্মপ্রাণ মানুষ যাতে পবিত্র রমজান মাসে প্রশান্তির সাথে রোজা পালন করতে পারেন সেজন্য পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা উচিত। সেই সাথে দেশবাসীকে সরকারের জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”