৯ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৭:২৪

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এই দিনে আটক সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দেয়ার আহবান

মুসলিম জাতিগোষ্ঠী নির্মূলে গাজায় গণহত্যা চলছে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ৯ ডিসেম্বর নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গাজাসহ পুরো ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, মিয়ানমার এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। বর্বর ইসরাইলি বাহিনী মূলত মুসলিম জাতিগোষ্ঠী চিরতরে নির্মূল করার লক্ষ্যে গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। খুনি ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলা থেকে নারী-শিশু-বৃদ্ধ, ছাত্র-শিক্ষক, ইমাম-মুয়াজ্জিন, বুদ্ধিজীবী কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। যুদ্ধের সকল নিয়ম-নীতি ভূলুণ্ঠিত করে মাত্র ২ মাসে মানবতার দুশমন ইসরাইলি বাহিনী ঠান্ডা মাথায় ১৮ হাজারের অধিক বেসামরিক নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সেখানকার ৭০ ভাগ বসতভিটা মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। গাজাবাসীর জন্য চিকিৎসা সামগ্রী, ঔষধ, খাদ্য, পানি কোনো কিছুই ঢুকতে দিচ্ছে না মানবতার দুশমন বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। এর নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে আমরা অনতিবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং ফিলিস্তিনের স্থায়ী সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের সকল মানবতাবাদী রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, দেশে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম শিকার জামায়াত নেতৃবৃন্দকে দীর্ঘ দিন যাবত কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। সরকার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে প্রায় ১৩ বছর যাবত কারাগারে আটক রেখেছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ বিরোধী দলীয় শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। জনাব এটিএম আজহারুল ইসলাম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে বারবার ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে সরকারের এই আচরণ চরম অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থী।

প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, “২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে মোট ২,৫৭৫টি নারী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯৭টি। গত ১৫ বছরে খুন হন ৩০ জন সাংবাদিক এবং হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার ৩ হাজার ৬৪১ জন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ২৯৬ জন সাংবাদিক হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন, খুন, হুমকিসহ নানাভাবে আক্রান্ত ও নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি, জুন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে একজন করে মোট ৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এই দিনে আটক সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দেয়ার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটাধিকারসহ মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।”