১৯ নভেম্বর ২০২৩, রবিবার, ৮:৩৪

জামায়াতের নিবন্ধন মামলায় প্রদত্ত ন্যায়ভ্রষ্ট রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদান করা হয়েছে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন মামলায় প্রদত্ত ন্যায়ভ্রষ্ট রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ১৯ নভেম্বর নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-

“বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সর্ব বৃহৎ ইসলামিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের বিগত ১১টি জাতীয় সংসদের মধ্যে অধিকাংশ সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতের বিপুল সংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হয়ে জনগণের সেবা করছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের অবদান অনস্বীকার্য। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। এই পদ্ধতির উদ্ভাবকও জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে সততা, সচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। চরমপন্থা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জামায়াত সবসময়ই সোচ্চার। গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জামায়াত আপসহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। টিপাইমুখ বাঁধ, ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা ও সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে জামায়াত সবসময়ই আপসহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ।

জামায়াতে ইসলামী ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন লাভ করেছিল। নিবন্ধনের বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্ট রিটের নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করেন, যেখানে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। জামায়াতে ইসলামী ঐ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দুই মাসের মধ্যে আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দেয়ার সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ডিফল্টার হলে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। জামায়াত নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আদালতে সার-সংক্ষেপ জমা দেয়।

এ বছরের ১০ জুন জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ও জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে দুটো পিটিশন দায়ের করা হয়। ঐ পিটিশন শুনানির জন্য আদালত দিন-তারিখ ধার্য করেন। পরবর্তীতে ৬ নভেম্বর আপিল শুনানির বিষয়ে আদালত আদেশ প্রদান করেন।

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশসমূহ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তাকিদ দিয়ে আসছেন। সরকার সকলের মতামত অগ্রাহ্য করে একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করেছে। এই গণবিরোধী তফসিল বাতিল করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দাবিতে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। দেশে চলছে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি। এই পরিস্থিতিতে আদালত জামায়াতের নিবন্ধন মামলার শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর সময় নির্ধারণ করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী হরতাল বা রাজনৈতিক কর্মসূচির দিন সিনিয়র আইনজীবীগণ আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না। জামায়াতের নিবন্ধন মামলার সিনিয়র আইনজীবী নিবন্ধন মামলার শুনানি মূলতবি রাখার জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করেন। সেই সাথে ‘পিটিশন ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল মামলাটি খারিজ করে দেন।

জামায়াতের মত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বক্তব্য না শুনে জামায়াতের আইনজীবীর এ্যাজর্নমেন্ট বা মূলতবি পিটিশনটি খারিজ করে দিয়ে ‘পিটিশন ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল মামলাটি খারিজ করে দেয়ায় জামায়াত ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। আইনজীবীগণ আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা মনে করি জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদান করা হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে মূলত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তি, সুধীমহল ও সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনকে আরো বেগবান করে সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।”