২৭ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৫৭

সরকার সারাদেশে তল্লাশির নামে হয়রানি ও গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

-মাওলানা এটিএম মা’ছুম

জামায়াত ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বানচাল করার হীনউদ্দেশ্যে সরকার সারাদেশে তল্লাশির নামে হয়রানি ও গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় শতাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ২৭ অক্টোবর এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় জামায়াত ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ বানচাল করার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। দেশের বেশ কিছু এলাকায় টহলের নামে পিক আপ ভ্যানে চড়ে বাঁশি বাজিয়ে পুলিশ ত্রাস সৃষ্টি করেছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে হামলা চালানো হচ্ছে। বাড়ি-ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে। অভিযানকালে তারা বাসা-বাড়িতে থাকা লোকজনকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিচ্ছে এবং ভয় দেখাচ্ছে। পুলিশের এই তাণ্ডবতা থেকে নারী-শিশু এবং বৃদ্ধ বাবা-মাও রেহাই পাচ্ছেন না। গ্রেফতার আতঙ্কে মানুষ ছুটাছুটি করছে। মনে হয়, দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরী হয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, গত ২৩ অক্টোবর মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েকশত নেতাকর্মীকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউপির সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আতাউর রহমানকে আসরের সালাত আদায় করে বাসায় ফেরার পথে, সাতক্ষীরা থেকে ২৪ জন, কুমিল্লার নাঙ্গল কোট থেকে ৯ জন, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ও নিকলী থেকে ২ জন, নরসিংদর জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার পাশের একটি মেস থেকে ৩ জন, পাবনা থেকে ১ জন, বাগেরহাটে মুক্তিপ্রাপ্ত ৯ জন নেতাকর্মীকে ডিবি পুলিশ জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করেছে, সিলেট থেকে শিবিরের ২ জনসহ ৩ জন, রংপুর মহানগর থেকে ২ জন, দিনাজপুর থেকে ৪ জন, রাজশাহী পশ্চিম সাংগঠনিক জেলা থেকে ৬ জন, নওগাঁ জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল মুকিমসহ ৩ জন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪ জন, ফরিদপুর সদর উপজেলার আমীর ও মধুখালী উপজেলা থেকে ৩ জন, টাঙ্গাইল সদরের কর্মপরিষদ সদস্য কাউসার, লক্ষ্মীপুরে ১ জন, ঢাকার শেরে বাংলা থানা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি অসুস্থ আবদুস সালাম, পল্লবী থেকে ৪ জন এবং হাতিরঝিল পূর্ব থানা থেকে ১ জনসহ সারা দেশ থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ডা. ফজলুর রহমানকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বাড়ি ফেরার পথে ২৬ অক্টোবর রাত ৯.৩০ টার দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। ২৬ অক্টোবর নরসিংদী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মকবুল হোসেনের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় এবং মনোহরদীর খিদিরপুর ইউনিয়ন সভাপতি ডা. ইকবাল হোসেনের বাড়িতে আওয়ামী লীগের ৪০/৫০জন ক্যাডার দা-ছুরি নিয়ে রাত ১১টা সময়ে আক্রমণ করে এবং পুলিশের সামনে তাঁকে কুপিয়ে আহত করে। এসময় তার হোন্ডাসহ বাড়ির আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হয়।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তারা দেশকে এক ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার জামায়াতসহ বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে গোটা দেশকে আজ এক বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে। আমি স্বৈরাচারী জালিম সরকারের এইসব জুলুম-নির্যাতন, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার-হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক ইসলামী রাজনৈতিক দল। মিটিং-মিছিল করা যে কোনো বৈধ রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার কারো নেই। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা হামলা, মামলা করে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখতে চায়। ভোটাধিকার হরণকারী আওয়ামী সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। আমরা সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

অবিলম্বে জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং সারা দেশ থেকে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। সেই সাথে সরকারের উস্কানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্র বিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”