৩০ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, ১২:৪৯

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াতের বিবৃতি

গত সাড়ে ১৪ বছরে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ৬৪৫ জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ করে গুম করেছে

গুম ও অপহরণকৃত ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবন-যাপন করছেন

৩০ আগস্ট ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের শাসনামলে গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ছাত্র, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ৬৪৫ জনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা অপহরণ করে গুম করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের (এএইচআরসি) হিসাবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১৫৩ ব্যক্তি, যারা গত ১৩ বছরে বিভিন্ন সময়ে গুম হয়েছেন। হংকং ভিত্তিক এই সংস্থার মতে, ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬২৩ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত অবস্থায় ফিরে এসেছেন বা পরবর্তী সময়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৩৮৩ জনকে। তিনজনের বিষয়ে কোনো তথ্যই জানা যায়নি। আমি গুম হওয়া মানুষদের প্রতি গভীর উদ্বেগ এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশে ‘গুম’ বা ‘নিখোঁজ’ ইস্যুতে বিদেশিদেরও আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গুমের শিকার ব্যক্তিদের বাসায় গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। এমনকি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়ে অনেকে হামলার শিকার হয়েছেন। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট বাংলাদেশ সফর করেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিভিন্ন সময় গুমের শিকার হওয়া ৭৬ জনের একটি তালিকা ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারকে হস্তান্তর করেন।

যাদের গুম করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পুত্র সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলীর পুত্র সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান আহমদ বিন কাসেম, হাফেজ জাকির হোসাইন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আল মোকাদ্দাস ও মোহাম্মদ ওলিউল্লাহ এবং বিএনপি’র নেতা জনাব ইলিয়াস আলী ও সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম প্রমুখ।

গুম ও অপহরণকৃত ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন অত্যন্ত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবন-যাপন করছেন। এখনো অনেকের বাসায় গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয়রানি করছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের পিতা-মাতা এবং স্ত্রীসহ আপনজনদের অনেকেই স্বজন হারানোর বেদনায় শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের নিকট ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট বারবার আবেদন-নিবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

সরকার ও তার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়েছে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজন সাংবাদিক সম্মেলন করে আপনজনকে পরিবারের নিকট ফেরত দেয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা ও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

দেশে বর্তমানে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকারসহ সব কিছুই কেড়ে নেয়া হয়েছে । অন্ন-বস্ত্র-চিকিৎসাসহ মানুষের সব ধরনের অধিকার হরণ করেছে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী এই সরকার। এ দুঃশাসন আর চলতে পারে না। বর্তমান এই ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড, গুম, খুন ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”