২৬ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ৯:৫১

সারা দেশে ২৮ অক্টোবরের শহীদদের জন্য দোয়ার আহবান

২৮ অক্টোবরের খুনিদের এখন পর্যন্ত বিচার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসীদের লগি-বৈঠার নির্মম আঘাতে শহীদদের খুনিদের এখন পর্যন্ত বিচার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর জনাব মকবুল আহমাদ আজ ২৬ অক্টোবর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ৪ দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ঐ দিন জনগণকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে, বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের অফিসের সামনে এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল পল্টন ময়দানে নিজ নিজ কর্মসূচি ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট প্রধান এ সমাবেশের কয়েক দিন আগেই ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা নিয়ে তাদের নেতা-কর্মীদের পল্টন ময়দানে হাজির হওয়ার আহ্বান জানায়।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঐ দিন সকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে জনসভার স্টেজ তৈরীর কাজ চলছিল। এখানে অল্প সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিল। হঠাৎ করে ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মীরা সকাল ১০টা থেকেই গোটা পল্টন এলাকায় জামায়াত-ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণের উপর লগি, বৈঠা, লোহার রড ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে থাকে। চরম উত্তেজনার মধ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য শুরু করলে চারিদিক থেকে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা গুলি করতে করতে জামায়াতের সভাবেশের দিকে অগ্রসর হয়। বিশেষ করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বক্তৃতা শুরু করলে সন্ত্রাসীরা ব্যাপকভাবে আক্রমণ চালায়। মাওলানা নিজামী ও সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী জনাব আলী আহমান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে ১৪ দলীয় জোটের সন্ত্রাসীরা আক্রমণের গতি বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী জনাব আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদই ছিল সন্ত্রাসীদের আক্রমণের আসল লক্ষ্য। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীরা মানব ঢাল তৈরি করে তাদেরকে হেফাযত করে। সে সময় পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল। এভাবে ঐ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টনের বিস্তৃত এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জামায়াত-শিবিরের ৬ জন নেতা-কর্মী শহীদ হন এবং আহত হন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশে ১৪ দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে জামায়াতের লোকদের হত্যা ও আহত করে। চারিদিকে হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করার ফলে হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাই ছিল না। ঐ দিন হামলার শিকার হয়ে অনেকে হাত-পা, চোখ হারিয়ে চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশে^র সচেতন মানুষ মিডিয়ার বদৌলতে ঐ হত্যাকা-ের দৃশ্য স্বচক্ষে দেখতে পায়। ঐ হত্যাযজ্ঞ এতই ভয়ঙ্কর ছিল যে, সে দৃশ্য শিশুদের দেখতে নিষেধ করা হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জ্যন্ত মানুষকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার নজীর অতীতে আর নেই।

এ ঘটনা সভ্য দুনিয়ায় এক কলঙ্কজনক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। দেশ, জাতি ও ইসলামের দুশমনরা চেয়েছিল জামায়তের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরকে চিরদিনের জন্য দুর্বল করে দিতে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা জানে না খুন করে কোনো আদর্শবাদী দলকে দাবিয়ে রাখা যায় না। শহীদদের রক্তে ভেজা ঢাকা মহানগরীর প্রাণ কেন্দ্র পল্টন ময়দানই একদিন সব কিছু প্রকাশ করে দিবে ইনশাআল্লাহ।

শহীদদের পিতামাতার চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও তারা তাদের সন্তানদের হারিয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়নি বরং তারা শহীদদের পিতামাতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ২৮ অক্টোবরের শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে একদিন এ দেশে ইসলামের পতাকা পতপত করে উড়বে ইনশাআল্লাহ। দেশবাসী সেই প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছে।

সেই দিনের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে খুনিদের বিচারের দাবিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেই মামলা প্রত্যাহার করে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। কাজেই বর্তমান সরকারের নিকট বিচার চেয়ে কোনো লাভ নেই। আমরা আশা করি এ দেশের শাস্তিকামী জনগণই একদিন আল্লাহর রহমতে ঐ হত্যাকারীদের বিচার করে দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ।

আগামী ২৮ অক্টোবর সারা দেশে শহীদদের ও তাদের পরিবার-পরিজনদের জন্য দোয়া করতে আমি জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”