৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের আলোকে জুলাই জাতীয় সনদের টেকসই আইনিভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে আগামী নভেম্বরে গণভোট আয়োজন, সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) কার্যকর করা ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিতে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিমের নেতৃত্বে মিছিলসহকারে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে জামায়াতে ইসলামীর এক প্রতিনিধি দল স্মারকলিপিটি হস্তান্তর করেন।
স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে রাজধানীর শেরে বাংলানগরস্থ আগারগাও মোড়ে মিছিলপূর্ব এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিমের পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এড. ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি জনাব কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ইয়াছিন আরাফাত। সমাবেশে শেষে একটি মিছিল আগারগাঁও শেরে বাংলানগর ঘুরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সম্মুখে অবস্থান করে। অতপর ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সভাকক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে স্মারকলিপিটি তুলে ধরা হলোঃ-
মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার,
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
জাতির প্রত্যাশার আলোকে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে শক্তিশালী করা এবং জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে- যা জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ প্রেক্ষিতে গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। সংশ্লিষ্ট কমিশনসমূহের সুপারিশের আলোকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাব প্রণয়ন করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনায় মিলিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়।
গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালা জমা দিয়েছেন। দেশবাসী মনে করে- গণভোট ব্যতীত জুলাই জাতীয় সনদ আইনগত টেকসই ভিত্তি পাবে না। গণভোটের বিষয়ে সকলেই একমত হয়েছেন। জনগণের দাবি- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট সম্পন্ন করতে হবে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ করেছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত সময় অনুযায়ী আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ এ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ইতোমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনী অনুমোদন করেছে। আমরা লক্ষ্য করছি সরকার কর্তৃক সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কিছু বিষয় পরিবর্তনের জন্য একটি রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়েছে। আমরা মনে করি এ দাবি কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করার সুযোগ নেই।
আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন, আগামী নভেম্বরে গণভোট অনুষ্ঠান ও ফেব্রুয়ারি ২০২৬ এ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৫-দফা গণদাবিতে আন্দোলন করে আসছে। আমাদের উত্থাপিত দাবিগুলোর প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদসহ সচেতন নাগরিকসমাজ আন্তরিক সমর্থন জানিয়েছে। দেশের সাধরণ জনগণও এসব দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন দিয়ে রাজপথে আন্দোলনে শামিল হয়েছে ।
এমতাবস্থায় দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসব যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত গণদাবি নির্বাচন কমিশন মেনে নিবেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অভিযাত্রায় গতিপথ নির্বারণ করবেন।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও দৃঢ় নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা প্রদান করুন- এই দোয়া করি।
মায়াসসালাম
বিনীত নিবেদক,
মিয়া গোলাম পরওয়ার
সেক্রেটারি জেনারেল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী