৮ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ৬:৫৩

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের ‘রমাদান এবং যাকাতের’ গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

যাকাত ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যেই আর্ত-মানবতার অর্থনৈতিক মুক্তি রয়েছে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “নামাজ রোজার মতই যাকাত আদায় করা একটি ফরজ ইবাদত। একজন মুসলমান হিসেবে নামাজ ও রোজার ফরজ বিধানকে আমরা সঠিকভাবে পালন করলেও যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যাকাত হলো সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধি অর্জন করার সর্বোত্তমপন্থা এবং এটা দরিদ্র ও হতবঞ্চিতদের হক। এই হক তাদের কাছে নির্ধারিত নিয়মে পৌঁছানো জরুরি। পবিত্র কুরআনে যেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজের কথা বলা হয়েছে, সাথে সাথেই যাকাতের কথাও সেখানে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে যাকাত প্রদানের ৮টি খাত রয়েছে। সুতরাং সম্পদশালী ব্যক্তিকে ঈমানদার হতে গেলে অবশ্যই তার সম্পদের যথাযথ হিসাব কিরে নির্ধারিত যাকাত দিতে হবে। যাকাত ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্যেই আর্ত-মানবতার অর্থনৈতিক মুক্তি রয়েছে। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই যাকাতভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।”

৭ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ‘রামাদান এবং যাকাতের’ গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মু. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ও কামাল হোসাইন। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের অন্যতম হচ্ছে রমজানের সিয়াম বা রোযা। রহমত বরকত ও মাগফেরাতের মাস রমযান। তাই এই মহিমান্বিত মাস সবার কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার। রাসূল (সা) বলেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। তাই এমাসে আমাদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বেশী বেশী ইবাদতের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রমজানে দু’টি খুশি রয়েছে একটা হল রোজাদার যখন ইফতার করেন, অপরটি হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে যখন রোজাদারের সাক্ষাৎ হবে। এজন্য সকলের কাছে আমার আহ্বান থাকবে ইফতারির খুশির সময়ে বাড়ির ছোট বড় সকলকে নিয়ে একত্রে ইফতার করবেন। এতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরিবারের উপরে রহমত নাযিল করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর রাসূল (সা) খেঁজুর ও পানি দিয়ে ইফতার শুরু করতেন। খেঁজুর, পানি ও রুটির সে সুন্নাত আমাদেরকে ইফতারিতে বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। বাড়ির মহিলাদেরকে রান্নার কাজে বেশি কষ্ট না দিয়ে ইবাদত বন্দেগীর সুযোগ করে দিতে হবে। মাহে রমযানের এই প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে বছরের অন্যান্য সময়েও আল্লাহর হুকুম ও বিধান পালনে দৃঢ় থাকতে হবে।” তিনি সাহেবে নেসাবগনকে রমজানের শুরুতেই যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত বন্দিগীতে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত প্রাপ্তির জন্য আমাদেরকে এই রমাদানে বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। যিনি যতবেশি প্রচেষ্টা চালাবেন তিনিই তত বেশি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হেদায়েতের জন্য মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আমাদের দিয়েছেন। এই রমাদানেই আল্লাহ কুরআনকে নাযিল করেছেন। সূরা বাকারার নির্দেশনা আলোকে তাকওয়া অর্জন, আল্লাহর নিষেধ থেকে বেঁচে থাকা এবং নির্দেশ সমূহ পালন করার মাধ্যমেই মাহে রমাদানের দিনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।”

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “যাকাত কোন অনুগ্রহ নয়। রাসূল (সা) যাকাতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, তা ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আদায় করে অভাবগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। ধনীদের সম্পদের উপর আল্লাহ বিত্তহীনদের অধিকার দিয়েছেন। আর বিত্তবানদের সে হক আদায় করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সিয়াম ফরজ করেছেন তাকওয়া অর্জনের জন্য আর রমজান মাস হলো তাকওয়া অর্জনের মূল সময়।” তিনি রমজান থেকে শিক্ষা নিয়ে তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে সকলকে আপোষহীনভাবে কাজ করার আহবান জানান।

মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “রমজান মাস হলো কুরআন নাজিলের মাস। ফলে এমাসে আমাদের কুরআনের যথাযথ অনুশীলন ও চর্চা করতে হবে। কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি তার অর্থ জানা ও বুঝার চেষ্টা করতে হবে। কুরআনে যা হালাল বলা হয়েছে তা গ্রহণ এবং যা হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা বর্জন করতে হবে। কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সমাজে কুরআনের বিধানকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সফল ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে এবং সফল বিপ্লব যখন হবে তখন রাষ্ট্রের কাছে এই যাকাত আদায় ও বণ্টনের দায়িত্ব যাবে। তখন যাকাত ব্যবস্থাপনা সরকার-ই সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করবেন। যেহেতু রাষ্ট্রীয় ভাবে আমাদের দেশে এটা কায়েম নেই। সেহেতু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে যাকাত বণ্টনের ৮টি খাত কে বিবেচনা করে এই যাকাত ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠ্যু ভাবে সম্পন্ন করছি। সাহেবে নিসাব যারা আছেন, তাদেরকে আহবান জানায় আমাদের এই যাকাত আদায় কার্যক্রমে যাকাত প্রদান করে এবং সেই সাথে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত নির্ধারিত ৮টি খাতে যথাযথ ভাবে বণ্টণ করার সুযোগ প্রদানে এগিয়ে আসুন।”