৫ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার, ৮:৪৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত

রমজানের পূর্বেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে মহানগরী ও জেলা আমীরগণ অংশগ্রহণ করেন। মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “দেশ আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচার বলতে কিছু নেই। মিথ্যা মামলায় আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে প্রায় ১৫ মাস যাবত এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামকে ১৩ বছর যাবত কারাগারে আটক রেখেছে এই সরকার। সারা দেশে জামায়াতের তিন শতাধিক নেতাকর্মী এখনো কারাগারে বন্দি। আমরা অবিলম্বে সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি।

সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে মাত্র। দেশের জনগণ এই নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সরকার অব্যাহতভাবে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তছনছ করেছে। দুর্নীতি ও লুটপাট করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আমরা অবিলম্বে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ বাতিল করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলনে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়ঃ-

“জামায়াতে ইসলামীর মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মাত্র কয়েক দিন আগে রাজধানী ঢাকার বেইলি রোডে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৪ জন নাগরিক অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। এই বেদনাদায়ক ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে এবং আহতদের দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিহত ও আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন আরও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, এ সরকার ক্ষমতা দখল করার ৫৮ দিন অতিবাহিত হল। এই সময়ের মধ্যে সরকার জনগণের স্বার্থে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং বিভিন্নভাবে গণবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনগণের দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি করেছে। অবৈধভাবে সরকার গঠন করার পরপরই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রাপ্তি নিশ্চিত না করে এবং এ দুটো খাতে চলমান ভয়াবহ দুর্নীতি বন্ধ না করে মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলত দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এবং জনগণকে হয়রানির মুখে ফেলা হয়েছে।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন চাল, ডাল তেল, চিনি, মাছ-গোশত, শাক-সবজি ইত্যাদির দাম অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট ইচ্ছামত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করছে। সরকার মুখে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও কার্যত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সম্মেলন উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, পবিত্র মাহে রমজান অতি নিকটে। রমজানের পূর্বেই যেখানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন ছিল, সেখানে রমজান আসার পূর্বেই দ্রব্যমূল্য ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। সরকার পবিত্র মাহে রমজানের মর্যাদা রক্ষার পরিবর্তে রমজানে ইফতার মাহফিল কমানোর নির্দেশনা দিয়ে রমজানের পবিত্রতা যেমন ক্ষুণ্ম করেছে, তেমনি রোজাদারদের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করেছে।

মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন আরও লক্ষ্য করছে যে, সরকার দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ একের পর এক ধ্বংস করে দিচ্ছে। ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ করে অর্থ শূন্য করা হয়েছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য, উৎপাদন-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। জনগণের কষ্টার্জিত টাকা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করে ও আত্মসাৎ করে নিজেরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অপরদিকে জনগণের নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসের দাম বাড়িয়ে জনগণকে সর্বস্বান্ত করেছে।

মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন অভিমত ব্যক্ত করছে যে, এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। মহানগরী ও জেলা আমীর সম্মেলন অবিলম্বে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ বাতিল করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। সেই সাথে গ্যাস ও বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার এবং রমজানের পূর্বেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”