বর্তমান বাংলাদেশে পুলিশি শাসন চলছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশকে পুলিশি স্টেটে পরিণত করে। ২০০৯ সালে আইন সংশোধন করে পুলিশকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। পুলিশকে প্রমোশন দিয়ে তাদের গ্রেড বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেতন ভাতা বাড়িয়ে দিয়ে পুলিশকে চতুমূর্খী সুযোগ সুবিধা তৈরী করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই কাজের ফলে পুলিশ নিজ দায়িত্বে সরকারের খাস গোলামে পরিণত হয়েছে। গত পাঁচ বছর বিরোধীদলের আন্দোলন সংগ্রামে আওয়ামী লীগ দলীয় বা সাংগঠনিকভাবে মাঠে সক্রিয় থেকে বিরোধীদলের আন্দোলন ঠেকাতে না পারলেও পুলিশকে দিয়ে আন্দোলন দমাতে পেরেছে। আর পুলিশও দলীয় ভূমিকা পালন করতে গিয়ে ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করে যাচ্ছে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের নানা ঘোষণা এবং পদক্ষেপ গ্রহণের পরও আমাদের দেশের পুলিশ যে 'জনগণের বন্ধু' হয়ে উঠতে পারেনি তা সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশি নির্যাতনের চিত্র থেকেই প্রতিফলিত। বিভিন্ন সময় ঘুষ-দুর্নীতি-ধর্ষণের মতো নানা ন্যক্কারজনক ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনীর নেতিবাচক এই প্রবণতা বর্তমানে এতটাই বেড়েছে যে, তা এই বাহিনীর অতীতে সব ধরনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বললেও অত্যুক্তি হয় না। ইয়াসমিন ধর্ষণ-হত্যা থেকে শুরু করে ছোট-খাটো অনেক অপরাধের সঙ্গেই পুলিশের সম্পৃক্ততার প্রমাণও মিলেছে, জড়িতদের সাজাও হয়েছে। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি পুলিশি নির্যাতন। সম্প্রতি রাজধানীতে রাব্বী নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা পুলিশের হাতে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলে পুলিশের বর্তমান কর্মকা- আলোচনায় আসে। এ ঘটনার রেশ কাটতে-না কাটতে এবার পুলিশের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিদর্শক বিকাশচন্দ্র রায়। পুলিশি নির্যাতনের এই ঘটনার নিঃসন্দেহে ভীতিপ্রদ এবং একই সঙ্গে উদ্বেগজনক।
২০০১ সালে 'দুর্নীতির শীর্ষে পুলিশ' শীর্ষক একটি জরিপ প্রতিবেদন দৈনিকের সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসে। এরপর থেকে পুলিশের নির্যাতনে সাধারণ মানুষ যে কতটা অসহায় সেই চিত্র গণমাধ্যমে আসতে শুরু করে। আবার সব ঘটনা যে গণমাধ্যমে আসে তেমনটিও নয়। সারাদেশে সাধারণ মানুষের ওপর পুলিশি নির্যাতনের কথা ছেড়ে দিলেও ঢাকার আমিনবাজারে ছয় ছাত্রকে হত্যা, ঢাবি শিক্ষার্থী কাদেরকে নির্যাতনসহ অনেক ঘটনাই সামনে আসে। গুটিকতক পুলিশের কর্মকা-ে গোটা পুলিশ বিভাগের ওপরই সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হওয়াও অমূলক নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুলিশকে গণ্য করা হয় জনগণের সেবক তথা বন্ধু হিসেবে। আর আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনীর অবস্থান ঠিক এর বিপরীতে। সম্প্রতি ডিএসসিসি কর্মকর্তা নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশকর্তার 'দেশের রাজা পুলিশ' জাতীয় দম্ভোক্তির মধ্যদিয়েও পুলিশের অবস্থান অনুমেয়। জনগণের টাকায় প্রতিপালিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীর পরিস্থিতি ও অবস্থান এমনই হলে, তা ভবিষ্যতের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া সমীচীন।
খোদ পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্রমতে, ২০১৫ সালে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ২২ হাজার অভিযোগ এসেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্ত শেষে শাস্তিও হয়েছে ১০ হাজার পুলিশ সদস্যের। চাকরিচ্যুত হয়েছেন ৭৬ জন। যে কেউ অপরাধ করলে তার আইনানুগ বিচার হবে। পুলিশ সদস্যরাও এর বাইরে নয়। সাধারণ মানুষের অপরাধের সঙ্গে পুলিশের অপরাধকে এক করে দেখার সুযোগ নেই। যাদের দায়িত্ব অপরাধ দমন করা, তারা যখন নিজেরাই অপরাধ করে, তখন সেটি হয় বড়ই দুঃখজনক।
সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এটাকে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। অতীতে আমাদের দেশে এধরনের ঘটনা কদাচিত ঘটলেও গত ১০ থেকে ১৫ বছর থেকে এ ধরনের রিমান্ড ও হেফাজতে নির্যাতনের প্রবণতা বেড়েছে। আমরা লক্ষ্য করছি- কেউ রিমান্ডের জন্য আবেদন জানালেই ম্যাজিষ্ট্রেটগণ প্রায়ই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ফলে রিমান্ডের যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে, এবিউজ হচ্ছে।ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৩ ধারায় রয়েছে, কোনো পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য আইনে বর্ণিত ২৪ ধারা অনুযায়ী কোনো প্রকার প্রলোভন, হুমকি বা প্রতিশ্রুতি দেবেন না বা দেওয়াবেন না।
বিস্তারিত জানতে ও সম্পূর্ণ প্রতিবেদন টি ডাউনলোড করতে পিডিএফ থেকেঃ লিঙ্ক