২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আধিপত্যবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে- মিয়া গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। আজকে মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। জনগণ স্বাধীনতার সুফল আজও ভোগ করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী সহ অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রকাশ্যে স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রাম করতে পারছে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ইনসাফ, সামাজিক সুবিচারের যে ঘোষণা আছে তা আজ চরমভাবে ভূ-লুণ্ঠিত। বার বার প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে দেশে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে। স্বাধীনতাকে আওয়ামী লীগ নিজেদের সম্পত্তি মনে করে অথচ আওয়ামী লীগের মধ্যে কেউ বীরশ্রেষ্ঠ নেই। আওয়ামী লীগের হাতে দেশের স্বাধীনতা নিরাপদ নয়। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এই আগ্রাসী শক্তি ও আধিপত্যবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। ফ্যাসিবাদের পতন ও বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন ও কামাল হোসাইন। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন, সহকারী প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমদ খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “বাংলাদেশে যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের কাছে জনগণ নিরাপদ নয়। মানবতা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ চরম হুমকির মুখে। আওয়ামী সরকার যখনই এদেশের ক্ষমতায় আসে তখনই বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে, ব্যাংক লুট হয়, সকল অন্যায় বেড়ে যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়ে। সীমান্তে হত্যা বেড়ে যায়। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ঘটে। কালচারাল আগ্রাসন পুরো জাতিকে গ্রাস করে নেয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের চেষ্টায় এদেশ ব্রিটিশ কলোনি থেকে মুক্ত হয়েছে। আর আওয়ামীলীগ সরকার এদেশকে আবারো পার্শ্ববর্তী দেশের কলোনি বানিয়েছে। তাই বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য, এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটি স্বাধীনতার সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে পড়েছে।”

মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়েছিল মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। আওয়ামী লীগ আধিপত্যবাদী শক্তি ভারতের হাতে দেশকে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অরক্ষিত। লুটেরার দল বাংলাদেশকে লুটপাট করে খাচ্ছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের কবল থেকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবজ হলো ইসলাম।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগণের অধিকার-ন্যায়বিচার ও মর্যাদা বর্তমান আওয়ামী শাসক শ্রেণির কাছে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়ে আছে। আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে অকার্যকর করে রেখেছে।”

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে প্রহসনের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে পুরো দেশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। তাদের মুখে স্বাধীনতা রক্ষার গল্প মানায় না। এদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা সবচেয়ে বড় দাবিদার বলে নিজেদের প্রকাশ করে তারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত করে চলেছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তান্ডবের মাধ্যমে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিলো। সেই থেকে বাংলাদেশ আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তি পায়নি। জনসমর্থনহীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই সরকারি প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পরপর চার মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে দেশের সমস্ত মৌলিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট তৈরি করে এদেশের মিডিয়া ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” তিনি দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান।”