বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের চেতনাকে শক্তিশালী করে অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার খর্বিত হচ্ছে।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভার্চুয়ালি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুস, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস পড়াতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রুখে দিতে ন্যায় ভিত্তিক অধিকার আদায়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঢাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লিকায়ত আলী খানের কাছে মানপত্রও পাঠ করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলেই অধ্যাপক গোলাম আযমের কথা সামনে আসবে।
তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর এই দেশের মানুষের পক্ষে প্রথম কথাই বলে অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। আজও ২১ নিয়ে এতো আলোচনা হয়, কখনই সঠিক ইতিহাসটা মানুষের সামনে তুলে ধরা হয় না। এটাতো ইতিহাসের অংশ। এই ইতিহাস ছিনতাই করার সুযোগ নেই। অথচ অধ্যাপক গোলাম আযম যে ঢাকসুর জিএস ছিলেন, সেটা ঢাকুসর ভিপি জিএস এর তালিকায় থাকবে না? এগুলো মুছে দিয়ে, তারা আবার একুশের বিশাল ফেরিওয়ালা হয়ে জাতির নেতৃত্বের আসনে প্রচার করে।
তিনি আরও বলেন, পাক শাসকরা আমাদের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। কিন্তু আমরা দ্বিতীয় দফায় স্বাধীনতা লাভের পরও দেশে গণতন্ত্র নেই; নেই কথা বলার অধিকার। দেশকে পরিকল্পিতভাবে মেধাশূন্য করা হচ্ছে। ভাষার মাসের বই মেলায় ইসলামী বইয়ের জন্য স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তৌহিদি জনতা সরকারের এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবে না। সরকার মানুষের বাকস্বাধীনতা আজ রুদ্ধ করে রেখেছে। অতীতের পাকিস্তানি সরকারের চেয়েও অনেক বেশি জোর-জুলুমের মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিনিয়ত নস্যাৎ করার করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের সফলতা হলো আমরা প্রাণের বিনিময়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সমর্থ হয়েছি। ভাষা আন্দোলনই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি রচনা করেছে। ১৯৪৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। তমদ্দুন মজলিস এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
তিনি বলেন, একুশ শিক্ষা দিয়েছিল অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে মাথানত করব না। একুশের শিক্ষায় উজ্জীবিত হতে হবে। যাদের ভাষা আন্দোলনে কোনো অবদানই নেই তারাই আজ বিকৃত ইতিহাস রচনা করতে চায়। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও মত-প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। সকল ক্ষেত্রেই শাসকগোষ্ঠীর অগণতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, নতুন কারিকুলামের নামে বিজাতীয় সভ্যতা সংস্কৃতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ৫২-র ভাষা আন্দোলন শুধু ভাষার জন্য ছিল না বরং এই আন্দোলন স্বাধীকার আন্দোলনের জোরালো ভিত্তি রচনা করেছিল। সে পথ ধরেই আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, দীর্ঘকালের পরিক্রমায় আজও আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ফিরে পাইনি।
নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ভাষা রক্ষায় আমাদের ছাত্রজনতা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে কার্পণ্য করেনি সে ভাষা, সংস্কৃতি আজ আধিপত্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত ও জর্জরিত। ভাষা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ দান। মায়ের মুখের ভাষাকে যারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল তাদের যেভাবে বাংলার দামাল ছেলেরা পরাজিত করে বাংলাভাষার অধিকার আদায় করেছিলেন, তেমনিভাবে আমাদের বিজাতীয় সংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে।
অনুষ্ঠানে ভাষার গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পী জাকির হোসাইন, রহমত উল্লাহ ও ইমাম উদ্দিন।