৫ জানুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার

দেশবাসীকে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন এবং ভোটদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান

প্রহসনের নির্বাচন বর্জন, ভোটদান থেকে বিরত থাকা এবং ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ৫ জানুয়ারি বক্তব্য রাখেন।

দেশবাসীর উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের প্রদত্ত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ-

“প্রিয় দেশবাসী,

আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

জাতির এক কঠিন ক্রান্তিকালে আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। সীমাহীন ত্যাগ-কুরবানি ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ চলাফেরা করার ও নিসংকোচে কথা বলার অধিকার পাবে। কিন্তু বাংলাদেশ ৫৩ বছরের মাথায় একটি গণতন্ত্রহীন ও স্বৈরাচার শাসিত দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের মতামতকে অগ্রাহ্য করে জোর করে ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

আপনারা জানেন আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বয়কট করেছে। প্রহসনের নির্বাচনের প্রতি জনগণের কোনো আগ্রহ নেই। জনগণ এই নির্বাচন বর্জনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

প্রিয় দেশবাসী,
আপনারা জানেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্বাচন হয়নি। ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি।

২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। কিন্তু এখানেও সরকার তার কথা রাখেনি। ২০১৮ সালে আগের রাতেই ভোটের কার্যক্রম শেষ হয়। এটি সারা দুনিয়ায় মধ্য রাতের নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

আমরা লক্ষ্য করছি বিগত ১৫ বছরে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতাসীন মহল বাংলাদেশকে একটি লুটতরাজের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ থেকে ১১ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এবারের প্রহসনের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের হলফনামায় দেখা যায়, বিগত ১৫ বছরে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে দুইশত/তিনশত গুণ। পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের ৯৩ শতাংশ প্রার্থী হচ্ছেন কোটিপতি। ২৬৫ প্রার্থীর গড় আয় দুই কোটি চৌদ্দ লাখ টাকা। গড় সম্পদ মূল্য সাড়ে ২৮ কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে জনগণের যে সম্পদ তারা লুণ্ঠন করেছে, তার সম্পদ মূল্য হচ্ছে ১৩ হাজার ৬ শত বিশ কোটি টাকা।

প্রিয় দেশবাসী,
৭ জানুয়ারিতে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। বস্তুত নির্বাচনের প্রহসনের নামে তফসিল ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা পুনর্দখলের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এই নির্বাচনের সাথে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করছি, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশের জনগণের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে একতরফাভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারত সর্বোচ্চ সমর্থন দেয়। নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা সফর করেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য দূতিয়ালি করেন। ফলে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে।

প্রিয় দেশবাসী,
বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশসমূহ তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এবারো ভারত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।

আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে দেশকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশ আজ ঋণের উপর ভাসছে। সরকার জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করছে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ৭ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তসরুপ করে দেশকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশের সংকট মোকাবেলা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলকে অত্যন্ত কৌশলে নির্বাচনের মাঠ থেকে তাড়িয়েছে। গত দুই মাসে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্ধ শতাধিক মামলায় দেড় সহস্রাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে দণ্ড দেয়া হয়েছে। সরকার ডামি প্রার্থী দাঁড় করালেও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কারণে প্রহসনের সাজানো নির্বাচনের পূর্বে ঘোষণা দিয়ে ডামি প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। গুপ্ত হত্যা, গুম-খুন ও অপহরণ করে দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। জনগণকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

যে নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নেই, সেটা কোনো নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। জনসমর্থনহীন সরকার চলমান বিশ্ব রাজনীতিতে কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারবে না। ফলে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দেশে পরিণত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। দেশকে অনিবার্য সংকট ও বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান হচ্ছে প্রহসনের এই নির্বাচন বন্ধ করুন। জনগণের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করুন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।

দেশবাসীর প্রতি আমাদের আহ্বান হচ্ছেঃ-


ক) সরকারের তামাশার নির্বাচন বর্জন করুন।
খ) ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত থাকুন।
গ) জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ঘোষিত ৬ এবং ৭ জানুয়ারির সর্বাত্মক হরতাল সফল করে তুলুন।
ঘ) দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন।

জনগণের আন্দোলন অতীতেও বৃথা যায়নি, এবারো যাবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।”