বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক সভা ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশবাসীর প্রতি প্রহসন ও ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়:-
“জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ২০০৮ সালে সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে এবং জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। তারা গত ১৫ বছর যাবত জুলুম-নির্যাতন, দুঃশাসন ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সরকার রাজনৈতিক মামলায় বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে সাজা দিচ্ছে। গত ১৯ ডিসেম্বর নাটোর জেলা জামায়াতের ১৩ জন নেতাকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর বিরোধীদলের ১৩৫ জন নেতাকর্মীকে সাজা প্রদান করা হয়েছে। সরকারের অন্যায় গ্রেফতারের কারণে নেতাকর্মীগণ স্বাধীনভাবে চলাফেরা, বাড়িতে অবস্থান, এমনকি জানাযা ও মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারছেন না। দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, লেখক, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি পেশ করে আসছেন। বাংলাদেশের বন্ধু দেশসমূহ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য তাদের অভিমত প্রকাশ করেছে। সরকার সকল মহলের দাবি ও মতকে অগ্রাহ্য করে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করিয়েছে এবং জোরপূর্বক প্রহসনের নির্বাচনের চূড়ান্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে আরও লক্ষ্য করছে যে, সরকার ষড়যন্ত্র করে বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে থাকতে বাধ্য করেছে। নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ রুদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করেছে যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে যাবে না। তাই তারা নিজেদের মধ্যে সিট ভাগাভাগি করে নির্বাচনের নামে প্রহসন করে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি গণতন্ত্র ও নির্বাচনহীন রাষ্ট্রে পরিচিত করার ব্যবস্থা করেছে। রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করে স্বৈরাচারী সরকার দেশে-বিদেশে ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অভিমত ব্যক্ত করছে যে, সরকার স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী প্রদান করে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার এক আজব থিউরি আবিষ্কার করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস, ভোটাধিকার হরণ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দাফন করার মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে বাকশালী রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকারের জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা না করে প্রহসনের নির্বাচনের যে আয়োজন করেছে, জনগণ তা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিবে না।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংসদ ভেঙে দিয়ে এবং পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। পাশাপাশি সংগ্রামী দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছে, প্রহসনের ও ভাগাভাগির নির্বাচনের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। স্বার্থান্ধ আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের অবৈধ চাপ, হুমকি, ভয়-ভীতি অগ্রাহ্য করে নিজে ভোটদান থেকে বিরত থাকুন ও অপরকে বিরত রাখুন। ভোটের যে কোনো কাজে সরকারকে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকুন। জালেম, স্বৈরাচারী, ভোটাধিকার হরণকারী ও গণতন্ত্র ধ্বংসকারী তাঁবেদার সরকারের সাথে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করুন। প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করুন।”