বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, স্বাধীনতার মূল যে চেতনা ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তারা স্বাধীনতার চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে দেশের শিক্ষা, নৈতিকতা, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, নির্বাচন ব্যবস্থা, বাক-স্বাধীনতা, সুশাসন সব ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় দিবস উদযাপন হচ্ছে, বিজয়ের এই দিনে আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে মানুষের মুখে হাসি নেই, বিজয়ের উৎসবে প্রাণ নেই। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন নিপীড়নে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা আজ ঘর ছাড়া। দেশের জনগণের ৮০% ভোটের প্রতিনিধিত্ব করে যেসকল দল তাদেরকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাহিরে রেখে একতরফা নির্বাচন করা জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রহসনের শামিল। দেশের সত্যিকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটা দিবালোকের মতো পরিস্কার যে, ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালে রাতের ভোটে যারা নির্বাচিত হয়েছে, তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখতে আর কোনো সময়েই সুষ্ঠু নির্বাচন দিবে না। সুতরাং আগামী ৭ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন প্রতিহত করা পুরো দেশবাসীর নৈতিক দায়িত্ব। এজন্য দেশপ্রেমিক শক্তিকে সম্মিলিতভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে। এদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি সমস্ত ল’ইনফোর্স সংস্থাগুলোর কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা এদেশেরই সন্তান, এদেশকে আপনারাও ভালোবাসেন। সুতরাং দেশের স্বার্থ বিরোধী এই নির্বাচনী অপতৎপরতা থেকে নিজেদের বিরত রেখে জনগণের অধিকার সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করুন।
আজ শুক্রবার মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহা. দেলাওয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ ও মাওলানা আব্দুল হালিম। আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দসহ মহানগরীর বিভিন্ন থানা আমীর ও সেক্রেটারি।
বিজয়ের মাসে সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, মানুষ দু’টি কারণে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতে পারে। একটি তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে আর অন্যটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অর্জন ও রক্ষায়। এদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অকাতরে জীবন দিয়েছে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন ভূ-খন্ড লাভ করেছি, একটি পতাকা পেয়েছি। কিন্তু জাতির জন্য দূর্ভাগ্য এই যে, আমরা যখন বিজয় দিবস উদযাপন করছি তখনই বাংলাদেশের মানুষ তার বাক-স্বাধীনতার জন্য, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করছে। পাকিস্তান আমলে দেশের জনগণ যেসকল অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল আজ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলেও জনগণ সেই একই সব অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজ আওয়ামী সরকারই নব্য হানাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কারণ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে কাজ করেছিল বর্তমান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে তাই করছে। এদেশের মানুষের স্বাধীনতাকে হরণ করে তারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আদালতকে অপব্যবহার করে ফরমায়েশি রায় দিয়ে, বিরোধী মতের উপর জুলুম-নির্যাতন করে এই স্বৈরাচারী সরকার যদি মনে করে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মত গণতন্ত্র ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের শাসন চালিয়ে যাবে তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। জনগণ এটা কোনো ভাবেই বাস্তবায়ন করতে দিবে না, আওয়ামী লীগ সরকার আর চাইলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তিনি সবাইকে জনগণের অধিকার আদায়ে এই সরকার পতনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, বাংলাদেশে যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের কাছে জনগণ নিরাপদ নয়। মানবতা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ চরম হুমকির মুখে। আওয়ামী সরকার যখনই এ দেশের ক্ষমতায় আসে তখনই বাংলাদেশ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে, চুরি হয়-ব্যাংক লুটসহ সকল অন্যায় বেড়ে যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়ে, সীমান্তে হত্যা বেড়ে যায়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় ঘটে। কালচারাল আগ্রাসন পুরো জাতিকে গ্রাস করে নেয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের চেষ্টায় এদেশ ব্রিটিশ কলোনি থেকে মুক্ত হয়েছে আর আওয়ামীলীগ সরকার এদেশকে আবারো আরেকটি দেশের কলোনি বানিয়েছে। তাই বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য, এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটি স্বাধীনতার সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে পড়েছে।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আজকে বাংলাদেশের চিত্র ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ধনী আরও বিত্তশালী হচ্ছে আর গরিব আরও অসহায় হয়ে পড়ছে। আওয়ামী লীগের কারো কারো সম্পদ সত্তর, আশি, একশত গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে অপরদিকে দেশের সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে হিমসিম খাচ্ছে। এরফলে সহজেই অনুমেয় স্বাধীনতার সুফল আজও এদেশের জনগণের কাছে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের মানুষের কল্যাণে অব্যাহতভাবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিজয় দিবস আসলেই একটি মহল আমাদেরকে ভিন্ন তকমা দিয়ে কালিমা লেপন করতে তৎপর হয়ে উঠে। অথচ তারা দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থকে বিকিয়ে দিয়ে অন্যের তাঁবেদারিতে ব্যস্ত রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজকে স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও রাজনৈতিক শোষণ থেকে, অর্থনৈতিক শোষণ থেকে আমরা মুক্তি পাইনি। নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। তারা ব্যাংকের টাকা লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, বিদেশে বেগম পাড়া তৈরি করেছে। আজ আওয়ামী লীগ দেশকে ঋণ নির্ভর দেশে পরিণত করেছে। লুটপাটের মাধ্যামে দেশের রিজার্ভ খালি করে দিয়েছে এই সরকার। আওয়ামী সরকার পাশ্ববর্তী দেশের সহযোগীতায় ফ্যাসিস্ট ও বাকশালী কায়দায় দেশে দুঃশাসন চালাচ্ছে। আজ দেশে মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, ভোটের অধিকার ও ন্যায়-বিচারও নেই। সভা সমাবেশে মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। এদেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার ডামি প্রার্থী দিয়ে, পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির সাথে তামাশা করছে। নির্বাচনের নামে তামাশা বন্ধ করতে হবে। জনগণ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।