জামায়াতসহ বিরোধীদলের চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে বাধাদান, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ৩ দিনের চলমান অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন ও সাফল্যমণ্ডিত করায় মুক্তিকামী দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ১ নভেম্বর এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, জামায়াতসহ বিরোধীদলের ডাকে সাড়া দিয়ে ৩ দিনের চলমান অবরোধ কর্মসূচিকে সমর্থন ও সাফল্যমণ্ডিত করায় আমি মুক্তিকামী দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মী এবং ওলামা-মাশায়েখের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর সরকার বিরোধী আন্দোলন চলমান রয়েছে। জামায়াতসহ বিরোধীদলের ডাকে ৩ দিনের চলমান অবরোধ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। সরকারদলীয় লোকেরা বিভিন্ন স্থানে গাড়ী ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তার দায়ভার বিরোধী দলের ওপর চাপাচ্ছে। সরকার পুলিশের মাধ্যমে বল প্রয়োগের অশুভ নীতি গ্রহণ করেছে, যা দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর, সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরী সকল মামলায় জামিনপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু মামলাবাজ জালেম সরকার ১ নভেম্বর আরেকটি পুরোনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাঁর মুক্তির পথ রুদ্ধ করল। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
৩১ অক্টোবর রাতে পাবনা জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের বাসায় ডিবি পুলিশ হানা দেয়। তারা আবু তালেব মন্ডলকে না পেয়ে বাসার লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিয়ে নাজেহাল করে এবং তার ছোট ছেলে তামীম আল জুহানী (২৩) কে ধরে নিয়ে ঈশ্বরদী থানায় হস্তান্তর করে। ৩০ অক্টোবর সোমবার রাত ১০টার দিকে আওয়ামীলীগের হেলমেট বাহিনীর সন্ত্রাসীরা নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর মোশাররফ হোসেনকে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে যায়। ১ নভেম্বর অবরোধ কর্মসূচি থেকে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমানসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১১৮ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জামায়াতসহ বিরোধীদলের শীর্ষ নেতা এবং অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে জেলে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। দেশব্যাপী নৈরাজ্যজনক ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আমি সরকারের এইসব জুলুম-নির্যাতন ও গ্রেফতার-হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকার গোটা দেশটাকেই আজ একটি বৃহৎ জেলখানায় পরিণত করেছে। এভাবে গুলি চালিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা ও আহত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং চলমান অবরোধ কর্মসূচি ব্যাহত করা যাবে না, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সরকার পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করে এবং গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের পছন্দমত সাজিয়ে আবারও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু গণতন্ত্রপ্রিয় ও মুক্তিকামী মানুষ জামায়াতসহ বিরোধীদলের চলমান অবরোধের কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে বর্তমান ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জালিম সরকারের আর একদিনও ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথ সুগম করার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
অবিলম্বে জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে মাওলানা আজিজুর রহমানসহ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে অবরোধের চলমান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে অব্যাহত রাখার জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর সর্বস্তরের জনশক্তি এবং দলমত-নির্বিশেষে সংগ্রামী দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”