বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেছেন, সাংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপরে দমন নিপীড়ন বন্ধ করে, অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। দেশের সব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করতে হবে। একটি জাতিকে গড়ে তুলতে হলে রাষ্ট্রের কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ অর্গান আছে। এইগুলো সুস্থ থাকলে দেশ ও জাতি ভালো থাকে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্গান হলো আইনসভা। কিন্তু আইনসভা তার যথার্থ ভূমিকা রাখতে পারছে না। স্বাধীন দেশের জাতীয় সংসদের ভূমিকা ম্লান হয়ে গেছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্গাণ হলো শাসন বিভাগ। শাসন বিভাগ জনগণের স্বার্থ রক্ষা না করে, জনগণের স্বার্থ ধ্বংস করার কাজে ব্যস্ত। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের পক্ষে কাজ না করে উল্টো জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মু. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, সাবেক সংসদ সদস্য এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী কামাল হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, ঘুষ দুর্নীতি, লুটপাট আজ প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। এই দিয়ে কোনো জাতি মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে না। বিচার ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মামলা দিয়ে হয়রানি ও দমন করার চেস্টা চালাচ্ছে। স্বৈরাচার সরকার আজ দেশকে বিরোধীদল শূণ্য করে আজ একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। তারা জামায়াতের নেতাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে জেলে আটক করে রেখেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও জামিন পাওয়া ব্যক্তিকে বার বার জেল গেটে আটক করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারকে চতুর্থবারের মতো অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াতের সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে সংবাদমাধ্যম। অথচ সরকার ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান, দৈনিক আমারদেশ, দৈনিক দিনকাল সহ অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সাগর-রুনি হত্যার পর থেকে শুরু করে জামালপুরের সাংবাদিক নাদিম হত্যা পর্যন্ত একটি সাংবাদিক হত্যারও বিচার হচ্ছে না। জাতি হিসাবে এটা বড় লজ্জার বিষয়। সাগর রুনি হত্যার মামলা চার্জশীট ৯৮ বার পিছালো। কিন্তু বিচার হচ্ছে না অবস্থা দেখে মনে হয় এটা বুঝি কিয়ামত পর্যন্ত চলবে। শুধু সাংবাদিক নয় আজ দেশের মানুষও অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বিচার পাচ্ছে না। নাগরিকের নিরাপত্তা নেই। মানুষ ভয় ভীতির মধ্যে আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। যেসব সাংবাদিকরা আহত ও নিহত হয়েছে তাদের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিচার করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন আওয়ামী বাকশালী সরকার ৪টি সংবাদপত্র রেখে বাকী সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে সাড়ে তিন বছর দেশ শাসন করার পর তারা দেখল জনগন তাদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। জনগণ যখন কোনো দলকে চায় না তখন আর ক্ষমতায় থাকা যায় না। ফলে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুৃয়ারি সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী জারির মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভে বাকশালী সরকার কায়েম করে। একই বছরের ১৬ জুন ৪টি বাদে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। বাকশাল মানে জনগণের ভোটের অধিকার হরণ, বাকশাল মানে জনগণের উপরে নিপীড়ন, সেই নিপীড়ন প্রতিবাদের যে কন্ঠ সেটা স্তব্ধ করে দেয়া। তারপরও যখন দেখছে সরকারের সমালোচনা বন্ধ হচ্ছে না, তখনই সংবাদপত্রের উপরে হস্তক্ষেপ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল। সেই বাকশালী দর্শনেই বর্তমানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনা করছে শেখ হাসিনার সরকার। ইতিহাস বলে জনগণের উপরে নির্যাতন, নিপীড়ন, কন্ঠরোধ করে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারিনি এবং আওয়ামী লীগও পারে নাই। ভবিষ্যতেও পারবে না।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে একটি কালো আইন জাতীয় সংসদে পাশ করে। প্রথম বলা হয়েছিল জনগণের সুরক্ষার জন্য এই করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখাগেল জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করার জন্য এই আইন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যদি একটি নিউজ শেয়ারও করে তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক কালো আইনের কারণে জাতির বিবেক ও কলম সৈনিক সাংবাদিকরা আতঙ্কে থাকেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা নামক কালো আইনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার সংবাদমাধ্যমের উপরে অঘোষিত সেন্সরশীপ চালু করেছে। বর্তমান সরকারকে বলছি আপনারা সংবাদপত্রের উপরে সেন্সরশীপ দিয়েছেন জনগণের মুখে তালা লাগিয়েছেন, একটু অপেক্ষা করেন এই জনগণই আপনাদেরকে সেন্সরশীপ দিবে সেই দিন আর বেশি বাকী নেই। ডিজিটিাল নিরাপত্তা নামক কালো আইন সংশোধন নয় বরং বাতিল করতে হবে। এই আইনের কারণে সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে।
মোবারক হোসাইন বলেন, আজ আওয়ামী লীগ অঘোষিত ভাবে বাকশাল দর্শন কায়েম করে রেখেছে। ভোটের অধিকার হরণ করেছে। আজ মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, সামাজিক নিরাপত্তা নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান, পিস টিভি বাংলা, দৈনিক আমারদেশ, দৈনিক দিনকালসহ প্রায় ২৩৪টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যদিয়ে অনেক সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়েছে এবং জনগণ সত্য সংবাদ পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো। বর্তমান সরকারের সময়ে ৫১ জন্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বগণমাধ্যম সূচকে ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম। ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিন্মগামী।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ১৯৭৫ সালে আওয়ামী সরকার ৪টি সংবাদপত্র রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয় এবং বাকশাল কায়েম করে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ফ্যাসীবাদী সরকার জাতীয় পত্রিকা, টেলিভিশন সহ প্রায় ২৩৪টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে। আজ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই, বাক স্বাধীনতা নাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে পদদলিত করা হয়েছে। এই কালো আইনের কারণে সাংবাদিকরা হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গত কয়েক বছরে ১২ শত মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। ফলে সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ প্রচার করতে হচ্ছে। সাংবাদিকদের উপরে দমন নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। রাজধানীতে জামায়াতের গত ১০ জুনের সমাবেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সমাবেশে হাজার-হাজার জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় জামায়াতকে দেশের মানুষ সমর্থন করে ভালোবাসে। তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণের ১০ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন চলছে এবং এদেশের মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবো ইনশাআল্লাহ।