বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, “বর্তমানে দেশের মানুষের জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর কোনো নিরাপত্তা নেই।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, আলেম-উলামা কারোর জানমাল ও ইজ্জত-আবরুর কোনো নিরাপত্তা নেই। যখন তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসা-বাড়িতে হানা দিয়ে নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করছে এবং সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। শুধু তাই নয়, আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে জেল থেকে বের হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে পুনরায় গ্রেফতার করে মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে বন্দি করে রাখছে, যা আদালত অবমাননার শামিল ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানকে প্রায় ৭ মাস যাবৎ, নায়েবে আমীর প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব এটিএম আজহরুল ইসলামকে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর যাবৎ অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভ করা সত্ত্বেও তাঁকে মুক্তি না দিয়ে জামিন স্থগিত করে রাখা হয়েছে। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার উচ্চ আদালত থেকে ধারাবাহিকভাবে ৪ বার জামিন লাভ করা সত্ত্বেও সরকার তাঁকে মুক্তি দিচ্ছে না। তিনি যতবারই জামিনপ্রাপ্ত হচ্ছেন, সরকার ততবারই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অম্যান্য করে তাঁকে জেলখানায় বন্দি করে রাখছে। একইভাবে নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম ২ বার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ২ বার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরী ১ বার জামিন লাভ করা সত্ত্বেও সরকার তাদেরকে মুক্তি দেয়নি। এই ধরনের ঘটনা সারা দেশে অহরহ ঘটছে।
জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের এখনো প্রায় কয়েকশত নেতা-কর্মী বিনা বিচারে বন্দি রয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন আড়াই মাস যাবৎ ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক ম-ল প্রায় ৮ বছর যাবৎ কারাগারে আটক রয়েছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সরকারের এহেন মানবাধিকার লঙ্ঘন, বারবার মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতৃবৃন্দকে আটক রেখে তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও উচ্চ আদালতকে অবমাননা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আল আযামী ও ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসিম আরমানকে প্রায় ৭ বছর যাবত গুম করে রাখা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৫ জন নেতা-কর্মীকে অপহরণ ও গুম করে রাখা হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১ লক্ষ ৮ হাজার ৭০৯ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে ৯৬ হাজার ৯৩ জনের ওপর, শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ২০৪ জনকে। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ২৩ হাজার ৮৯৩টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমান সরকার এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলেও তাতে সরকারের টনক নড়ছে না।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও বিরোধী মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে চলতি ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২২৩ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১১০টি মামলা করা হয়েছে এবং ৫৪ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সভা-সমাবেশ ও মিছিল করার অধিকার ক্রমান্বয়ে সংকুচিত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ঢাকার বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার তারিখ ৯৮ বার পেছানো হয়েছে। এ অবস্থায় কোনো দেশ চলতে পারে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা মানবাধিকার ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে আসন্ন ঈদুল আজহার পূর্বেই আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ারসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।