৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, একজন নিহত হওয়ার ঘটনা, গণগ্রেফতার ও বিএনপির অফিস অবরুদ্ধ করে রাখার এবং সেখানে কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার নিন্দা জানানো হয়। সেই সাথে তাদের ঘোষিত সমাবেশ সফল করতে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান দেশবাসীর উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। নিম্নে তার বক্তব্য তুলে ধরা হলো:
প্রিয় দেশবাসী,
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আমরা দেশ ও জাতি হিসেবে আজকে ইতিহাসের একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছি। সম্প্রতি কয়েক দিন যাবত আমরা লক্ষ্য করছি বিশেষভাবে ৭ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনে অনেকগুলো সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার পরে আগামী ১০ তারিখ ঢাকায় তারা যে সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন এটা নিয়ে কয়েক দিন ধরে সরকারের পক্ষ থেকে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা তাদের পার্টি অফিসের পাশে এসেছিলেন। তারা ছিলেন শান্তিপূর্ণ অবস্থানে। তাদের পক্ষ থেকে শান্তি বিঘ্ন সৃষ্টিকারী কোনো কাজ কেউ লক্ষ্য করেনি। কিন্তু তাদের এই শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর হঠাৎ লক্ষ্য করলাম প্রশাসন এবং সরকারি দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একযোগে নিরীহ ও প্রতিবাদী মানুষের ওপর তারা হামলা চালায়। বিএনপি যে দাবি নিয়ে মাঠে এসেছে এটি বিএনপির একার দাবি নয়। এটি বাংলাদেশের জনগণের দাবি। মূলত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি। আর সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপই হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে একদফা দাবি হল একটি কেয়ারটেকার সরকারের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। দলীয় সরকারের অধীনে এখন কোনো নির্বাচন হবে না, এটা আজকে গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। এ দাবিকে সামনে রেখেই বিএনপি সারা দেশে কথা বলেছে ও সমাবেশ করেছে।
গতকাল তাদের ওপর যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সেখানে একজন লোক দুঃখজনকভাবে নিহত হয়েছে। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। বিএনপির চার শতাধিক নেতাকর্মীকে তাদের অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিস্ফোরক এবং ককটেলের নাটক সেখানে সাজানো হয়েছে। মীর্জা ফখরুল ইসলাম দলের মহাসচিব হিসেবে তাদের কার্যালয়ে ঢুকতে চেয়েছেন। কিন্তু তাকে অন্যায়ভাবে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আজকে আবার তিনি যেতে চেয়েছেন তাকে যেতে দেয়া হয়নি। ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি হচ্ছে তার সকল গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ। আমরা মনে করি বাংলাদেশের সংবিধানের দেয়া নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকারের বলেই বিএনপির ঢাকায় মহাসমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। এ পর্যন্ত যা হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। অন্যায়ভাবে বল প্রয়োগ বন্ধ করা হোক এবং বিএনপিকে তাদের আহুত বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করতে দেয়া হোক। এটি আজকে জনতার দাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, আমরা এটা প্রত্যাশা করি। কিন্তু সরকার যদি সোজা পথে না গিয়ে জাতির ওপর আরো বল প্রয়োগ করে, তাহলে ইতিহাস বলে জাতি যখন কোনো দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়, সেই দাবি জাতি আদায় করেই ছাড়ে। এ জন্য সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং দেশবাসীকে আমরা আহ্বান জানাব দেশবাসীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আসুন আমরা একত্রিত ও সমবেত হই। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এগিয়ে যাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে দুঃশাসন ও দুর্নীতির কবল থেকে এই দেশকে মুক্ত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করে বিজয় ছিনিয়ে আনার এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সক্ষমতা ও তাওফীক দান করুন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।