আমীরে জামায়াত

2023-09-08

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ইক্বামতে দ্বীনের কাজে আল্লামা সাঈদী আপসহীনভাবে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বিশ্বনন্দিত মুফাসসীরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রাহিঃ) ইক্বামতে দ্বীনের কাজে আপসহীনভাবে আমৃত্যু সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনকে জালেম সরকার দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কুরআনের রাজ কায়েমে নিরলসভাবে দাওয়াতি কাজ করে গেছেন। এটি আমাদের জন্য অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয়।

৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইসলামী পুনর্জাগরণ ও কুরআনের বাণী প্রচারে আল্লামা সাঈদীর (রহঃ) ভূমিকা: উম্মাহর করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীরে জামায়াত বলেন, আল্লামা সাঈদীকে ভালোবাসতে হলে কুরআনের পাঠক হতে হবে, কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে হবে, কুরআনের শাসন কায়েমে তাঁর মতো নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আজীবন কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠার জন্যে আন্দোলন করে গেছেন। তিনি জাতীয় সংসদে মদ-জুয়া বন্ধে বিল উত্থাপন করেছিলেন, সংসদে মাথা নত করে প্রবেশ করতে হতো সেটাও আল্লামা সাঈদী বিল উত্থাপন করার মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পাস করিয়ে নেন। আমরা সংসদ সদস্যরা সেদিন থেকে একটি বড় ধরনের শিরক থেকে বেঁচে গিয়েছি এটা আল্লামা সাঈদীরই অবদান।

তিনি আরও বলেন, দ্বীনের জন্য আল্লামা সাঈদী জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ভালোবাসতেন। তার মধ্যে শাহাদাতের তামান্না ছিল প্রবল। আমাদের মধ্যে ও শহীদি তামান্না থাকতে হবে। বাংলাদেশে কুরআনের রাজ কায়েম করার জন্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো জান-মাল বিনিয়োগ করতে হবে। তিনি আল্লামা সাঈদীর কামনা অনুযায়ী সকল আলেম-উলামা-মাশায়েখকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জালিম সরকারের পতন ত্বরান্বিত করার আহবান জানান।

ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত আরও বলেন, আল্লামা সাঈদী শহীদ হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে চাইতেন। আল্লাহ পাকও তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। তিনি দেশে-বিদেশে কুরআনের বাণী প্রচার করে বেড়াতেন। অনেক অমুসলিম তার তাফসির শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি প্রায় ৫০টিরও অধিক দেশে সফর করেছেন। আল্লামা সাঈদী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। অথচ তার তাফসির শুনে মনে হয় আমাদের মাঝে তিনি এখনো আছেন। তার তাফসিরের ভিডিও-অডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করে লক্ষ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আপনাদের এই প্রচারের কারণে কোনো লোক যদি হেদায়াতের দিশা পায়, আপনিও সওয়াবের অংশীদার হবেন। আল্লামা সাঈদীর একান্ত ইচ্ছা ছিল দ্বীন কায়েম করা। আসুন আমরা তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, শিরক বিদআতের ব্যাপারে আল্লামা সাঈদী জনগণকে সচেতন করতেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। তার মত সাহসী ভূমিকা পালন করে ফ্যাসিবাদী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ভূমিকা পালন করতে হবে। আসুন আমরা আল্লাহর কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। আমরা যদি সাহসের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন কুরআনের রাজ কায়েম হবে, মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। আজ ভোট ও ভাতের অধিকার নেই। বেঁচে থাকার অধিকারও নেই। নিরীহ মানুষকে গুম করা হচ্ছে। যখন-তখন বিরোধীমতের লোকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। অসহায় মানুষ আজ আহাজারি করছে। তিনি আমীরে জামায়াত ডাক্তার শফিকুর রহমানসহ সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানান।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার অধ্যক্ষ মাওলানা সাইয়্যেদ কামাল উদ্দিন জাফরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা লুৎফুর রহমান, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও আল্লামা সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী, পিরোজপুর জেলা জামায়াতের আমীর তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুবকর রফিক আহমেদ, শিক্ষাবিদ ড. আব্দুস সালাম আযাদী ও বাংলাদেশ উলামা-মাশায়েখ পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি অধ্যক্ষ ড. সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আবু নোমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পী অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মানসুর, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মুহাম্মদ কফিল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. এ কে এম ফজলুল হক।

সমাপনি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ড. আ. জ. ম. ওবায়েদুল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন যথাক্রমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নূরুল আমিন, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ খায়রুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুস ও মুর্শেদুল ইসলাম চৌধুরী।

বাংলাদেশ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মাওলানা কামালুদ্দীন জাফরী বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী চট্টগ্রামবাসীকে বেশি মহব্বত করতেন এবং তিনিও চট্টগ্রামকে বেশি ভালবাসতেন। তিনি কুরআনের তাফসীরের মাধ্যমে পুরো বিশ্ববাসীর হৃদয়ের স্পন্দন ছিলেন। তিনি যেভাবে কুরআনের রাজ কায়েম করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন বর্তমান প্রজন্মকেও কুরআনের রাজ কায়েমে এগিয়ে আসতে হবে। দাওয়াতে ইসলামকে কেন্দ্র করেই তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা। তাঁর এ দাওয়াতকে সর্বত্র প্রসারিত করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আল্লামা সাঈদী বিশ্বব্যাপী এক বিশাল ব্যক্তিত্বি। তিনি তার জীবনকে ইসলামী আন্দোলনের জন্য নিবেদিত করে গেছেন। তিনি সুললিত কণ্ঠে কুরআনের তাফসির করতেন বলে মানুষ তার জন্য পাগল ছিলেন। তিনি জাতি গঠনে ঐতিহাসিক অবদান রেখে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সরকার যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অজুহাত তোলে যে অপবাদ দিয়েছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আল্লামা সাঈদী অবিচারের শিকার হয়েছেন। তার সাজাও বিস্ময়কর। তার রায়ের বিচারপতি প্যানেলের একজন সাঈদী সাহেবকে বেকুসুর খালাস করে দিয়েছিল।

মুহাম্মদ শাহজাহান আরও বলেন, মানুষ আল্লামা সাঈদীকে এত ভালবাসে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আল্লামা সাঈদী বলতেন, আল্লাহর কসম মানুষ শুধু সাঈদীকে নয়, আল্লাহর কুরআনকে ভালোবাসে বলেই সাঈদীকে ভালোবাসে। দীর্ঘ ১৩টি বছর তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। তার হাসি দেখে কখনো মনে হতো না তিনি অসুস্থ। এই হাসি দিয়েই তিনি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন।

উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের পরীক্ষা নিয়েছেন। যারা এই পরীক্ষায় টিকে যাবেন, তারাই ঈমানদার। মাওলানা সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা কুরআনের আন্দোলনে অবিচল থাকব, যতই বাধা আসুক না কেন।

অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেন, আল্লামা সাঈদীর জীবনের পুরো সময়টাই কুরআনের জন্য বরাদ্দ ছিল। কারাগারেও তিনি দ্বীনের দাওয়াত সম্প্রসারণে কাজ করে গেছেন। মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অর্ধশতাব্দী ধরে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। তিনি ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্ন দেখতেন এবং সে লক্ষ্যে তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবিচল ছিলেন।

আল্লামা সাঈদীর ছেলে শামীম বিন সাঈদী বলেন, দেশবাসী আমার বাবার প্রতি যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তা আমরা কখনো ভুলতে পারব না।